নয়াবার্তা প্রতিবেদক : দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে আছে। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য খালাস হয়নি বললেই চলে। নিরাপত্তার শঙ্কায় দুপুরের পর চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ করা কাস্টমস, বন্দর, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোলেও গতকাল আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের চিত্রও একই রকম ছিল বলে জানা গেছে। ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসেও পণ্য খালাস বন্ধ ছিল।
শঙ্কায় চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তারা
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা সকালে অফিস করলেও নিরাপত্তার শঙ্কায় গতকাল বেলা আড়াইটার পর অফিস ত্যাগ করেন। কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা বেরিয়ে যাওয়ার পর আমদানি পণ্যের শুল্কায়নের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কেউ আমদানি চালানের নথি অনলাইনে জমা দিলেও তা প্রক্রিয়াকরণ করা যায়নি।
আমদানিকারকের পক্ষে পণ্য খালাসকারীদের সমিতি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বলেন, বেলা তিনটা থেকে পণ্য চালানের শুল্কায়ন বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বন্দরের ভেতরে যথেষ্ট নিরাপত্তা আছে। কিন্তু বন্দর এলাকার বাইরে নিরাপত্তাহীনতার সমস্যা রয়েছে। ফলে বন্দর থেকে পণ্য খালাস করে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা নেই বললেই চলে।
কাস্টমসের শুল্কায়ন ও শুল্ক–কর পরিশোধের পর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে পারেন ব্যবসায়ীরা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বন্দর থেকে পণ্য খালাসের হারও ছিল কম। গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বন্দর থেকে ৩২৯ একক কনটেইনার পণ্য ছাড় হয়েছে। পণ্য খালাস কমে আসায় বন্দরে কনটেইনারের স্তূপ জমছে। গতকাল সকালে বন্দর চত্বরে ৪৪ হাজারের বেশি কনটেইনার ছাড়ের অপেক্ষায় ছিল।
বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। জেটিতে ১৬টি জাহাজে কাজ হচ্ছে। সাগরে ৫০টি পণ্যবাহী জাহাজ রয়েছে। এক হাজার কনটেইনার খালাস নেওয়ার জন্য গতকাল কাগজপত্র জমা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
বেনাপোল বন্দরে গতকাল কোনো আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম হয়নি। ভারত থেকে কোনো পণ্যবোঝাই ট্রাক আসেনি। আবার বাংলাদেশ থেকে পণ্যের ট্রাক ভারতের বন্দরে যায়নি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়নি।
বেনাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল স্থলবন্দর এলাকার আশপাশের রাস্তায় সকালের দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোককে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। এরপর আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আর শুরু করা হয়নি। পরে দুপুরের দিকে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
বেনাপোল স্থলবন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম বলেন, ‘সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আগামীকাল (বুধবার) থেকে সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ইতিমধ্যে পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষকেও বাংলাদেশে বন্দর চালু রাখার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারাও সেই অনুসারে ট্রাক পাঠাতে রাজি হয়েছে।’
বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দুপুর পর্যন্ত বেনাপোল বন্দরে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছিল। সে সময় পর্যন্ত ভারত থেকে ১১৫টি পণ্যবোঝাই ট্রাক ও ৪৩টি গাড়ির চেসিস এসেছে। আর বাংলাদেশ থেকে ৩৯টি পণ্যবোঝাই ট্রাক ভারতে গেছে।
এদিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসেও গতকাল পণ্য খালাস বন্ধ ছিল। বেলা ১১টার দিকে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি পরিচয়ে একদল তরুণ ঢাকা কাস্টম হাউসের বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। তাঁরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি দিতে থাকেন। এমন অবস্থা চলে দুপুরের পর পর্যন্ত। এ পরিস্থিতিতে গতকাল ঢাকা কাস্টম হাউসে কোনো কাজ হয়নি বলে জানা গেছে।
অন্য স্থলবন্দর স্থবির
সোনামসজিদ, হিলি, ভোমরা, বিবিরবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরেও গতকাল আমদানি–রপ্তানি হয়নি বললেই চলে। ভারত থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে আসেনি। কারণ হিসেবে কর্মকর্তা বলছেন, বন্দর কর্মকর্তাদের মধ্যে নিরাপত্তার শঙ্কা রয়েছে। আবার পণ্য গন্তব্যে পৌঁছানোয় সড়কপথে অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার কথা চিন্তা করে অনেক আমদানিকারক পণ্য খালাস করছেন না।
দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশের কয়েকটি শুল্ক স্টেশনে নিরাপত্তার শঙ্কায় গতকাল দুপুরের পর কর্মকর্তারা বেরিয়ে যান। সকালে কাজে এলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি না থাকায় দুপুরে তাঁরা কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যেতে থাকেন।