নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় আমি শৈশবে, তবু কিছু কিছু স্মৃতি এখনো মনে গেঁথে আছে। শৈশবের স্মৃতি নাকি মানুষ ভোলে না। আমার শৈশব কেটেছে আগরতলা শহরে, যার অদূরেই ‘সিঙ্গারবিল ঘাঁটি, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়, ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান ওঠানামার জন্য নির্মিত। জাপানি যুদ্ধবিমান মাঝেমধ্যেই হানা দিত সেখানে এবং শহরের ওপর দিয়ে উড়ে যেত। মনে আছে ‘সাইরেন’ বেজে উঠত এবং ঘরে-বাইরে সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেত। বোমারু বিমান চলে গেলে আবার সবই স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকত। কারণ, তখন শত্রু দৃষ্টিগোচর ছিল। কিন্তু এখন এমন এক শত্রু দ্বারা আক্রান্ত সারা বিশ্ব, যে শত্রুকে চোখে দেখা যায় না। যেন এক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছে সমগ্র মানবজাতি।
ঘরে বন্দিদশায় আছি, প্রচুর সময়—পড়ছি, লিখছি, সিনেমা দেখছি আর মাঝেমধ্যে কিছু ‘বাসি কথা’ স্মরণে আসছে। প্রায় ২০০ বছর আগে একজন ধর্মযাজক হয়েও থমাস রবার্ট মালথাস নামের এক গরিব (!) জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং তার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন যে প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নেবেই। অর্থাৎ প্রকৃতি কোনো নির্জীব বস্তু নয়, সে তার নিজস্ব নিয়মে নিজেকে রক্ষা করবেই। তাঁর এই তত্ত্বের অনেক বিরূপ সমালোচনা হয়েছে। দম্ভসহকারে তাঁর এই ভবিষ্যৎ সতর্কবাণী অবহেলিত হয়েছে।
বেশ কয়েক বছর আগে সম্ভবত ইউনেসকো থেকে একটি এমনই সতর্কবাণী প্রচার করা হয়েছিল, ‘আমাদের একটি মাত্র গ্রহ এবং এর সম্পদও সীমিত, অতএব শুধু যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই নেব।’ মহাত্মা গান্ধীও অনেকটা এমন কথা বলেছিলেন, ‘প্রকৃতি মানুষের প্রয়োজন মেটানোর জন্য, লালসা মেটানোর জন্য নয়।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা! আমার মতো একজন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র গরিবও ওই সব বিখ্যাত গরিবে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কিছু লেখালেখি করেছিলাম এবং পত্রিকায় সেগুলো প্রকাশও করেছি। বলেছিলাম, নির্বোধ প্রাণীর মতো বংশবৃদ্ধি এবং ভোগবাদী সমাজের লাগামহীন, প্রকৃতিবিধ্বংসী উন্নয়নের অশ্বকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ভবিষ্যৎদ্রষ্টা সেই সব গরিবের কথা অচিরেই ফলে যাবে। ‘গরিবের কথা বাসি হলেও ফলে’—অলস সময়, বসে বসে প্রায়ই এই প্রবচনের কথা মনে হয়।
যাহোক, এসব কথা ভাবার সময় এখন নয়। এখন সমস্যার তাৎক্ষণিক বা স্বল্পমেয়াদি সমাধানের পথ অনুসরণ করা জরুরি। আসুন সবাই মিলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথা সরকারের নির্দেশনাগুলো মেনে ঘরে থাকি। জরুরি স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলি, সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসি। নিজে বাঁচি, অন্যকে বাঁচতে সাহায্য করি।