নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা। স্থলবন্দর থেকে এক দামে পেঁয়াজ কিনে খাতুনগঞ্জে পাঠান তারা। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজের সরবরাহের হার, মজুদ এবং খাতুনগঞ্জের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে তারা আড়তদারদের দাম নির্ধারণ করে দেন। এক ফোনেই হঠাৎ তারা প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন ২০ টাকা পর্যন্ত। এর সঙ্গে খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা যোগ করেন আরও কিছু টাকা। এভাবে কম টাকার পেঁয়াজ হাতবদল হয়ে বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তাদের এমন কারসাজিতে কয়েক দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ঠেকেছে ৫০ টাকা পর্যন্ত। এভাবেই হুটহাট দাম বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছেন কিছু আমদানিকারক।
শুধু ফোনে দাম নির্ধারণ করে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের বাজার অস্থির করার পেছনে আমদানিকারকদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসন। হিলি স্থলবন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে আমদানিকারকদের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন।
খাতুনগঞ্জে প্রধানত হিলি স্থলবন্দর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আসে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ আমদানিতে জড়িত আছেন ১৫ জন। তারা হলেন- মেসার্স রায়হান ট্রেডার্সের মো. শহিদুল ইসলাম, মেসার্স এম আর ট্রেডার্সের মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, মেসার্স সততা বাণিজ্যালয়ের মো. বাবলুর রহমান, মেসার্স সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজের মো. সাইফুল ইসলাম, মেসার্স জগদীশ চন্দ্র রায়ের শ্রীপদ, মেসার্স মারিয়া করপোরেশনের মো. মোবারক হোসেন, মেসার্স টুম্পা ইন্টারন্যাশনালের মো. মামুনুর রশিদ লেবু, মেসার্স গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজের মো. লাবু মল্লিক, মেসার্স সালেহা ট্রেডার্সের মো. সেলিম রেজা, মেসার্স ধ্রুব ফারিহা ট্রেডার্সের মো. নাজমুল আলম চৌধুরী, মেসার্স সাদ ট্রেডার্সের মো. গোলাম মোর্শেদ শাহিন, মেসার্স বাবু এন্টারপ্রাইজের মো. মাহফুজার রহমান বাবু, মেসার্স লাবীব ট্রেডার্সের মো. নুর আলম বাবু, মেসার্স মনির ট্রেডার্সের মো. তোজাম্মেল হোসেন এবং মেসার্স তুবা এন্টারপ্রাইজের মো. শাহজামাল হোসেন। এসব আমদানিকারকের মধ্যে কারা ফোনে ফোনে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন ও কারসাজিতে জড়িত তা চিহ্নিত করতে মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসন। সকল তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করার কথা সমকালকে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক।
খাতুনগঞ্জে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও বাড়তি লাভের আশায় হঠাৎ আমদানিকারকের এক ফোনেই কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ পেয়েছি আমরা। লেনদেনের কাগজপত্র নিজেদের কাছে না রেখে আমদানিকারকের ফোন কলে দাম নির্ধারণ করে অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছেন খাতুনগঞ্জের কিছু ব্যবসায়ী ও আড়তদার। হিলি স্থলবন্দরের ১৫ আমদানিকারকের মধ্যে কারা খাতুনগঞ্জে কারসাজি করছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এক সপ্তাহ আগেও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। কাঁচাপণ্যের ব্যবসায় জড়িত খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ী বলেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজিতে জড়িত আমদানিকারকদের চিহ্নিত করা গেলে ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের নামও বেরিয়ে আসবে।
গত বছরের শেষের দিকে আমদানি করা প্রতি কেজি ৪২ টাকা দরে কেনা পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জের আড়তে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রির প্রমাণ পায় জেলা প্রশাসন। এতে খাতুনগঞ্জ ও কক্সবাজারের ১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। এবারও দাম বাড়ার পেছনে তাদের কারও সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে জেলা প্রশাসন।