নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : হাসান মতিউর রহমান। এদেশের অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গীতিকার তিনি। এরমধ্যে ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই’ ব্যাপক জনপ্রিয় এ গানটি তার লেখা। ক্যারিয়ারের এই সময়েও গান লেখা ও অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে তার।
মাঝে লকডাউনের বিরতি শেষে আবারো গানে ব্যস্ততা বাড়ছে। আপনার এখনকার ব্যস্ততার কথা শুরুতে জানতে চাই—
ঘরে বসে বেশকিছু কাজ করা হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি গান লকডাউনের মধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে। এখনো গান লেখা নিয়ে ব্যস্ত আছি। মমতাজের জন্য দুটি গান লিখেছি। সেগুলোর কাজ চলছে। একজন নতুন সংগীতশিল্পীর জন্য গান লিখেছি। এই কাজগুলো নিয়মিত চলছে। পাশাপাশি ২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুড়ি বোর্ডে আছি এবার। সেই কাজ নিয়েও বেশ ব্যস্ততা যাচ্ছে।
আপনার ক্যারিয়ার আশির দশকের গোঁড়া থেকে শুরু। তখনকার গানের বাজারের সঙ্গে পার্থক্যটাও আপনি দেখেছেন। অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে ব্যাখ্যাটা কীভাবে দেবেন?
অনেক পার্থক্য এখন। আগে গান নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আবেগের জায়গাটা ছিল সেটির অভাব দেখি। একটা সময় দেশের বাইরে থেকে যারা আসতেন তারা সঙ্গে একটা প্লেয়ার নিয়ে আসতেন। সিডি বিক্রি একটা উত্সবের মতো ছিল। দোকানে, পাড়া-মহল্লায় গান বাজতো। আর এখন তো মানুষ একা একা বেশি গান শোনে। এছাড়া এখনকার বাজারটা হয়ে গেছে ইউটিউব নির্ভর। এমন অনেকে আছেন যারা ইউটিউবে অভ্যস্ত না। তাদের গান শোনার অভ্যাসটা কমেছে। সব মিলিয়ে গানের উন্মাদনাটা কম পাই।
কথা ও সুর দিয়ে প্রথমত একটি গান কালজয়ী হয়। এখন কি তেমন গান তৈরি হচ্ছে মনে করেন?
না, কারণ শিল্প হচ্ছে চর্চার বিষয়। শিল্পের বিস্তার ও সমৃদ্ধ হয় ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে। সেটি তো এখন দেখি না। আগে একটি গান নিয়ে গীতিকার, সুরকার, শিল্পী ও সংগীত পরিচালকদের আড্ডা হতো। গীতিকার তার লেখার অনুভূতি শেয়ার করতেন। সুরকার সেই ভাব বুঝে সুর করতেন। সেটি সংগীত পরিচালক গানটিকে বাঁধতেন। এরপর শিল্পী তার কণ্ঠে গান তুলতেন। এখন তেমনটা দেখা যায় না। যে যার মতো কাজ করছে। গীতিকার গান লিখে পাঠিয়ে দিচ্ছে সেটি সুরকার নিজের মতো সুর করছেন। এভাবেই গানগুলো হচ্ছে। আমাদের চর্চার জায়গাটা কমে যাচ্ছে। আগে গানের কথা ও সুর ঠিক করা হতো। এরপর শিল্পী নির্বাচন করা হতো যে গানটি কাকে দিয়ে গাওয়ানো যায়। কিন্তু এখন এর উল্টো। আগে শিল্পী নির্বাচন হয়। এরপর তার জন্য গান লেখা ও সুর করা হয়। আর এখনকার শিল্পীরা মনে করেন গানের কথা ও সুর একটা হলেই হলো। আরেকটি বিষয় এখন দেখা যায়, শিল্পীরা নিজেদের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন। নিজেদের মধ্যেই গান নেন, সুর করান। এটিও গানের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী।
‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই’ আপনার লেখা এই গানটির জনপ্রিয়তা নতুন করে ব্যাখ্যার জায়গা নেই। আপনার কাছ থেকে গানটি সৃষ্টির কথা জানতে চাই—
১৯৯০ সালে গানটির জন্ম। তখন এরশাদ সরকার ক্ষমতায়। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সে এক সম্মেলনের যাবেন এবং সঙ্গে একজন শিল্পী যাবেন। সেখানে দুটি গান করা হবে। তখন বাংলাদেশ বেতারের মলয় কুমার গাঙ্গুলী আমাকে ফোন করলেন দুটি গান লিখতে হবে। একটি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরেকটি শেখ হাসিনাকে নিয়ে। তখন আমার বেশ কয়েকটি গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমাকে দু’দিন সময় দেওয়া হলো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান লেখার সাহস আমি করতে চাইনি। কিন্তু দাদা আমাকে ছাড়লেন না। প্রথমে কিছুই আসছিল না। এরপর শেষের দিন ভোরে উঠে আমার মাথায় প্রথম লাইনটি এলো। তখন পুরো গানটি করে মলয় দার বাসায় যাই। তিনি ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে গানটির সুর করলেন। এই গানটি প্রথমে ফ্রান্সে গাওয়া হয় এবং শেখ হাসিনা বেশ প্রশংসা করেন। পরবর্তীতে নির্বাচনের পর গানটি এদেশের মানুষ শোনেন এবং বেশ জনপ্রিয়তা পায়।