মাইদুলের টার্গেট অসহায় সুন্দরী নারী

১১ বিয়ে ১১ তালাক!

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের চরখোর্দ্দা গ্রামের মাইদুল ইসলামের (৪৩) নেশা ও পেশা স্বামী পরিত্যক্ত, অসহায় সুন্দরী নারীদের বিয়ে করে তাদের টাকাপয়সা, ধনসম্পদ বাগিয়ে নিয়ে কিছুদিন পর তালাক দেওয়া। এ পর্যন্ত ১১ জন নারীকে বিয়ে করে তাদের কাছ থেকে কৌশলে টাকাপয়সা হাতিয়ে নিয়ে তালাক দিয়েছেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, এই গ্রামের মো. ছলিম উদ্দিন মন্ডলের ছেলে মাইদুল তার তালাক দেয়া স্ত্রীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকা দিয়ে দুর্গম চরাঞ্চলে গড়ে তুলেছেন বাড়ি। কিনেছেন জমি, চারটি মোটরসাইকেল, দুটি ট্রাক্টরসহ অনেক কিছু। সেই সাথে তিস্তার সোলার প্লান্টে জুটিয়ে নিয়েছেন কর্মচারীর চাকরি। তবে এলাকাবাসীর দাবি, মাইদুলের তালাক দেওয়া স্ত্রীর সংখ্যা অন্তত ১৫। তালাক দেওয়া ১১ জন স্ত্রীর মধ্যে দুই স্ত্রীর তিনটি সন্তান রয়েছে। তারা তাদের মায়ের সাথে থাকে।

মাইদুলের তালাক দেয়া স্ত্রী মৌসুমী আক্তারের আদালতে দায়ের করা মামলা এবং অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মাইদুল একই ইউনিয়নের নাচনী ঘগোয়া গ্রামের মৃত মহসীন আলীর স্বামী পরিত্যক্ত মেয়ে মৌসুমী আক্তারকে (২৩) দুই লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। এটি তার ১১তম বিয়ে। মৌসুমী আক্তার অভিযোগ করেন, আগের বিয়ের তথ্য গোপন করে মাইদুল তাকে বিয়ে করেছেন।

বিয়ের ১৫ মাসের মধ্যে তিনি পাঁচ মাসও সংসার করতে পারেননি। তার শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদ ও স্বামীর অত্যাচারে তিনি জীবন সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়েন। বিয়ের পরে এক মাসের মাথায় তার কাছ থেকে ট্রাক্টর কেনার কথা বলে পাঁচ লাখ টাকা নেন মাইদুল। ওই টাকা ছিল তার আগের স্বামীর দেওয়া ভরণ-পোষণের টাকা। দুই মাস ধরে মোবাইলের মেসেজের মাধ্যমে এবং মৌখিকভাবে তিনি আরো দুই লাখ টাকা দাবি করতে থাকেন।

টাকা না দিলে তালাক দেওয়ার হুমকি দেন। সেই অনুযায়ী এক সপ্তাহ আগে তালাকের কাগজও পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালত এবং পরে থানায় অভিযোগ দিলেও কোনো সুরাহা করতে পারেননি তারা। এ ঘটনার পর তিনি জানতে পারেন মাইদুল ১১ জনের বেশি স্ত্রীকে একই কায়দায় টাকাপয়সা হাতিয়ে নিয়ে তালাক দিয়েছেন। তার সংগ্রহে চারজনের কাবিনের কাগজ রয়েছে। পিতৃহারা অসহায় মৌসুমী এখন প্রশাসনসহ সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ।

একই দাবি তালাকপ্রাপ্ত মনোয়ারা বেগম, নুরবানু বেগম, আফলী বেগম, শাপলা বেগম, হাফিজা বেগমসহ অন্যদের। মাইদুলের প্রতারণার শিকার হয়ে ওই সব নারী এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের ক্ষেত্রেও একই কৌশল অবলম্বন করেছেন অভিযুক্ত মাইদুল।

স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, মাইদুল এই কাজটিকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। তার কাজই টাকাপয়সা হাতিয়ে নিয়ে তালাক দেওয়া। এ ক্ষেত্রে তার টার্গেট অসহায় সুন্দরী নারীরা।

তবে মাইদুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই সব নারী তার পরিবারের সদস্যদের সাথে মিলেমিশে চলতে পারেননি। উল্টো সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করছিলেন। তাই তাদের তালাক দেওয়া হয়েছ। তিনি দাবি করেন, ১১ জন নয়, মাত্র চারজনকে তিনি তালাক দিয়েছেন। আর তালাক দেওয়া স্ত্রীদের কাছ থেকে তিনি কোনো টাকা নেননি।

তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম জানান, ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে মাইদুল ১০ জন স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। তিনি প্রভাবশালী, তাই কাউকে তোয়াক্কা করেন না। স্বামী পরিত্যক্ত সুন্দরী নারীদের বিয়ে করে তাদের কাছ থেকে কৌশলে যৌতুক হিসেবে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তাদেরকে তালাক দেন মাইদুল। সর্বশেষ মৌসুমী আক্তারের বিষয় নিয়ে একাধিকবার গ্রাম আদালতের মাধ্যমে নোটিশ করেও তাকে হাজির করা সম্ভব হয়নি।

সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) মিলন চ্যাটার্জী জানান, মৌসুমী লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে আদালতে মামলা করেছেন। আদালতের নির্দেশনা পেলে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

Share