গাংনীতে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ, স্বামী পলাতক

নিজস্ব জেলা প্রতিনিধি : মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামুন্দী পশ্চিমপাড়ায় রুবিনা খাতুন (২২) নামের এক গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার পর তার স্বামী পালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সকালে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর রুবিনার মৃত্যু হয়। পারিবারিক কলহের জের ধরে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের।

রুবিনা খাতুন সদর উপজেলার টেঙ্গারমাঠ গ্রামের রবকুল হোসেনের মেয়ে এবং একই উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে বামুন্দী ওয়েভ ফাউন্ডেশনের মাঠকর্মী মিলন হোসেনের স্ত্রী।

মিলন-রুবিনা দম্পতি যে বাড়িতে ভাড়া থাকত সেটির মালিক বামুন্দী পশ্চিমপাড়ার আশরাফুল ইসলাম জানান, এক সপ্তাহ আগে মিলন বাড়িটি ভাড়া নেয়। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। রুবিনা ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার করলে স্থানীয়রা দ্রত তাকে উদ্ধার করে হুদা ক্লিনিকে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাকে মেহেরপুর জেনরেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে রুবিনাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। জরুরি বিভাগে চিকিৎসক সউদ আলীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, রুবিনার শরীরের বিভিন্ন অংশ দগ্ধ ছিল।

রুবিনার নানী হালিমা খাতুন জানান, প্রায় ৪ বছর আগে পারিবারিকভাবে মিলনের সঙ্গে রুবিনার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে রুবিনার ওপর নানাভাবে নির্যাতন শুরু করে স্বামী মিলন হোসেন ও তার বাবা-মা। নির্যাতন সইতে না পেরে একাধিকবার সংসার ছেড়ে চলে আসেন রুবিনা। স্থানীয় ও পারিবারিকভাবে বিষয়টি মিমাংসা করে তাকে কয়েকবার শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো হয়। শুক্রবার ভোরে গাংনীর বামুন্দীতে ভাড়া বাড়িতে নির্যাতনের পর রুবিনার শরীরে আগুন দিয়ে হত্যা করে মিলন।

রুবিনার বড় মামী শুকতারা বলেন, ‘৫ বছর বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে নানী হালিমার কাছে বড় হয় রুবিনা। তার নানী অন্যের বাড়িতে কাজ করে রুবিনাকে বড় করেছেন। এরপর চার বছর আগে মিলনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। রুবিনার ২ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। মেয়ের জন্মের পরপরই রুবিনাকে তালাক দেয় মিলন। পরে আমঝুপি ইউনিয়র পরিষদে অভিযোগ দিলে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও স্থানীয় গন্যমান্যদের শালিসের পর রুবিনাকে ঘরে নেন মিলন। কিন্তু এরপর রুবিনার ওপর নির্যাতন বাড়তে থাকে। স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার পর সে শিশুকন্যাকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমরা পরিবারে পক্ষ থেকে মিলনের বিচার দাবি করছি।’

মেহেরপুর সদর থানার ওসি তদন্ত আমিরুল ইসলাম জানান, রুবিনার লাশ পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবাইদুর রহমান জানান, ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন হবে। এখনই নিশ্চিত কোনো কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

Share