নয়াবার্তা প্রতিবেদক : পদ্মা সেতু নির্মাণে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ধারাবাহিক অভিযোগ আনা বিএনপির সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আসেন দেখে যান, পদ্মা সেতু হয়েছে কিনা।
শনিবার সকালে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যান শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে। সেখানে আরেকটি ফলক উন্মোচনের পর শেখ হাসিনা যোগ দেন মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ির ঘাটের জনসভায়।
সেখানে প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করে দিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা যখন পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা বলি, তখন তারা বলেছিল, আওয়ামী নাকি কোনোদিন পদ্মা সেতু করতে পারবে না। আমি খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞাসা করি… আসেন.. .দেখে যান… পদ্মা সেতু হয়েছে কি না।’
২০০১ সালের মাঝামাঝি পদ্মার নদীর উপর সেতু নির্মাণের সমীক্ষার কাজ শেষ করে জাপান। স্থান নির্বাচন করে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে। এই সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০০১ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে আমি মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা।
২০০১ সালে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। তখন বিএনপি সরকার মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণে অনীহা দেখায় বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামাত জোট সরকার মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণে অনীহা দেখায়। তারা জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচায় পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান বর্তমান মাওয়া-জাজিরা প্রান্তকেই বাছাই করে পদ্মা সেতু নির্মাণের রিপোর্ট পেশ করে।
বিএনপি-জামাত জোট সরকার ২০০১-২০০৬ মেয়াদে এই সেতু নির্মাণের বিষয়ে আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ২০০৯ সালে আবার সরকার পরিচালনার দায়িত্বে এসে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় নিয়ে আসি।
সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার ২২ দিনের মাথায় সেতুর নকশা তৈরির জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়। অনেক আলাপ-আলোচনার পর বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা এই সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করতে সম্মত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক জ্ঞানী-গুনী লোক ছিল, অর্থনীতিবিদ, বড় বড় আমলা ছিলেন। সবাই বলেছিলেন, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু সম্ভব না। আজকে নিজেদের টাকায় কিভাবে করতে পারলাম। আপনারা.. বাংলাদেশের জনগণ, আপনারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন, পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনগণের শক্তি সবথেকে বড় শক্তি। আমি সেটাই বিশ্বাস করেছি।
বিশ্ব ব্যাংক যখন আবার পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য প্রস্তুত তখন গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রে নানা মহলে ‘তদবির শুরু করেন’ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, তার তদবিরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেল। তারা অভিযোগ আনল দুর্নীতির। এখানে দুর্নীতি কে করল? যে সেতু প্রাণের সেতু, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য জড়িত, সেখানে কেন দুর্নীতি হবে?
শেখ হাসিনা বলেন, তারা টাকা দেয়নি। কিন্তু দুর্নীতির ষড়যন্ত্র বলে টাকা বন্ধ করল। আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম টাকা বন্ধ করেছো ঠিক আছে। কিন্তু বাংলাদেশ বসে থাকে নাই। আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করব। অনেকে অনেকভাবে চেষ্টা করেছে, অনেক কথা বলেছে.. এ সেতু আমরা করতে পারব না। আমার একমাত্র শক্তি আপনারা, বাংলাদেশের জনগণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে পদ্মা সেতু হয়েছে। যারা বাধা দিয়েছিল, তাদের আমরা উপযুক্ত জবাব দিতে পেরেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, এই সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে আমাদের অনেক অপমান, অনেক অসম্মান করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার ছেলে জয়, পুতুল, রেহানার ছেলে ববি, আপনাদের সন্তান আবুল হোসেন (সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন), উপদেষ্টা মসিউর রহমান, সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁঞাকেও মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অপমান করা হয়েছে। কিন্তু আমরা পিছু হটি নাই। আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল, আমরা এই সেতু নির্মাণ করব। দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করব। আমরা তা করতে পেরেছি। আপনারা সেই সাহস ও শক্তি দিয়েছেন। আমি আপনাদের পাশে আছি।