বিনোদন প্রতিবেদক : ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রুনা খান। ভিন্নধারার বেশ কিছু সিনেমায় কাজ করে পেয়েছেন সফলতা। সম্প্রতি ৩৯ কেজি ওজন কমিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। নতুনরূপে নিজেকে প্রস্তুত করা, সাম্প্রতিক ব্যস্ততা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তার সঙ্গে।
১০৫ থেকে ৬৬- এক বছরে ৩৯ কেজি ওজন কমিয়ে নিজেকে পুরোপুরি বদলে নিয়েছেন। কীভাবে সম্ভব হলো?
কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। ২০১৯ সালে এসে আবিষ্কার করলাম- যাদের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু মনে করি; দিনের পর দিন, বছরের পর বছর তাদের দ্বারাই মানসিকভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছি। ডিপ্রেশন পেয়ে বসত, যেজন্য মূল কাজে ফোকাস রাখতে পারতাম না। ততদিনে দেখলাম, আমার ওজন হয়ে গেছে ১০৫ কেজি! একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাকে টক্সিক মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। যাদের তথাকথিত বন্ধু ভাবছি, তাদের কাছ থেকে সরে আসতে হবে।
রুটিন পরিবর্তনের সঙ্গে তো খাবারের তালিকাও বদলাতে হয়েছে?
হ্যাঁ। প্রতিদিন সকালে খাবারের তালিকায় থাকত দুটি ডিম। এরপর যেকোনো একটি ফল খেতাম। পরে ব্ল্যাক কফি খেয়ে এক ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি। দুপুরে এককাপ ভাত, একবাটি সবজি, বড় এক টুকরো মাংস অথবা মাছ। বিকেলে মুঠো পরিমাণ বাদাম ও ব্ল্যাক কফি এবং এক ঘণ্টা ইয়োগা করতাম। রাতের খাবারে থাকত বড় এক বাটি সবজি, এক টুকরো মাছ বা মুরগির মাংস এবং একগ্লাস দুধ।
সম্প্রতি একটি ওয়েব সিনেমায় কাজ করেছেন। সেটি নিয়ে কিছু বলুন।
সিনেমার নাম ‘আন্তঃনগর’। নির্মাণ করেছেন গৌতম কৈরি। এই নগরের ইট-পাথরে মিশে থাকা আনন্দ-বেদনার কিছু গল্প উঠে এসেছে ওয়েব সিনেমাটিতে। আশা করছি, দর্শকের ভালো লাগবে।
হাতে থাকা অন্যান্য সিনেমার কী খবর?
এরই মধ্যে চারটি সিনেমার কাজ করেছি। এগুলো হলো- কৌশিক শংকর দাসের ‘দাফন’, রুবেল আনুশের ‘উধাও’, পঙ্কজ পালিতের ‘একটি না বলা গল্প’ ও তৌফিক এলাহির স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘নীলাম্বরী’।
সিনেমায় গতানুগতিক ধারার বাইরের গল্পেই কাজ করতে দেখা যায় আপনাকে। এ নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা থাকে?
অনেক বাছবিচার করে সিনেমায় অভিনয় করি তা নয়; আমার অভিনীত সিনেমাগুলো যদি দর্শকের ভিন্ন ধাঁচের মনে হয়, তবে সে কৃতিত্ব নির্মাতার। ‘হালদা’, ‘গহিন বালুচর’, ‘কালো মেঘের ভেলা’, ‘ছিটকিনি’, ‘সাপলুডু’সহ যেসব ছবিতে অভিনয় করেছি, সেসব ছবির চরিত্রের জন্য নির্মাতারাই আমাকে নির্বাচন করেছেন। এদিক থেকে আমি ভাগ্যবান যে, ভালো কিছু নির্মাতার ভিন্ন ধরনের গল্পে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি।
‘মাশরাফি জুনিয়র’ নাটকটি নিয়ে দর্শকের সাড়া কেমন পাচ্ছেন?
দীর্ঘ ধারাবাহিকের গল্প ও চরিত্রে নতুনত্ব না থাকলে দর্শক ধরে রাখা কঠিন। সেদিক থেকে বলতে গেলে, গল্পই এ নাটকের প্রাণ। আর গল্প ভালো হলে শিল্পীরা যে নিজের সেরাটা তুলে ধরতে পারেন, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ‘মাশরাফি জুনিয়র’। দর্শক-সাড়া না পেলে পাঁচশর বেশি পর্ব বাড়ানো হতো বলে মনে হয় না। এখন পর্যন্ত যারাই নাটকটি দেখেছেন, তারাই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
সব বাধা ডিঙিয়ে এক অসম্ভব স্বপ্নছোঁয়ার গল্পের নাটক এটি। নির্মাতা সাজ্জাদ সুমনের এই কথার সঙ্গে আপনি কি একমত?
এখানে দ্বিমতের কিছু নেই। কারণ ‘মাশরাফি জুনিয়র’ নাটকে সব বাধা ডিঙিয়ে সাফল্য ছিনিয়ে আনার গল্পই তুলে ধরা হয়েছে। মন্ডা ও মনি নামে যে দুই কিশোর ভাইবোনকে আমরা নাটকে দেখছি, তাদের একজন বড় ক্রিকেটার হতে চায়, অন্যজন সেই স্বপ্নকে সফল করার সাহস জোগায়। কিন্তু আমাদের সমাজ-সংসারে কোনো চাওয়া সহজে পূরণ হয় না। তার জন্য ডিঙাতে হয় অসংখ্য বাধার দেয়াল। পরাজয় না মেনে কীভাবে মন্ডা ও মনি বাধার দেয়াল পেরোতে চাচ্ছে- সেটাই দর্শক নাটকে দেখছেন।
জীবন নিয়ে আপনার উপলব্ধি কী?
একজন কন্যা, মা, মেয়ে, স্ত্রী হিসেবে আমি ধন্য। আমার মা-বাবা মনে করেন আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান, মেয়ের কাছে আমি শ্রেষ্ঠ মা। স্বামী মনে করেন অসাধারণ স্ত্রী। পাশাপাশি কর্মজীবনের জন্যও কিছু মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। নিজের মতো জীবনটা চালিয়ে নিচ্ছি। এক জীবনে সুখে থাকার জন্য আর কী লাগে বলেন?
সহশিল্পীরা তো রুনা খানকে ভীষণ রকমের ভালোবাসেন…
জীবনটা ভীষণ ছোট। এই সময়ে আমি একটি মানুষকেও আহত করতে চাই না। মন খারাপ করে দিতে চাই না। আমার কাছের মানুষদের ভালোবাসতে, তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগে। এটা আমার মায়ের কাছ থেকে শেখা। সহশিল্পীদের কাছ থেকে সবসময় অন্যরকম ভালোবাসা পাই।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কোনো আফসোস আছে?
আমার কোনো আফসোস নেই। যতটুকু পেয়েছি, তাতেই খুশি। আমি কেন প্রথম সারিতে নই, আমাকে এটা করতে হবে, সেটা করতে হবে- এসব নিয়ে কখনো ভাবি না। শুরুটা কোথা থেকে করেছি, সেটা মনে করি। এক জীবনে সব পেয়েছি, এর বেশি কিছু চাই না।