নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : আজ নিউজিল্যান্ডবাসী একতার প্রতীক। তাদের হৃদয় ভাঙলেও ভেঙে যায়নি ঐক্য। তাইতো নিউজিল্যান্ডবাসীর একটাই কথা, কেউ আমাদের বন্ধনে চিড় ধরাতে পারবে না। আমরা শুধু ভালোবাসবো একে অন্যকে।
আর সেই ভালোবাসবোর বন্ধনকে আরো গভীর করে তুললেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন। ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের পর মুসলমানদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন তিনি। এ জন্য মাথায় ওড়না জড়িয়ে তিনি প্রকাশ্যে আসেন। প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত হয়।
এবারও আরও একটি ঘটনা দৃষ্টি কাড়লো বিশ্ববাসীর। বৃহস্পতিবার ক্রাইস্টচার্চের মেমোরিয়াল পার্ক সমাধিক্ষেত্রে একজন নারী পুলিশকে দেখা যায়। তিনি মাথায় হিজাব জড়িয়ে, বুকের ওপর লাল গোলাপ নিয়ে একটি মসজিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার হাতে ছিল বুশমাস্টার সেমি-অটোমেটিক রাইফেল।
নারী পুলিশের এই ছবিটিকে সংহতি, সম্মান ও নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিশ্ববাসী। তাদের মতে, এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে এটি ‘অত্যন্ত শক্তিশালী’ একটি ছবি।
মাথায় হিজাব, বুকে গোলাপ ও হাতে রাইফেল নিয়ে মসজিদের নিরাপত্তায় নারী পুলিশ
নিউজিল্যান্ডের অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘স্টাফ’ এর ফটো সাংবাদিক আলডেন উইলিয়ামস ছবিটি তুলেছেন। ওই নারী পুলিশ সদস্যের নাম মাইকেল ইভানস। তিনি একজন কন্সেটেবল।
ছবিটি ইতোমধ্যে ব্যাপক ভাইরাল হয়ে গেছে। এ নিয়ে অনেকে কমেন্টও করেছেন। একজন লিখেছেন, ছবিটি নিউজিল্যান্ডের সহিষ্ণুতা, সমবেদনা এবং মানবতার এক বলিষ্ঠ উদাহরণ।
সাংবাদিক আলডেন উইলিয়ামস বলেন, সাংবাদিকতা জীবনে আমি অনেক পুলিশের ছবি তুলেছি। কিন্তু মাথায় হিজাব, হাতে অ্যাসল্ট রাইফেল আর বুকে লাল গোলাপের মতো অসাধারণ সামঞ্জস্যের ছবি আগে কখনো দেখেনি।
এদিকে আজ নিউজিল্যান্ডের রেডিও ও টেলিভিশন শুক্রবারের জুমার নামাজ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবে দুই মিনিট নীরবতাও পালন করা হয়। শুধু তাই নয়, হামলায় নিহত মুসল্লিদের শ্রদ্ধা ও মুসলমানদের প্রতি সংহতি জানাতে নূর মসজিদের সামনে হ্যাগলি পার্কে জড়ো হন নিউজিল্যান্ডের হাজারো মানুষ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন।
মাথায় হিজাব, বুকে গোলাপ ও হাতে রাইফেল নিয়ে মসজিদের নিরাপত্তায় নারী পুলিশ
মুসলমানদের শ্রদ্ধা জানাতে আসেন নিউজিল্যান্ডবাসী। ছবি: ইন্টারনেট
জুমার নামাজের আগে এক বক্তব্যে মসজিদের ইমাম গামাল ফৌদা বলেন, নিউজিল্যান্ডের প্রতিটি মানুষকে ধন্যবাদ। প্রত্যেকের চোখ দিয়ে যে অশ্রু পড়েছে তার জন্য ধন্যবাদ। ধন্যবাদ শোক প্রকাশ করার জন্য। ধন্যবাদ ফুলের জন্য। ধন্যবাদ তোমাদের ভালোবাসার জন্য।
তিনি আরও বলেন, ধন্যবাদ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। ধন্যবাদ আপনার নেতৃত্বের জন্য। আজ এটা বিশ্বের অন্যান্য নেতাদের জন্য শিক্ষা হয়ে থাকল।
গত শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চে এক পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড ঘটে। আল নূর ও লিনউড মসজিদে হামলা চালিয়ে ৫০ জন মুসল্লিকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। আর হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন অস্ট্রেলীয় শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী সন্ত্রাসী ব্রেন্টন টারান্ট।