ঢাকার ৪০% বহুতল ভবনে এডিস মশা : জরিপ

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার চেয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিস মশার উপস্থিতি কিছুটা বেশি। সেইসঙ্গে যেসব বাড়িতে এই মশা পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ বহুতল ভবন এবং ৩২ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক জরিপের ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই জরিপ চালায়।

রাজধানীর মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে বৃহস্পতিবার জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, জরিপের অন্তর্ভুক্ত ঢাকার চার শতাংশের বেশি বাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি রয়েছে। আর এই এডিস মশাই ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার চেয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিসের উপস্থিতি কিছুটা বেশি।

জরিপের তথ্য তুলে ধরে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ১০৮টি ওয়ার্ডে চালানো হয় এই জরিপ। এর মধ্যে উত্তর সিটির ৪০টি এবং দক্ষিণ সিটির ৫০টি ওয়ার্ডের ৩ হাজার ১৫০টি বাড়িকে জরিপের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জরিপে ১২৭টি বাড়িতে এডিস মশা মিলেছে, যার শতকরা হার ৪ দশমিক ০৩ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে এডিস মশা ৩ দশমিক ৮ শতাংশ আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এই হার ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।

কোনো এলাকায় এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি হিসাব করা হয় ব্রুটো ইনডেক্সের মাধ্যমে। এই ইনডেক্স ২০ এর বেশি হলেই তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। ঢাকা উত্তর সিটির কোনো ওয়ার্ডে মশার ব্রুটো ইনডেক্স ২০ পাওয়া যায়নি। ৩, ২৩, ২৬ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ছিল ১০ এর বেশি। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ২৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। এছাড়া ২, ১৬ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রটো ইনডেক্স ১০ এর বেশি পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর সাংবাদিকদের বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। এ কারণে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা জরুরি। এ জরিপের কারণে কোন কোন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ তা জানা যাবে। সে অনুযায়ী সিটি করপোরেশন প্রস্তুতি নিতে পারবে।

অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা দেশে ৯০১ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। কেবল ডিসেম্বরেই পাঁচ হাজার ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, মৃত্যু হয়েছিল ২৭ জনের।

ড. কবিরুল বাশার বলেন, বর্ষা পরবর্তী জরিপ দিয়ে মশার উপদ্রব কেমন হবে তা বোঝা যায় না। কারণ এ সময় বৃষ্টি কম থাকে। এপ্রিল-মে মাসে যে জরিপ হবে তার ফলাফল দিয়ে বোঝা যাবে এ বছর পরিস্থিতি কেমন হবে। সেজন্য অতি দ্রুত বর্ষা পূর্ববর্তী জরিপ করতে হবে।

Share