‘রিফাতকে মাইর দিতে বলি, হত্যা করতে নয়’: মিন্নির জবানবন্দি

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের ২০ দিন পর গ্রেফতার হন তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। গ্রেফতারের পরই মিন্নি ‘প্রধান সাক্ষী’ থেকে ৭ নম্বর আসামি হয়ে যান। পাঁচ দিনের রিমান্ডের দু’দিন শেষ হতেই রিফাত হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন তিনি। ১৬৪ ধারায় দেয়া সেই স্বীকারোক্তি সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, স্বামী রিফাতের সঙ্গে দাম্পত্য অশান্তি সৃষ্টি হওয়ায় নয়ন ও তার সঙ্গীদের দিয়ে তাকে কিছুটা ‘মাইর’ খাওয়াতে চেয়েছিলেন মিন্নি। হত্যা করতে বলেননি।

জবানবন্দিতে মিন্নি বলেন, বরগুনা সরকারি কলেজে ডিগ্রি প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করেন তিনি। ২০১৮ সালে বরগুনা আইডিয়াল কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। কলেজে পড়াশোনার সময় ২০১৭ সালে বামনা ডিগ্রি কলেজের ছাত্র রিফাত শরীফের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই সময় রিফাত তার কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিন্নির পরিচয় করে দেন যার মধ্যে নয়ন বন্ড একজন। এক পর্যায়ে নয়নও তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে তিনি সাড়া দেননি। তবে এক পর্যায় রিফাত অন্ন মেয়েদের প্রতি ঝুঁকে পড়লে তিনি ধীরে ধীরে রিফাত শরীফের অজান্তে নয়ন বন্ডের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। মিন্নি জবানবন্দিতে আরো বলেন, আমি আমার মায়ের মোবাইল দিয়ে নয়নের সঙ্গে কল, এসএমএস এবং ফেসবুকে যোগাযোগ করতাম। এক পর্যায়ে নয়ন বন্ডের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত শুরু করি। তার বাসায় আমাদের অনেকবার শারীরিক ঘনিষ্ঠতা হয়। আমার অজান্তে আমাদের এই ঘনিষ্ট সম্পর্কের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখে নয়ন। তার বাসায় যাওয়া-আসার সুবাদে আমি শাওন, রাজু, রিফাত ফরাজী এবং আরও ৭/৮ জনকে দেখি। একদিন শাওন কাজী ডেকে আনে এবং নয়নের বাসায় তার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। তারপর আমি বাসায় চলে যাই। নয়নকে ফোন করে বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখতে বলি। এরপর আমরা গোপনে স্বামী-স্ত্রীর মতো জীবনযাপন করতে থাকি। বিয়ের বিষয়টি আমার পরিবারের কেউ জানে না।’

মিন্নি আরো বলেন, একপর্যায়ে আমি জানতে পারি নয়ন মাদকসেবী। সে ছিনতাই করে এবং তার নামে থানায় অনেক মামলা আছে। এ কারণে তার সঙ্গে আমার সমপর্কের অবনতি হয় এবং রিফাতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার হয়। পরে পারিবারিকভাবে রিফাতের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। তবে রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও নয়নের সঙ্গে ফোন যোগাযোগ এবং ‘স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্ক বজায় রাখি। তবে বিয়ের পর জানতে পারি রিফাত শরীফও মাদকসেবী। সে মাদকসহ পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। এক পর্যায়ে নয়ন বন্ডের বিষয়টি রিফাত জেনে ফেলায় তার সঙ্গে আমার মাঝে মাঝে কথা কাটাকাটি হতো এবং রিফাত আমার গায়ে হাত তুলতো।

মিন্নি আরো বলেন, গত ২৪ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নয়ন আমাকে ফোন দিয়ে বলে, তোর স্বামী হেলালের ফোন ছিনাইয়া নিয়েছে। আমি রিফাতকে হেলালের ফোন ফেরত দিতে বললে সে আমাকে চড় থাপ্পড় এবং তলপেটে লাথি মারে। বিষয়টি রাতে মোবাইলে নয়নকে জানাই এবং কান্নাকাটি করি। পরদিন ২৫ এপ্রিল আমি কলেজে গিয়ে নয়নের বাসায় যাই। রিফাতকে ‘মাইর’ দিয়ে একটা শিক্ষা দিতে হবে- এ কথা নয়নকে বলি। এতে নয়ন বলে, হেলালের ফোন নিয়ে যে ঘটনা তাতে রিফাত ফরাজীই তাকে মারবে। তারপর আমি বাসায় চলে আসি এবং এ বিষয়ে কয়েক বার আমার নয়ন বন্ডের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয় এবং রিফাতকে ‘শিক্ষা’ দেয়ার পরিকল্পনা করি।

Share