টাঙ্গাইলে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করা কলেজ ছাত্রী এশার রহস্যজনক মৃত্যু

টাঙ্গাইল প্রতিবেদক : টাঙ্গাইল-২ আসনের এমপি তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা কলেজছাত্রী মির্জা আফরোজ এশার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (১৮ নভেম্বর) বিকালে টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের বোয়ালী এলাকার নিজ বাসার তৃতীয়তলার একটি কক্ষ থেকে এশার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এশা বোয়ালী এলাকার মৃত লতিফ মির্জার মেয়ে।

পুলিশের ধারণা, এশা আত্মহত্যা করেছেন। এশার পরিবারের সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে এশার মৃত্যুর বিষয়টিকে সন্দেহজনক বলে মনে করছেন তার প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা।

টাঙ্গাইল মডেল থানার ওসি আবু ছালাম মিয়া জানান, এশার লাশ তার বাসার নিজ রুমে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে- এমন খবরের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

এশার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দীন স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, দুপুরে এশার কক্ষ থেকে তার সন্তানের কান্নার আওয়াজ পান পাশের বাসার এক নারী। তিনি আশপাশের লোকজনকে জানালে তারা পুলিশের খবর দেন। পুলিশের একটি দল ক্রাইম সিন পরিদর্শন করছে। তাদের পরিদর্শন থেকে এশার লাশ ঘর থেকে বের করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চলতি বছরের ৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল মডেল থানায় বড় মনির ও তার স্ত্রী নিগার আফতাবের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন এশা। মামলা দায়ের করার সময় তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এ ঘটনায় টাঙ্গাইলসহ সারা দেশে আলোড়ন ওঠে। মামলার এজাহারে এশা অভিযোগ করেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধ সমাধানের জন্য তিনি বড় মনিরের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে এশাকে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালতপাড়ায় বড় মনির বাড়ির পাশে একটি ফ্ল্যাটে যেতে বলেন। সেখানে গেলে এশাকে একটি কক্ষে প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। এরপর বড় মনির সেই কক্ষে ্এসে এশাকে ধর্ষণ করেন এবং সেই ছবি তুলে রাখেন। এ কথা কাউকে জানালে হত্যার হুমকিও দেন। এরপর ওই ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে আরও একাধিকবার এশাকে ধর্ষণ করেন বড় মনি।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ধর্ষণের পর এশা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বড় মনি তাকে গর্ভপাতের জন্য চাপ দেন। রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে এশাকে আদালতপাড়ায় নিজ শ্বশুরবাড়িতে তুলে নিয়ে যান বড় মনি। ওই বাসার একটি কক্ষে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখানোর পরও গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় এশাকে ফের ধর্ষণ করেন। এরপর বড় মনির স্ত্রী এশাকে মারধর করেন। পরে অসুস্থ অবস্থায় গভীর রাতে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয় এবং অব্যাহত হুমকি দেওয়া হতে থাকে।

মামলা দায়ের হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোড়ন ওঠে। হাইকোর্টে আবেদন করে চার সপ্তাহের আগাম জামিন নেন বড় মনি। গত ৩০ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে চেম্বার আদালত জামিন স্থগিত করে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী গত ১৫ মে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর মধ্যে গত ২৭ জুন এশা এক সন্তানের জন্ম দেন। পরে ১১ জুলাই হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তিনি। কিন্তু পরদিনই রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে সেই জামিনাদেশ স্থগিত করে সন্তানের পিতৃপরিচয় নিশ্চিতের জন্য ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেন চেম্বার আদালত।

গত ২৮ আগস্ট ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে এশা অভিযোগ করেন, ক্ষমতা খাটিয়ে বড় মনি ডিএনএ রিপোর্ট পাল্টে দিতে পারেন। হুমকি-ধমকির পরও সন্তানের অধিকার নিশ্চিতের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন এশা।

তবে আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দায়ের করা ডিএনএ রিপোর্ট অনুযায়ী, এশার নবজাতকের সঙ্গে বড় মনিরের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়নি। এর ভিত্তিতে গত ৯ অক্টোবর হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রাখার আদেশ দেন আপিল বিভাগ। বড় মনির বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

Share