চোরাচালানের নিরাপদ নিরাপদ রুট সুন্দরবন

শ্যামনগর প্রতিনিধি : সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সীমান্ত সংলগ্ন কয়েকটি অংশকে নিরাপদ রুট (যাত্রাপথ) হিসেবে বেছে নিয়েছে চোরাচালানিরা। প্রশাসনের সহায়তায় এই রুট ব্যবহার করে তারা ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু, মাদকসহ নানা পণ্য আনছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মাঝেমধ্যে দু’চারটি চালান আটক হলেও মূল হোতারা থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এভাবে দক্ষিন-পশ্চিম উপকুলীয় জনপদের এ অংশটি এখন চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, সুন্দরবন সংলগ্ন সীমান্তপথে চোরাচালানের বিষয়টি জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের কাছে ‘ওপন সিক্রেট’। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাঠ পর্যায়ে কর্মরতদের অনেকেই বিষয়টি অবগত। তারপরও নিয়ন্ত্রণ দূরের কথা অজ্ঞাত কারনে দিনে দিনে তা বেড়েই চলেছে। চোরাচালান পণ্যের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে মাঝে মধ্যেই সংঘর্ষ বাধছে। সুন্দরবন ও সংলগ্ন সীমান্তবর্তী কালিঞ্চি, গোলাখালী, কৈখালী, নৈকাটিসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার স্থানীয়দের পাশাপাশি চোরাকারবারীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্থলভাগ দিয়ে চোরাচালানের সুযোগ কম, ঝুঁকিও বেশি। তাই সীমান্তবর্তী কালিন্দি ও রায়মঙ্গল নদীকে চোরাকারবারীরা চোরাচালানের ‘মুল পয়েন্ট’ হিসেবে বেছে নিয়েছে।

কালিঞ্চি গ্রামের আবুল তরফদার জানান, বনদস্যুদের উপদ্রব না থাকায় সুন্দরবনের নৌপথ চোরাচালানের জন্য নিরাপদ। এছাড়া এ রুটে আইন শৃঙ্খল বাহিনীর টহলেরও ভয় থাকে না। এ সুযোগে ভারতীয় গরু, মাদকসহ নানা পণ্য নির্বিঘ্নে বাংলাদেশে ঢুকছে। একইভাবে বাংলাদেশকে থেকে ওষুধসহ নানা পন্য ভারতে পাচার হচ্ছে।

চোরাচালানের মালামাল পরিবহনে জড়িত কৈখালীর হারুন ও মাহতাব জানান, ভারতীয় চোরাকারবারীরা গরু ও মাদকের চালান কচুখালী, বকচরা, তালপট্রি ও হোগলডুরি এলাকায় রেখে যায়। বড় চালান রায়মঙ্গল এবং ছোট চালান কালিন্দি নদী সংলগ্ন পাঁচ নদীর মোহনা দিয়ে সুন্দরবনে ঢুকে যায়। স্থানীয় চোরাচালান চক্রের সদস্যরা মাছ বা কাঁকড়া শিকারের অজুহাতে স্পট থেকে সেই চালান সংগ্রহ করে। সুবিধাজনক সময়ে সেগুলো কৈখালী ও ভেটখালী স্লুইসগেট, আলম চেয়ারম্যান ও আব্দুর রহমানের বাড়ি ছাড়াও গোলাখালী, কালিঞ্চি এবং পশ্চিম কৈখালী বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা দিয়ে পাচার করে। এর আগে ভারতের শমসেরনগর, কালিতলা, ঘুমটে ও গোবন্দকাঠি থেকে মাদকের বস্তা এবং গরু নৌকায় উঠিয়ে দেয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চোরাকারবারীতে জড়িত কয়েকজন জানায়, পাঁচ নদীর মোহনা থেকে কিছুটা দূরত্বে বনবিভাগের কৈখালী স্টেশন, রায়নগর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি ও কৈখালী বিজিবি ক্যাম্প। এই অংশ দিয়ে চোরাচালানে ঝুঁকি রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগসাজশ করেই তারা চোরাচালানের কাজ করছে। এ কাজ নির্বিঘ্ন করতে তারা ‘লাইন ম্যান’ (বাঁধাহীন ভাবে মালামাল পরিবহন)’ দেয়। তাদের গরু প্রতি পাঁচশ থেকে দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজিবি কৈখালী ক্যাম্পের একজন কমান্ডার। তিনি বলেন, এমন অনৈতিক কাজের সঙ্গে বিজিবির কোন সদস্য জড়িত আছে এমন অভিযোগ এখন পর্যন্ত কেউ করেনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রায়নগর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাইদুল ইসলাম বলেন, চোরাকারবারীরা আগে এই রুট ব্যবহার করলেও এখন বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে তারা রায়মঙ্গল নদী হয়ে হোগলডুরি রুটে চলাচল করছে।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, জনবল সংকট থাকায় সব সময় অভিযান চালানো সম্ভব হয়না।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, সীমান্ত এলাকা নজরদারির জন্য বিজিবি, নৌ-পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী কাজ করছে।

Share