দুই মাস পর বেনজীরের সম্পদ অনুসন্ধানের অগ্রগতি জানাতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অগ্রগতি জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ক্ষেত্রে অনুসন্ধানের অগ্রগতির বিষয়ে দুই মাস পর হলফনামা আকারে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে দুদককে বলা হয়েছে।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ভারতের মতো বাংলাদেশেও ‘অ্যাসেট ডিক্লারেশন ল’ এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘ভারতের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা চাকরিতে প্রবেশের সময় একবার এবং অবসরে যাওয়ার সময় আরেকবার সম্পদের হিসাব দাখিল করে থাকেন। প্রবেশ এবং অবসরের সময়কালীন সম্পদের পরিমাণের তারতম্য ১০ ভাগের বেশি হলে ওই কর্মচারীকে আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হয়। এজন্য আমাদের দেশে এ ধরণের আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রয়েছে। কিন্তু এরা নানা কারণে অনেক বিষয়ে অগ্রসর হতে পারে না। যদি দুদক অগ্রসর হতে না পারে, তাহলে দুর্নীতি ও অর্থপাচার কোনটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। তাই রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি এটা করা সম্ভব হয় তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠিত হবে।’

এ পর্যায়ে এই মামলায় উপস্থিত উভয় পক্ষের কৌঁসুলিদের উদ্দেশ্যে বিচারপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একটা ব্যক্তি দুর্নীতি করতে করতে পাহাড়সম সম্পদের মালিক হলো। অথচ তার বিরুদ্ধে কোন অ্যাকশন হলো না। তখন সব অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। আমরা চাই, দেশে অর্থ পাচার বন্ধ হোক। দুর্নীতি নির্মূল হোক। কেউ যেন অন্যায় করে পার না পায়। কারণ আমাদের তো একটা স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করতে হবে। এজন্য ভারতের মতো অ্যাসেট ডিক্লারেশন আইন তৈরিতে সবার সচেষ্ট হওয়া দরকার।’

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম সারোয়ার হোসেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। বেনজীর আহমেদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ও মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের বিপুল সম্পত্তি অর্জনের বিষয়ে সম্প্রতি দুই পর্বে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন (সাবেক আইজিপির অপকর্ম-১ ও ২) প্রকাশ করেছে কালের কণ্ঠ। গত ৩১ মার্চ প্রকাশিত প্রথম পর্বের মূল শিরোনাম ছিল ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’। আর ২ এপ্রিল প্রকাশ করা হয় ‘সাবেক আইজিপির অপকর্ম-২’। এই পর্বের মূল শিরোনাম ছিল, ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’।

প্রতিবেদনে আসা অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য ৪ এপ্রিল দুদকে আবেদন করেন আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দিন। পরে এ বিষয়ে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে ২১ এপ্রিল রিট করেন তিনি।

আজকের শুনানিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন দুটি তুলে ধরেন রিটকারীর আইনজীবী এম সারোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘রিট করার পর পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ইতিমধ্যে দুদক একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। এ ক্ষেত্রে সঠিক অনুসন্ধানের জন্য আদালতের নজরদারি প্রয়োজন।’

বেনজীরের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ও মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ বলেন, রিটে নিষ্ক্রিয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ অনুসন্ধানের জন্য দুদক কমিটি গঠন করেছে। ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তা বলার সুযোগ নেই। রিটটি সরাসরি খারিজযোগ্য।

শুনানিতে দুদকের পক্ষে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি আদালতে বলেন, দুদকের ১৮ এপ্রিলের সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ সময় আদালত বলেন, অগ্রগতি কী? তখন খুরশীদ আলম খান বলেন, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে, স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ অনুসন্ধানে টিম গঠন করা হয়েছে। দুদক আইন ও বিধিমালা; মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও বিধিমালা অনুসারে অভিযোগটির অনুসন্ধানকাজ শেষ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুদকের কোনো নিষ্ক্রিয়তা নেই।

যেকোনো ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’ (শূন্যসহিষ্ণুতা) বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন।

পরে আদালত আদেশ দেন। এ আদেশ অনুসারে বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অগ্রগতি বিষয়ে দুই মাস পর হলফনামা আকারে আদালতে প্রতিবেদন জানাতে হবে।

Share