নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : কক্সবাজার জেলার টেকনাফের ওসি’র রোষানলে পড়ে স্থানীয় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা ২৩ মাস কারাগারে রয়েছেন।ক্রসফায়ারের ভয়ে ও নিরাপত্তার কারণে তাকে জামিনে বের করছেনা পরিবার। দুর্নীতি ও অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের জেরে ‘কক্সবাজার বাণী’ পত্রিকার সম্পাদক ফরিদুল মোস্তফাকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের বিরুদ্ধে।
ক্রসফায়ারের ভয়ে রাতের আধারে কক্সবাজার থেকে পালিয়ে আসা ফরিদুল মোস্তফার জীবন আজ নিস্তেজ। অসহায় স্ত্রী, সন্ত্রান, পিতা-মাতাও আজ অসহায়। দোষ একটাই পুলিশের দুর্নীতি ও অনিয়মের সংবাদ লিখতো মোস্তফা। অন্ধ প্রায় চোখ, ডান হাত ভাংগা, আঙ্গুল থেতলানো মোস্তফা বুঝি আর সাংবাদিকতা করতে পারবে না।
জানা যায়, সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করেছেন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস। কোনো পরোয়ানা ছাড়াই ঢাকার পল্লবী থেকে তাকে ধরে নিয়ে টেকনাফ থানায় তিন দিন আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। পরে মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানকে।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফরিদুল মোস্তফার স্ত্রী হাসিনা আক্তার লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ জানান। তিনি জানান, ‘তার স্বামী বিভিন্ন সময় টেকনাফ থানার ওসিসহ পুলিশ সদস্যদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করেছেন। এ কারণে তাকে ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসা থেকে ধরে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। সেসময় তার চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়ে নির্যাতন করায় বর্তমানে দুটি চোখই নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া তার হাত-পা ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। চিকিৎসক জানিয়েছেন তার এক চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে’।
ফরিদুল মোস্তফার মেয়ে সুমাইয়া মোস্তফা খান বলেন, ‘তাদের পরিবারের কেউ কোনো মামলার আসামি নয়। কখনো তারা কোনো অনিয়মে জড়াননি। এরপরও পুলিশ ঠান্ডা মাথায় তার বাবাকে মামলা দিয়ে সমাজে তাদের পরিবারটিকে হেয় করেছে’।
উল্লেখ্য, ওসি প্রদীপের আদেশে টেকনাফ থানা পুলিশ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীর ট্যাগ লাগিয়ে নিরীহ লোকজনকে থানায় ধরে নিয়ে মোটা অংকের অর্থের জন্য চাপ প্রয়োগ করতো । যারা টাকা দিতে পারে না তাদের ভাগ্যে জুটতো ক্রসফায়ারের নামে নির্মম মৃত্যু।
প্রসঙ্গত: ওসি প্রদীপ ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর টেকনাফ থানায় যোগদান করেন। এরপর থেকে গত ১৯ মাসে শুধু টেকনাফে ১৪৪টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব বন্দুকযুদ্ধে ২০৪ জন নিহত হয়েছে।