ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে বাড়ছে রক্তপাত, যুদ্ধের শঙ্কা

নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতের তীব্রতা বেড়েছে। গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা ও গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট ছোড়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সেখানে পুরোদমে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।

ইসরায়েলের ভাষ্যমতে, গত ৩৮ ঘণ্টায় এক হাজারের বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছেন ফিলিস্তিনিরা। অপর দিকে মঙ্গল ও বুধবার গাজায় কয়েক শ লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলায় গাজায় ১৩ তলা একটি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে।

সেখানে হামাসের নেতাদের কার্যালয় ছিল। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সোমবার থেকে শুরু সহিসংতায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৪৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনে নিহত লোকজনের মধ্যে ১৩ শিশুও রয়েছে। অন্যদিকে রকেট হামলায় ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন ছয়জন।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চলমান সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সহিংসতায় সর্বশেষ প্রাণ গেছে একজন ইসরায়েলির। গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র সীমান্তে একটি জিপে আঘাত হানলে মৃত্যু হয় তাঁর। এ ঘটনায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের কাছের শহর লডে ফিলিস্তিনিদের ছোড়া একটি রকেট গাড়িতে আঘাত হানলে ৫২ বছরের একজন ব্যক্তি এবং তাঁর ১৬ বছরের মেয়ে নিহত হন।

অপর দিকে গাজার রাস্তা ভরে আছে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ এবং পোড়া গাড়ির ধ্বংসাবশেষে।

জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের টানা কয়েক দিনের সংঘর্ষের পর ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, এখন পর্যন্ত গাজা থেকে ১ হাজার ৫০টি রকেট ও মর্টার শেল ছোড়া হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ৮৫০টি ইসরায়েলের সীমানায় পড়েছে বা তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (আইরন ডোমে) প্রতিহত করেছে। আর ২০০টি ইসরায়েলি সীমান্তে ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে গাজাতে পড়েছে।

গাজা থেকে করা ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, রাতের আকাশ ভেদ করে চলছে রকেট। সেগুলোর মধ্যে কিছু ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিস্ফোরিত হচ্ছে।

গাজায় আবাসিক ভবনে বিমান হামলা চালানোর পর ফিলিস্তিনিদের রকেট হামলা বেড়েছে। গাজায় হামলার বিষয়ে ইসরায়েল বলেছে, রকেট ছোড়ার স্থাপনা এবং সুউচ্চ ভবন এবং হামাস নেতাদের বাড়ি ও অফিসকে লক্ষ্যবস্তু করছে তারা।
হামাস বলছে, শত্রুরা আবাসিক ভবনগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করায় হামলা তীব্রতর করছে তারা।

ইসরায়েলি জঙ্গি বিমানের হামলার আগে ভবনগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। তার পরও ইসরায়েলি হামলায় বেসামরিক নাগরিক নিহতের তথ্য দিচ্ছেন ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

ফাদি হানোনা নামের গাজার একজন সাংবাদিক বুধবার সকালে গাজায় বিস্ফোরণের একটি ভিডিও টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘যা ঘটছে তা অবিশ্বাস্য। আজ সকালে যা দেখলাম তা গত তিন বছরের যুদ্ধের সময়কার চেয়ে বেশি ভয়াবহ।’

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয় পক্ষের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস শান্তি ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি তৎপরতা আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য শান্তিবিষয়ক দূত টর ওয়েনেসল্যান্ড বলেন, দুই পক্ষ ‘পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দিকে এগিয়েছে’।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চিফ প্রসিকিউটর ফাতোও বেনসুদা বলেছেন, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, ইসরায়েলের নিজেদের রক্ষা করার অধিকার রয়েছে। অপরদিকে ফিলিস্তিনি জনগণেরও নিজেদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার অধিকার রয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্তজ বলেছেন, তাঁদের হামলা কেবল শুরু। ‘সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর’ ওপর হামলা চলতে থাকবে। ‘দীর্ঘ মেয়াদে শান্তি’ ফিরিয়ে আনবেন তাঁরা।

অপর দিকে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে বলেছেন, ‘ইসরায়েল যদি বাড়াতে চায় তাহলে আমরা তার জন্য প্রস্তুত। আর তারা বন্ধ করতে চাইলে আমরা তার জন্যও প্রস্তুত।’

Share