কুড়িল ফ্লাইওভারে লাশ প্রবাসী সুভাষ হত্যার মোটিভ কী

নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : বগুড়ার শিবগঞ্জের বড় নারায়ণপুর গ্রামের প্রবাসী যুবক সুভাষচন্দ্র সূত্রধরের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। সন্তানের মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মমতাময়ী মা সুমিত্রা বালা সূত্রধর। বয়োবৃদ্ধ মায়ের আহাজারি যেন কেউই থামাতে পারছে না। রাজধানীর খিলক্ষেতের কুড়িল ফ্লাইওভারে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা সুভাষের মৃতদেহ শুক্রবার ভোররাতে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের আবতারণা হয়।

বড় নারায়ণপুর গ্রামের শ্মশানে সকাল ১০টায় তার শেষকৃত সম্পন্ন হয়। সুভাষচন্দ্র শিবগঞ্জ উপজেলার বড় নারায়ণপুর গ্রামের মৃত সুবীরচন্দ্র সূত্রধরের ছেলে। নিহতের বড় ভাই স্বপনচন্দ্র সূত্রধর জানান, পাঁচভাই ও তিন বোনের মধ্যে সুভাষ ছিলেন সবার ছোট। তিনি বলেন, ‘আমার চতুর্থ ভাই মনোরঞ্জন সূত্রধরের মাধ্যমে প্রথমে আমি, তারপর সুভাষ দুবাই যায়। পর্যায়ক্রমে আমরা পাঁচ ভাই দুবাই যাই। তবে করোনার কারণে মাস দুয়েক আগে আমি দেশে ফিরে আসি।’ স্বপনচন্দ্র আরও বলেন, ‘২০১২ সালে সুভাষ প্রথম দুবাই যায়। মাঝে একবার সে ছুটিতে দেশে আসে।

গত বছরের ১৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফা ছুটিতে বাংলাদেশ আসে সুভাষ। তার কয়েকদিন পরই অর্থাৎ ২১ নভেম্বর বগুড়া সদর উপজেলার শেখেরকোলা গ্রামের দীপুচন্দ্র সূত্রধরের মেয়ে রিতা রানীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তবে ছুটি শেষ হওয়ায় আগামী ১০ মে দুবাই যাওয়ার জন্য তার টিকিট কনফার্ম ছিল। এ জন্য বুধবার বিকাল ৫টায় শ্বশুর দীপুচন্দ্রের সঙ্গে সুভাষ বাড়ি থেকে বের হয়ে মোকামতলা বন্দরে যায়। রাতে সে একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় রওনা হয়। যাওয়ার সময় মোকামতলা বন্দরে তাদের গ্রামের পরিচিত এক লোক মাইক্রোবাসে না গিয়ে তাকে কোচে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও সে তা শোনেনি।’

সুভাষের স্ত্রী রিতু রানী সূত্রধর বলেন, ‘আমার সঙ্গে বুধবার রাত আড়াইটায় তার শেষ কথা হয়। তখন সে জানায়- আর এক ঘণ্টা পর বিমানবন্দরে নামব। আমি ভালো আছি। এই বলেই ফোন কেটে দেয় সুভাষ। কিন্তু আগে কখনো সে ফোন কেটে দিত না।’ যাওয়ার আগে সুভাষ স্ত্রীকে বলেছিলেন, আয় রোজগার করে এবার দেশে ফিরে এলে আর কখনো বিদেশে যাবেন না। দেশে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন। তবে স্ত্রী রিতু রানীর ধারণা, ‘ছিনতাইয়ের জন্য নয়, পূর্বপরিকল্পিতভাবেই সুভাষকে হত্যা করা হতে পারে। কারণ তার কাছে বেশি নয়, মাত্র ৭ হাজার টাকা ছিল।’

নিহতের ভায়রা কৃষ্ণচন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘বিদেশ যাওয়ার জন্য করোনার পরীক্ষা করাতে বুধবার সন্ধ্যায় বগুড়া থেকে সুভাষ একটি মাইক্রোবাসে ঢাকায় রওনা দেন। মনে হচ্ছে, ওই মাইক্রোবাসেই গলায় গামছা পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে ফ্লাইওভারে ফেলে দিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।’

এ বিষয়ে খিলক্ষেত থানার ওসির উদ্ধৃতি দিয়ে শিবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে টহল পুলিশ খিলক্ষেত ফ্লাইওভারে গলায় গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় এক ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখে। তার কপাল থেকে রক্ত বের হচ্ছিল ও মুখে ছিল আঘাতের চিহ্ন। সঙ্গে থাকা পাসপোর্ট থেকে পুলিশ সুভাষের পরিচয় জানতে পারে। সেই সঙ্গে পকেটের কাগজে থাকা মুঠোফোন নম্বরে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে পরিচয় নিশ্চিত হয়। পরে তার ভায়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। ওসি বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধু সেতুর সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে হত্যাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছি।’

Share