গত ১৫ বছরে সরকারি কর্মচারীরা বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, সরকারি কর্মচারী বিশেষ করে আমলারা গত ১৫-২০ বছরে অবৈধভাবে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন। এ রকম শত শত লোক রয়েছে। আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এনবিআর ও সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) এদের বিষয়ে ব্যাপক কাজ করেছিল। এবারও আমরা সে বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ে এনবিআরে ই-রিটার্ন সার্ভিস সেন্টার উদ্বোধন করার সময়ে তিনি এ কথা বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এনবিআর হাতগুটিয়ে নেই। সময় তো সবে মাত্র শুরু। শুরু করতে কিছু সময় লাগে, যেটা বাইরে থেকে দেখা যায় না। নিশ্চয়ই বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত যে বাংলাদেশ গড়তে চাই, সবাইকে নিয়ে আমরা সেই কাজটি করতে চাই। এটা করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। এ জন্য সময় লাগবে।

তিনি বলেন, গ্রুপ কোম্পানির কর ফাঁকির তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। এগুলো বৃহৎ করদাতা ইউনিট তদন্ত করছে। সিআইসির সক্ষমতা অনুযায়ী করা হচ্ছে। এবং পর্যায়ক্রমে এগুলো শেষ করা হবে। সব কাজ এক সঙ্গে কাজ শুরু করলে এর কোনোটাই শেষ করা যাবে না। যেসব করদাতা সম্পর্কে গণমাধ্যমে আলোচনা আছে বা গোয়েন্দাদের মাধ্যমে আমরা তথ্য পাচ্ছি তদন্তের ক্ষেত্রে আমরা সেগুলো অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কর্পোরেট করদাতাদের ক্ষেত্রে আমরা একই পদ্ধতি অনুসরণ করছি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আবদুর রহমান বলেন, কালো টাকা সাদা করার আইন বাতিল করা হয়েছে। এই আইন বাতিল করার আগে কোনো ব্যক্তি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে থাকলে সেটা আইনের বলেই নিয়েছে সেটা বৈধ। তার কোনো সমস্যা নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত আইনটি বহাল ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত সেটা লিগ্যাল।

তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা যখন আয়কর রিটার্ন দেয় সেগুলো অডিট করা হয় তারপর সেগুলো অ্যাসেসমেন্ট করা করা হচ্ছে। সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এটা নিয়ে কাজ করে। সক্ষমতা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে করা হয়।

রাজস্ব বোর্ডের মাঠ পর্যায় থেকে ট্যাক্স অডিট ফাইল পাঠানো নিষেধ করা হয়েছে-এটা কেনো-সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের একটা ইমেজ সংকট রয়েছে, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ফাইলগুলো ঠিক করি, এগুলো সঠিক হয় না। এ বিষয়ে করদাতাদের কাছে থেকে অভিযোগ আমরা পেয়ে থাকি। এ জন্য আমরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে অডিট সিলেকশন করতে চাই। যাতে করদাতাদের মনে সন্দেহ তৈরি না হয়। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। তিনি বলেন, যারা কর ফাঁকি দিয়েছে তাদের বের করব এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

আয়করের করমুক্ত সীমা বৃদ্ধি করলে করদাতারা বাইরে পড়ে যায় উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আর্থিক সক্ষমতা, মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিবেচনা করে করমুক্ত আয়সীমা নির্ধারণ করা হয়। যাতে যাদের কম সক্ষমতা কম, তারা কম কর দেবেন। আর যাদের সক্ষমতা বেশি তারা বেশি কর দেবেন। সবাই জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, মামলা জটিলতার কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আটকে আছে। এই মামলা জটিলতা দূর করতে কাজ করা হচ্ছে। হাইকোর্টে ভিন্ন বেঞ্চ হয়েছে, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) কাজ করছে। উভয় পক্ষের জেতার মানসিকতার কারণে মানুষ এডিআরে যেতে চাচ্ছে না। রাজস্ব বিরোধ মীমাংসা ক্ষেত্রে এডিআর ভালো ক্ষেত্র। কিন্তু উভয় পক্ষের ‘আমারটা চাই’-এর মানসিকার কারণে এটা কার্যকর হচ্ছে।

ই-রিটার্ন সিস্টেমের সহায়তার জন্য সার্ভিস সেন্টারের উদ্বোধন করে এনবিআর। নতুন এই সার্ভিস সেন্টারটি ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে করদাতাদের রিটার্ন দাখিল ও কর পরিপালন সহজ করতে সহায়তা প্রদান করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পাবলিক ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের সহায়তায় ওই সার্ভিস সেন্টারটি পরিচালিত হচ্ছে।

Share