রংপুরে উপপুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগ, থানায় বাদীকে পিটুনি

রংপুর প্রতিনিধি :  রংপুর মহানগর পুলিশের একজন উপকমিশনারের বিরুদ্ধে ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগে থানায় মামলা করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন এক ব্যবসায়ীর প্রতিনিধি। ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কর্তব্যরত কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে ওই ব্যক্তিকে বেধড়ক পিটুনির অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের কোতোয়ালি থানায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একটি অভ্যন্তরীণ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। ঘটনার পর থানা-পুলিশ চাঁদাবাজির অভিযোগে ভুক্তভোগী ব্যক্তির একটি মামলা নিলেও আসামির তালিকায় ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে রাখা হয়নি।

অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শিবলী কায়সার নগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গতকাল সকালে তাঁকে ‘অপরাধ’ থেকে প্রত্যাহার করে ‘ক্রাইম অ্যান্ড অপসে’ সংযুক্ত করা হয়। মামলার বাদীকে মারধর ও ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত ১৩ নভেম্বর রংপুরের হারাগাছের ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলার পর রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক অমিত বণিকের মাধ্যমে লিপি খানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠে পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ১১ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন লিপি খান। অভিযোগের সঙ্গে তিনি অমিত বণিকের সঙ্গে ঘুষ দাবির কথোপকথনের কয়েকটি অডিও জমা দেন। এরপর গতকাল দুপুর ১২টার দিকে অমিত বণিককে থানায় ডেকে নেয় কোতোয়ালি থানা-পুলিশ।

এদিকে গতকাল বিকেল চারটার দিকে লিপি খানের পক্ষে থানায় মামলা করতে যান তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পলাশ হাসান (২৭)। বিকেল পাঁচটার দিকে থানায় যান উপপুলিশ কমিশনার শিবলী কায়সার। তখন থানায় আরেক উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রের ভাষ্য, শিবলী কায়সার থানায় ঢুকেই তাঁর ওপর চড়াও হন এবং তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে কর্তব্যরত কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে তাঁকে (পলাশ) গুলি করতে উদ্যত হন।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পলাশ হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে লিপি খান প্রথম আলোকে বলেন, শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে পলাশকে মারধর করেন তিনি। এখন তিনি অসুস্থ।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তবে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘শিবলী পাঁচটা বা পৌনে পাঁচটার দিকে কোতোয়ালি থানায় গিয়েছিলেন। কে বা কারা তাঁকে তথ্য দিয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজি মামলা হতে যাচ্ছে। এতে তিনি উত্তেজিত হন এবং বাদীর সঙ্গে তাঁর অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বেশি উত্তেজিত হয়ে কর্তব্যরত সেন্ট্রির (কনস্টেবল) রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন উপস্থিত সবাই তাঁকে নিবৃত্ত করেন।’ তিনি বলেন, এ ঘটনায় একটি অভ্যন্তরীণ জিডি করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

থানার ভেতরে মামলার বাদীকে মারধর ও ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে শিবলী কায়সার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, গতকাল সকালে তিনি উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) থেকে প্রত্যাহার হয়েছেন। এর বাইরে কোনো কথা বলবেন না।

জানতে চাইলে মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী বলেন, ‘থানায় যা ঘটেছিল, তা গোপন করা বা লুকানোর কিছু নেই। ওখানে আমাদের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা (হাবিবুর) উপস্থিত ছিলেন। কী হয়েছে না হয়েছে, আমি তাঁকে রিপোর্ট দিতে বলেছি। এটা তদন্তাধীন।’

এদিকে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চাঁদাবাজির অভিযোগে থানায় একটি মামলা হয়। মামলায় শুধু অমিত বণিককে আসামি করা হয়েছে। মামলায় আগে থেকেই থানা হেফাজতে থাকা অমিত বণিককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ শুক্রবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

তবে ব্যবসায়ী লিপি খান অভিযোগ করেন, তাঁর ব্যবস্থাপক পলাশকে গতকাল বিকেলে শিবলী কায়সার, অমিত বণিক ও কামরুল ভরসার বিরুদ্ধে ঘুষ–বাণিজ্যের মামলা করতে থানায় পাঠান। এর পর থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। গতকাল রাত তিনটার দিকে পলাশকে পুলিশ বাসায় পৌঁছে দেয়। আজ জানতে পারেন, শিবলী কায়সারসহ অন্য দুজনকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

আজ আদালতের সামনে অমিত বণিকের শ্বশুর চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, ‘আমার জামাইয়ের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁর (শিবলী কায়সার) নাম তো এল না। ওনাকে বাদ দিল। অরিজিনাল ফ্যাক্ট তো উনি।’

এ বিষয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী বলেন, অডিও রেকর্ডটি একজন আসামির সঙ্গে অন্য আরেকজনের। সেখানে এক পুলিশ কর্মকর্তার নামে টাকা চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Share