আম্পানের ছোবলে উপকূল লণ্ডভণ্ড

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বুধবার খুলনার দাকোপ উপজেলার চালনা নোলোপাড়া এলাকায় নদীতীরবর্তী বাড়িঘরে আছড়ে পড়ে জোয়ারের পানি – সমকাল
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বুধবার খুলনার দাকোপ উপজেলার চালনা নোলোপাড়া এলাকায় নদীতীরবর্তী বাড়িঘরে আছড়ে পড়ে জোয়ারের পানি – সমকাল

ভয়াল গতি নিয়ে সেই সুন্দরবনেই ছোবল মারল ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এর আগেও সিডর-বুলবুলের আঘাত আসে সুন্দরবনে। এই সুন্দরবনই বাঁচিয়ে দেয় হাজার হাজার মানুষের প্রাণ। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গতকাল বুধবার বিকেল থেকে এটি স্থলভাগে উঠে আসতে শুরু করে। তবে ঝড়ের মূল কেন্দ্র (চোখ) সুন্দরবনে ছোবল মারে সন্ধ্যার দিকে। এ সময় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার। প্রবল বেগের এই ঝড়ে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটসহ উপকূলীয় এলাকা লণ্ডভণ্ড করে দেয়। বিধ্বস্ত হয় ঘরবাড়ি, ভেঙে পড়ে গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি। উপকূলের ১৯ জেলায় অন্তত ৫১ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছে। গাছ ও দেয়ালচাপায় এবং নৌকাডুবিতে বিভিন্ন স্থানে ১০ জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাত ১২টা ১৫ মিনিটে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় আম্পান ১৩৫ কিলোমিটার বেগে যশোর অতিক্রম করছিল।
আম্পান সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালিয়েছে সাতক্ষীরায়। উপকূলীয় এ জেলায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ১৪৮ কিলোমিটার। সেখানকার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, এক ঘণ্টার বেশি সময় তীব্রগতিতে তাণ্ডব চলেছে সাতক্ষীরায়। পরে গতিবেগ কমে ১০০ কিলোমিটারে নেমে আসে।

আম্পানের মূল কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গ হয়ে অতিক্রম করতে শুরু করে। এ সময় সাতক্ষীরা, খুলনাসহ পশ্চিম উপকূলে ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস বয়ে যায়। রাত ১০টার দিকে জোয়ার শুরু হলে ১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়। এতে প্লাবিত হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রবল ঝড়ে গাছচাপায় সাতক্ষীরা শহরে গৃহবধূ, যশোরে ঘুমন্ত অবস্থায় মা-মেয়ে, পটুয়াখালীতে শিশুসহ দু’জন, কলাপাড়ায় নৌকাডুবিতে একজন, পিরোজপুরে দেয়ালচাপায় একজন, ভোলার চরফ্যাসনে গাছচাপায় একজন, বরগুনায় একজন এবং লক্ষ্মীপুরে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এবারও সুন্দরবন ঢাল হয়ে দাঁড়ানোয় উপকূলীয় জনপদে জীবন ও সম্পদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়েছে, বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে অনেক বাঁধ। গাছপালা উপড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে এক ঘণ্টার মধ্যেই উপকূলীয় এলাকার ৫১ লাখের মতো গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন সমকালকে বলেন, আম্পানের প্রভাবে তাদের উপকূলীয় ২২টি সমিতিতে আংশিক বা পুরোপুরি বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটেছে। এতে পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও বরিশালের কিছু অংশসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর প্রায় ৫০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ওজোপাডিকো) লাখখানেক গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন।

গতকাল সকাল থেকে মহাদুর্যোগের হুমকি নিয়ে এগিয়ে আসছিল আম্পান। সুপার সাইক্লোন থেকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলেও এর অগ্রভাগ উপকূল স্পর্শ করার সময় ঝড়ের গতি ছিল তীব্র। ওড়িশা এবং সাগরদ্বীপে প্রবল বেগে আছড়ে পড়ার পর এর বিধ্বংসী শক্তি কিছুটা কমে যায়। পশ্চিমবঙ্গের স্থলভাগে আম্পানের অগ্রভাগ প্রবেশ করে বিকেল ৩টায়। আরও এক ঘণ্টা পরে এটি সুন্দরবন হয়ে সাতক্ষীরা উপকূল স্পর্শ করে। পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত ১০-১২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, গতকাল বিকেল ৫টায় সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলে প্রবেশ করে আম্পান। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ব্যাসের এই ঝড় পুরোপুরি সুন্দরবনের স্থলভাগে উঠে আসে সন্ধ্যা ৭টায়। এ সময় চারপাশে প্রবল বেগে ঝড় বয়ে যায়। রাত ৮টায় এটি সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চল অতিক্রম করে।

সুন্দরবন ঘেঁষা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মণ্ডলের সঙ্গে রাত ৯টায় ফোনে কথা হচ্ছিল। তখন তিনি কাঁপা কণ্ঠে সমকালকে জানান, দরজা বন্ধ করে ঘরের ভেতরে সবাই অবস্থান করছেন। বাইরে শুধু শোঁ শোঁ আওয়াজ। ঝড়ের তীব্রতা অনেক বেশি। গাছপালা উপড়ে পড়ার কথাও জানান তিনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, সন্ধ্যা ৬টায় এটি যখন সুন্দরবনে তাণ্ডব চালাচ্ছিল, তখন ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। যা দমকা হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। কোনো কোনো এলাকায় পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছিল।

এদিকে, আম্পানের সার্বিক পরিস্থিতি গণভবনে বসে পর্যবেক্ষণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার থেকে উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়। গতকাল দুপুরের মধ্যে প্রায় ২৪ লাখ লোককে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয় বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলে দেওয়া হয়। ফলে মোট আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ হাজার ৭৮টি।
আম্পানের প্রভাবে ঢাকার আকাশ সকাল থেকেই মেঘলা ছিল। সঙ্গে ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বিকেল ৪টার দিকে কিছু এলাকায় বৃষ্টি থেমে গেলে আকাশ পরিস্কার হয়ে যায়। তবে পৌনে ৬টার দিকে শুরু হয় দমকা হাওয়া। সঙ্গে কিছুক্ষণ ভারি বৃষ্টি। এরপর খানিকক্ষণ থেকে রাত ১১টায় আবার শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া।

এর আগে বিকেল ৩টায় আম্পান ছিল চট্টগ্রাম থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে, কক্সবাজার থেকে ৪৩০, পায়রা থেকে ২৫০ কিলোমিটার এবং মোংলা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে তখন বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার। এ কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকাকে ৯ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়।
রাত ১টায় আবহাওয়াবিদরা জানান, বাংলাদেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ হয়ে সুন্দরবন ঘেঁষে আম্পান স্থলভাগে উঠে এসেছে। উপকূল পেরিয়ে বিশাল এলাকাজুড়ে আম্পান স্থলভাগের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। বৃষ্টি ঝরিয়ে ধীরে ধীরে এর শক্তি কমে যায়। তারপরও সাতক্ষীরায় ভালোই তাণ্ডব চালিয়েছে। রাত ১২টা ১৫ মিনিটে ১৩৫ কিলোমিটার গতি নিয়ে আম্পান যশোর ও নড়াইলের দিকে অগ্রসর হয়। সেখান চুয়াডাঙ্গা, পাবনা অতিক্রম করার সময় এটি নিম্নচাপে পরিণত হবে। এর প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার দিনভর ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার থেকে ফের ঝলমলে রোদের দেখা মিলতে পারে।
সাত দিন ধরে বঙ্গোপসাগর থেকে শক্তি সঞ্চয় করে একপর্যায়ে সুপার সাইক্লোন রূপ ধারণ করে আম্পান। এর উৎস ছিল বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে। ১৪ মে প্রথম লঘুচাপ সৃষ্টি হয় এই সাগর অঞ্চলে। এর কয়েক দিন পর নিম্নচাপ। এরপর গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়। নাম হয়ে যায় ‘আম্পান’। ১৭ মে এটি ‘সুপার সাইক্লোন’ রূপ ধারণ করে।

আশ্রয়কেন্দ্রে ২৪ লাখ মানুষ : ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’-এর ভয়াবহতা থেকে জানমাল রক্ষার্থে উপকূলীয় ১৯টি জেলার মোট ১৪ হাজার ৬৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩ লাখ ৯০ হাজার ৩০৭ জন মানুষকে সরিয়ে আনা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য, গো-খাদ্য, মাস্ক, স্যানিটাইজার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করা হয়েছে। নিরাপদ আলো বা বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৫ লাখ ১৭ হাজার ৪৩২টি গবাদি পশু আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। গতকাল তার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আম্পান মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। এ সময় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মহসিন উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি :আম্পানের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন দপ্তর ও সংস্থাগুলো। স্থানীয় সরকার বিভাগ বাংলাদেশ সচিবালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (৯৫৭৩৬২৫) চালু করেছে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, কয়রা ও দাকোপ উপজেলার অসংখ্য স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। ভেঙে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা। মূল ঝড় আসার আগে থেকেই দুপুর ১২টার পর দাকোপ উপজেলার ৩১ নম্বর পোল্ডারের খলিশা, পানখালী, কাঁকড়াবুনিয়া, কামিনিবাসিয়া, বটবুনিয়া গ্রামের বেড়িবাঁধ উপচে গ্রামের ভেতরে পানি প্রবেশ শুরু করে।
কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সকালের জোয়ারেই হরিণখোলা, গোবরা, ঘাটাখালী, ২ নম্বর কয়রা, দশহালিয়া, আংটিহারা এলাকায় নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, কলাপাড়ায় সতর্কীকরণ প্রচারণা চালাতে গিয়ে নদীতে নৌকা ডুবে শাহ আলম মীর (৫৫) নামের এক স্বেচ্ছাসেবক নিখোঁজ রয়েছেন। হিজলায় মঙ্গলবার গভীর রাতে মেঘনায় দুই ট্রলারের সংঘর্ষে নিখোঁজের ১২ ঘণ্টা পর ট্রলার মাঝি রাসেল হাওলাদারের মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন স্থানীয়রা।
ভোলা প্রতিনিধি জানান, ঝড়ে গাছ পড়ে চরফ্যাসনের কচ্চপিয়ায় সিদ্দিক ফকির নামের ৭০ বছরের একজন মারা গেছেন। দিনভর টানা দমকা হাওয়া আর থেমে থেমে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সাগর মোহনার ঢালচর, চর কুকরীমুকরী, চর নিজাম, কলাতলীর চরসহ নদীর মধ্যবর্তী ২০টি চর।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, জোরালো দমকা হাওয়ার সঙ্গে নদ-নদীর পানি আছড়ে পড়ছিল বেড়িবাঁধের ওপর। শ্যামনগরে সহস্রাধিক কাঁচা বাড়িঘর বিধ্বস্ত এবং বহু গাছপালা উপড়ে গেছে। অনেক সড়কে গাছ পড়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এ সময় ওই এলাকার নাপিতখালী, নেবুবুনিয়া, দুর্গাবাটি, ঘোলা বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।

পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, মঠবাড়িয়া উপজেলার বলেশ্বরের চার-পাঁচ ফুট পানি বেড়ে মাঝের চরের বেড়িবাঁধের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের দেড়শ’ ফুট বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে চরের ৪০-৫০ একর জমির বিভিন্ন ধরনের সবজি তলিয়ে গেছে।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চার ফুট বেড়ে উপকূলীয় রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া, গরুভাঙা, চর আন্ডা, মাঝের চর ও খালগোড়া এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দশমিনা উপজেলার বাঁশবাড়িয়া এলাকায় তেঁতুলিয়া নদী-তীরবর্তী বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এ ছাড়া স্বাভাবিকের থেকে তেঁতুলিয়া ও বুড়া গৌরাঙ্গ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট জানান, ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণার পর থেকেই উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। উপকূলীয় এলাকার সাধারণ মানুষ গবাদিপশুসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেন। এদিকে বাগেরহাট সদরসহ মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলা উপজেলার বেশ কিছু জায়গা প্লাবিত হয়েছে। বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময় দলীয় নেতাকর্মী ও প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, জেলার প্রধান তিনটি নদীর (পায়রা-বিষখালী-বলেশ্বর) পানি বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের শত শত ঘরবাড়ি।

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চারটি ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। প্রবল জোয়ারে নলচিরা ঘাট এলাকা থেকে ২০-২৫টি দোকানঘর মালপত্রসহ ভেসে যায়।
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি জানান, মেঘনা নদীর তীরবর্তী কমলনগর উপজেলার মতিরহাট, হাজীগঞ্জ, তালতলি, চরজগদ্বন্ধু, লুধুয়া ফলকন ও ডিএস ফলকন এবং রামগতি উপজেলার পশ্চিম বালুরচর, বাংলাবাজার, চরআলগী, বড়খেরী, চরগাজী, চরগজারিয়া, তেলিরচরসহ নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যায়।
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, :সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, মহাবিপদ সংকেত পেয়েই কিছু লোককে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইফতারের পর থেকে হঠাৎ করে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। পরে বাতাসের গতি আস্তে আস্তে কমে যায়।

Share