ট্রাম্পকে গ্রেপ্তারের পর কী হতে পারে

বিবিসি : সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন। সাবেক পর্ন তারকাকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় এখন তাঁর গ্রেপ্তার অনিবার্য। ইতিমধ্যে ট্রাম্পকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। ট্রাম্প কীভাবে আত্মসমর্পণ করবেন, গ্রেপ্তার হলে তাঁর সঙ্গে অন্য আসামিদের মতো করেই আচরণ করা হবে কি না, ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা চালিয়ে যেতে পারবেন কি না, এসব নিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় সাবেক পর্ন তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলসকে তাঁর পক্ষ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দেওয়া হয়েছিল। স্টরমি ড্যানিয়েলসের দাবি, ২০০৬ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে এ নিয়ে মুখ না খুলতে তাঁকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন তাঁকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন।

ট্রাম্প কবে ও কীভাবে আত্মসমর্পণ করবেন : স্টরমিকে ঘুষ দেওয়ার ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বটি ছিল নিউইয়র্ক সিটির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্র্যাগের ওপর। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য তিনি গ্র্যান্ড জুরি গঠন করেন। গতকাল বিকেলে এ জুরি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সিদ্ধান্ত জানায়। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে, তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

এখন আলোচনার ভিত্তিতে ব্র্যাগ জানিয়ে দেবেন, কীভাবে এবং কখন ট্রাম্প গ্রেপ্তার এবং প্রথম শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য নিউইয়র্ক সিটিতে যাবেন। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলেছে, আগামী মঙ্গলবার ট্রাম্প আদালতে যেতে পারেন।

আদালতে বিচারপতি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগগুলো না পড়ে শোনানো পর্যন্ত অভিযোগগুলো প্রকাশ করা হবে না।

ট্রাম্পের আইনজীবীরা ইঙ্গিত করেছেন, নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষকে ট্রাম্প সহযোগিতা করবেন। সুতরাং, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হবে না।

ট্রাম্পের নিজস্ব মালিকানাধীন উড়োজাহাজ আছে। তিনি সে উড়োজাহাজে করে নিউইয়র্কের কোনো একটিতে অবতরণ করতে পারেন। এরপর গাড়িতে করে ম্যানহাটনের আদালত প্রাঙ্গণে যেতে পারেন।

ট্রাম্পকে গ্রেপ্তারের পর কি তাঁর আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে : অন্য আসামিদের মতো ট্রাম্পকে হয়তো সংবাদকর্মীদের সামনে দিয়ে হেঁটে হেঁটে আদালতে প্রবেশ না–ও করতে হতে পারে। বরং কৌঁসুলিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আদালত হয়তো তাঁকে গোপনে প্রবেশের সুযোগ দিতে পারেন।

ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত অন্য আসামিদের মতো করেই ট্রাম্পের আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে এবং মুখের ছবি তোলা হবে। ট্রাম্প তাঁর ‘মিরান্ডা রাইটস’–এ পড়বেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া হবে যে সাংবিধানিকভাবে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার অধিকার তাঁর আছে। তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন।

ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত আসামিদের সাময়িকভাবে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়। তবে ট্রাম্পের আইনজীবীরা চেষ্টা করবেন তাঁদের মক্কেলের ক্ষেত্রে যেন এমনটা না হয়। গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলার সময় গোয়েন্দা কর্মীরা তাঁর সঙ্গে থাকবেন।

এরপর আদালতে বিচারপতির সামনে না তোলা পর্যন্ত তাঁকে হাজতখানায় আটক রাখা হবে। আদালতে আসামিরা যখন বিচারপতির কাছে নিজেদের আরজি পেশ করেন, সে সময় যে–কেউ সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন।

মামলা নথিভুক্ত হওয়া এবং একজন বিচারপতি নির্বাচিত হওয়ার পর অন্য কাজগুলো করা হয়ে থাকে। যেমন বিচার কাজের জন্য সময় নির্ধারণ, আসামির জন্য সম্ভাব্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং জামিন আবেদনের প্রস্তুতি।

ফৌজদারি অপরাধে ট্রাম্প যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তাঁর সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। যদিও আইন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, ট্রাম্পের জরিমানা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাঁকে কারাবন্দী রাখার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন তাঁরা।

আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির হয়ে আবারও প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে অভিযুক্ত হওয়া কিংবা ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেও ট্রাম্প চাইলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য তাঁর প্রচারণা চালিয়ে যেতে পারবেন। ইতিমধ্যে ট্রাম্পও ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা কিছুই হোক না কেন, তিনি তাঁর কাজ চালিয়ে যাবেন।

অপরাধে দোষী সাব্যস্ত কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ করে দেওয়া কিংবা তাঁকে প্রেসিডেন্ট হতে না দেওয়ার মতো কোনো আইন যুক্তরাষ্ট্রে নেই। এমনকি ওই ব্যক্তি জেলে থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে ট্রাম্প গ্রেপ্তার হলে নিশ্চিতভাবেই তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার ওপর প্রভাব পড়বে। কারণ, তিনি ঠিকঠাক মতো প্রতারণায় অংশ নিতে পারবেন না। বিতর্কেও অংশ নিতে পারবেন না।

Share