ছুটি হলো আরও ১৩০০ কারখানা

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে তৈরি পোশাক, নিটওয়ার ও অন্যান্য খাতের আরও ১ হাজার ২৮৫টি কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) ও বুধবার (১৯ এপ্রিল) এই দুই দিনে মোট ১ হাজার ৫৬৬টি কারখানায় ঈদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পাঞ্চল পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

শিল্পাঞ্চল পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, দেশের মোট ৯ হাজার ৬১৬টি কারখানায় শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে (বুধবার) পর্যন্ত তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানাসহ মোট ১২৮৫টি কারখানায় শ্রমিকদের ঈদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) ২৮১টি কল-কারখানায় শ্রমিকদের ঈদের ছুটি দেওয়া হয়।

শিল্প পুলিশ বলছে, কাজের প্রচণ্ড চাপ থাকায় এ বছর ৭৯টি কারখানায় ঈদের ছুটি দেওয়া হয়নি। তবে পরবর্তীতে ওইসব কারখানার শ্রমিকরা ঈদের ছুটি কাটাতে পারবেন।

সূত্র জানায়, দেশের আটটি শিল্পাঞ্চলের মধ্যে এক নম্বর অঞ্চল আশুলিয়ায় এক হাজার ৭৯২টি কারখানার মধ্যে ৩৫৮টি কারখানায় ঈদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। দুই নম্বর অঞ্চল গাজীপুরে ২ হাজার ৩৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০১টি কারখানায় ঈদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।

একইভাবে তিন নম্বর অঞ্চল চট্টগ্রামে এক হাজার ৪৮০টি কারখানার মধ্যে ৪৬৭টি কারখানায় ঈদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে দুই হাজার ২০৭টি কারখানার মধ্যে ১৭৮টি, ময়মনসিংহে ৪৯টি, খুলনায় ২৮৮টি ও সিলেটের ১২৫টি কারখানায় ঈদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) অফিস শেষে শুক্রবার (২১ এপ্রিল) থেকে বাকি সব কারখানায় ছুটি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা নেতারা।

তারা বলছেন, একসঙ্গে সব কল-কারখানা ছুটি হলে বাড়ি ফেরা নিয়ে শ্রমিকদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। তাই কারখানা মালিকদের অনুরোধ করা হয়েছে ধাপে ধাপে ও আগে পরে করে ছুটি দিয়ে দেওয়ার জন্য। কারখানা মালিকরাও সেই নির্দেশনা অনুসারে বেতন-বোনাস দিয়ে শ্রমিকদের ঈদের ছুটি ঘোষণা করছেন।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, যেসব কারখানায় অর্ডার কম রয়েছে শ্রমিকদের বেতন বোনাস দিয়ে তারা ঈদের ছুটি দিয়ে দিয়েছে। এবার আমরা বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানা মালিকদের বলেছি, ধাপে ধাপে ছুটি দিতে। যাতে শ্রমিকদের ভাই ও বোনদের যাতায়াতের ভোগান্তি কম হয়। তাই তারাও সেভাবে ছুটি দিচ্ছে।

তিনি বলেন, এবার ঈদের শ্রমিকরা লম্বা ছুটি পাবেন। অনেক কারখানা ঈদের এক সপ্তাহ পর অর্থাৎ ২৯ কিংবা ৩০ এপ্রিলও খুলবে। তবে যাদের অত্যন্ত সমস্যা তারা ২৫, ২৬ এপ্রিল কারখানা খুলবে।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, শ্রমিকরা যাতে সুন্দরভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সেজন্য এবার ধাপে ধাপে ঈদের ছুটি দেওয়া হচ্ছে। সবার বেতন-বোনাস দিয়েই সরকারি ছুটির সঙ্গে সমন্বয় রেখে ঈদের ছুটি দিয়েছে বেশ কিছু কারখানা।

এদিকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে পোশাক কারখানা বেশ কয়েকদিন বন্ধ থাকবে। এসময় কারখানায় থাকবেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ অবস্থায় কারখানায় যাতে কোনো অগ্নিদুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে বিজিএমইএ।

কারখানা বন্ধ থাকাকালে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে কারখানায় জরুরি ভিত্তিতে সাত পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে পোশাক মালিকদের এ সংগঠন। সোমবার (১৭ এপ্রিল) বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের সই করা এক চিঠিতে এসব সুপারিশ করা হয়।

সুপারিশগুলো হলো :-

১. কারখানা বন্ধ করার আগে একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে জেনারেটর, বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ, বয়লার, এসি, কম্পিউটার, সব ফ্লোরের মেশিনারিজ, লাইট, ফ্যান, আয়রন ও ইলেকট্রিক হিটার/কেটলি ইত্যাদি বন্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা। নিরাপত্তার স্বার্থে শুধুমাত্র রাতে জরুরি বাতি জ্বালানো যাবে।

২. কারখানার মালামালের নিরাপত্তার স্বার্থে মূল গেটসহ ভবনের সব দরজা ও জানালা ইত্যাদি বন্ধ রাখা।

৩. জরুরি অবস্থা (অগ্নিদুর্ঘটনা বা যেকোনো দুর্ঘটনা) ও পুরো কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকির জন্য সার্বক্ষণিকভাবে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে প্রশিক্ষিত সিকিউরিটি গার্ড নিযুক্ত রাখা।

৪.তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নির্বাপণ করার জন্য কারখানায় প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, পানি ভর্তি ড্রাম, বালতি ও হোজরিল/হাইড্রেন্টসমূহ কার্যকর আছে কি না তা পরীক্ষা করা।

৫. যেকোনো ধরনের নিরাপত্তার জন্য কারখানার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় রাখা ও সেগুলো সার্বক্ষণিকভাবে চালু রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা।

৬. যেকোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য সিকিউরিটি গার্ডকে অবশ্যই নিকটস্থ থানা ও জরুরি সেবার নম্বর হাতের কাছে রাখার নির্দেশ দেওয়া।

৭. কারখানা খোলার পর সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, এসি, জেনারেটর, বয়লার ও কমপ্রেসর ইত্যাদি চালু করার আগে পরীক্ষা করে নেওয়া। বিশেষ করে বয়লার চালু করার আগে সব ইনলেট-আউটলেটের ভাল্ব পরীক্ষা করে নেওয়া।

Share