যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে আরও গতি হারিয়েছে অভিবাসন প্রক্রিয়া, অনিশ্চয়তা

নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অভিবাসন বিভাগ গতিহীন হয়ে পড়ে। আর এ বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে এ বিভাগের দীর্ঘসূত্রতা বেড়েছে। কেউ যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনার তিন মাসের মধ্যে সাধারণত তাকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। কিন্তু এখন তা গড়িয়েছে বছরেরও বেশি সময়ে। এমনকি নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রেও ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। নির্বাচনের পর এ সমস্যার সমাধান হবে কি-না তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে অনেকেই আশা করছেন, ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন জয়ী হলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।

নিউইয়র্কের জ্যামাইকা অঞ্চলে বসবাসকারী আক্তার হোসেন প্রায় সাড়ে চার বছর আগে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন। তিনি বলেন, অভিবাসন বিভাগ দুই বছর আগে তার আবেদনের প্রাপ্তি স্বীকার করে চিঠি দিয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত সাক্ষাৎকারের জন্যও ডাকেনি তারা। ভ্রমণ ভিসায় এসে এখানে এভাবে আটকে থাকার চিন্তা ‘ভুল’ মনে হচ্ছে এখন।

এভাবে অনেকেই আবেদন করে ঝুলে আছেন বছরের পর বছর। আর যারা অবৈধ উপায়ে এসেছেন তাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। একদিকে করোনা মহামারি, অন্যদিকে নির্বাচনি ডামাডোল। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা রয়েছেন গভীর শঙ্কা ও দুঃশ্চিন্তায়। এই অবস্থা কেবল বাংলাদেশিদের নয়, অভিবাসনপ্রত্যাশী সবার।

ম্যানহাটনের আইনজীবী স্টিভেন জন বলেন, নির্বাচনে যদি ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন বিজয়ী হন, তাহলে বর্তমান অভিবাসন নীতির অনেক বিষয়ে পরিবর্তন আসতে পারে। যেমন: মানবিক অনেক ক্ষেত্র- অ্যাসাইলাম, উদ্বাস্তু সংকট দ্রুততার সঙ্গে সমাধান হবে। যেগুলো এখন কার্যত বন্ধ রয়েছে, সেগুলো চালু হবে। অভিভাসনের বিষয়গুলো সহজ হবে। সবচেয়ে বড় কথা মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরবে।

তিনি আরও বলেন, বাইডেন জয়ী হলে অভিবাসন বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা বাড়বে। ফলে সিদ্ধান্তও আসবে দ্রুত। কিন্তু ট্রাম্প যদি আবারও জয়ী হন, তবে বর্তমানে যে অবস্থা রয়েছে সেটাই বজায় থাকবে। বা এর চেয়ে আরেকটু খারাপও হতে পারে অবস্থা। বলা হচ্ছে, মেধাভিত্তিক অভিবাসন চালু হবে। কিন্তু মেধাভিত্তিক ব্যবস্থা তো এমনিতেই এখানে চালু রয়েছে। এই যে ইবি ক্যাটাগরি এটি তো মেধাভিত্তিকই। তবে ট্রাম্প জয়ী হলেও অভিবাসন ব্যবস্থায় বড় কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। চেইন ইমিগ্রেশন বা পারিবারিকভাবে যারা এদেশে আসেন সেই ব্যবস্থা বন্ধ হবে না। কারণ এ দেশের অর্থনীতিতে অভিবাসীদের বড় ধরনের অবদান রয়েছে।

এর আগে ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল (ডাকা) নামে একটি কর্মসূচির অনুমোদন দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। যেটিকে ড্রিম অ্যাক্ট বলা হয়। ২০১২ সালের ১৫ জুন সই করা ওই আদেশে যারা শৈশবে বাবা-মায়ের হাত ধরে অবৈধ উপায় এদেশে এসেছেন কিন্তু কার্যত কোনো কাগজপত্র নেই, তাদের থাকার এক ধরণের বৈধতা দেওয়া হয়। প্রতি দুই বছর পর পর সেটি নবায়ত করতে হয়। এর মধ্য দিয়ে একজন আবেদনকারী যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ও কাজ করার অনুমতি পান। তবে তিনি কোনো অপরাধে জড়াতে পারবেন না। এই কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৮ লাখ মানুষ নিবন্ধিত রয়েছেন।

রিপাবলিকান দলের সমর্থক সমর পাল বলেন, অনেকেই ভুলে যান, রিপাবলিকানদের কারণেই তারা এ দেশে আসতে পেরেছেন। ১৯৮৬ সালের এমিনেস্টি দিয়েছিল রিপাবলিকানরাই। ওপি ওয়ান এবং ডিভি লটারির মাধ্যমে অনেকে এদেশে এসেছেন, সেটাও দিয়েছে রিপাবলিকানরাই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অপরাধীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার পক্ষে। তিনি সীমান্তে দেয়াল দিয়ে দেশকে সুরক্ষিত করতে চান। আর কিছু নয়।

এই রিপাবলিকান সমর্থক অভিযোগ করেন, বর্তমান প্রেসিডেন্টের চেয়ে অনেক বেশি মানুষকে ডিপোর্ট বা অবৈধদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামা।

Share