ঈদের আগে বাড়ল মুরগির দাম

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : আসন্ন রোজার ঈদ সামনে রেখে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম এক লাফে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে রাজধানীর বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা। রমজানের শুরুতে যা ছিল ১৩০ টাকা। গতকাল রাজধানীর মালিবাগ, রায়েরবাজার, হাতিরপুল ও কারওয়ানবাজারে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে বাজারে মুরগির চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বাজারে এখন সব ধরনের মুরগির চাহিদা বেড়েছে। দামে তুলনামূলক কিছুটা কম হওয়ায় ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে বেশি। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে।

মালিবাগ বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. রাসেল জানান, ঈদে গরুর মাংস কেনার সামর্থ্য অনেকেরই নেই। তাই ঈদের আয়োজনে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেশি থাকে। এ সময় সরবরাহের তুলনায় চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। তাই দামও বাড়ে। এ বাজারে ব্রয়লার মুরগি

কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়। পাশাপাশি অন্য মুরগির দামও বেড়েছে। লেয়ার মুরগি এখন ২৩০ থেকে ২৩৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সোনালিকা মুরগি ২৯৫ থেকে ৩০০ এবং দেশি মুরগি ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ানবাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. হানিফ বলেন, ঈদ এলেই চাহিদার সঙ্গে মাংসের দামও বাড়ে। এটা স্বাভাবিক। ঈদের আগ মুহূর্তে দাম আরও বাড়তে পারে।

এদিকে এবারের রমজানে সিটি করপোরেশন গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। এর ফলে বাজারে ইচ্ছামতো দামে গরুর মাংস বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। রোজার মধ্যে গরুর মাংস ৫৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও বর্তমানে অনেক দোকানেই বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা পর্যন্ত।

মাংসের দামের পাশাপাশি মাংস রান্নার উপকরণ গরম মসলাসহ অন্য মসলার দামও বেড়েছে। কারওয়ানবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে ভালো মানেরটা বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি দামে। অন্যদিকে দারুচিনি ৪০০-৪৫০ টাকা। লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত। জিরার কেজি এখন ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা। এ ছাড়া জয়ত্রী ২ হাজার ৪২০ থেকে ৩ হাজার ২০০ এবং জায়ফল বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

কারওয়ানবাজারের মসলা বিক্রেতা মো. কাশেম বলেন, ঈদে পোলাও, বিরিয়ানি, মাংস, রোস্ট রান্নার আয়োজন থাকে বলে এ সময় গরম মসলাসহ জয়ত্রী ও জয়ফলের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে দামও বাড়ে। তবে এ বছর দাম কম বেড়েছে। অন্য বছর আরও বাড়ে।

ঈদের দিনে থাকে মিষ্টান্নের আয়োজন। তাই বাজারে দুধ, চিনি ও সেমাইয়ের চাহিদাও বেড়ে যায় অনেক। বাজারে ইতোমধ্যেই বেড়ে গেছে চিনির দাম। খোলা চিনির দাম কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রাজধানীর বাজারগুলোয় খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহেও যা বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৭২ টাকায়। অনেক দোকানে প্যাকেট চিনির দামও এক কেজির প্যাকেটে ২ টাকা পর্যন্ত বাড়ছে।

বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সেমাইও। প্রতিকেজি খোলা লাচ্ছা সেমাই ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। লম্বা সেমাই (বাংলা সেমাই) ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির ২০০-২৫০ গ্রামের লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত।

কারওয়ানবাজারের সেমাই বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, সেমাইয়ের দাম এবার গেল বছরের তুলনায় ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেশি। এবার লকডাউনে কাঁচামালের দাম বেড়েছে, পাশাপাশি পরিবহন খরচও বেড়েছে। তাই দামটাও বেশি।

এদিকে ঈদের আগে স্বস্তি দিচ্ছে না সবজি বাজার। আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে প্রায় সব ধরনের সবজি। বেগুনের কেজি এখন ৪০ থেকে ৬০ টাকা। বরবটি, ঝিঙা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, পটোল, ঢেঁড়সের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। পাকা টমেটোর কেজি ৩০ থেকে ৪০ এবং শসা মানভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। লাউয়ের পিস আগের মতোই ৬০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। কচুর লতিরও মেজাজ গরম। বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। ওদিকে সামান্য কাঁচকলার হালিও বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত।

কারওয়ানবাজারের সবজির পাইকারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিয়াদ এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী বলরাম চন্দ্র বলেন, রোজার ঈদের আগ মুহূর্তে সবজির চাহিদা কম থাকে। তাই এ মুহূর্তে নতুন করে দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। বর্তমানে সবজির সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা বাড়তি রয়েছে। সামনের দিনগুলোয় দাম কমবে বই বাড়বে না।

Share