নয়াবার্তা প্রতিবেদন : ক্রমশ ‘কর্তৃত্ববাদী শাসনের’ কবলে পড়া রাশিয়ায় ক্ষমতাসীনদের অনিয়ম–দুর্নীতির খবর প্রকাশ করে চলেছে নোভায়া গেজেটা। এই পথচলায় গত দুই দশকে খুন হয়েছেন তাদের ছয়জন সাংবাদিক। তারপরেও পত্রিকাটির সম্পাদকীয় নীতিতে পরিবর্তন আসেনি। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জনগণের পক্ষে কথা বলার সাহসী অবস্থানের জন্য পত্রিকাটির সম্পাদক দিমিত্রি আন্দ্রেয়েভিচ মুরাতভ পেলেন বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্মান।
নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি আজ শুক্রবার এ বছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য যে দুজন সাংবাদিকের নাম ঘোষণা করেছে, তাঁদের একজন ৫৯ বছর বয়সী দিমিত্রি আন্দ্রেয়েভিচ মুরাতভ।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নোভায়া গেজেটার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন দিমিত্রি মুরাতভ। ১৯৯৩ সালে পত্রিকাটি আত্মপ্রকাশের পর প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। রাশিয়ার শাসকগোষ্ঠী, বিশেষত প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত যে কয়েকটি পত্রিকা দেশটিতে অবশিষ্ট রয়েছে, নোভায়া গেজেটা সেগুলোর একটি।
এই পুরস্কারের জন্য দিমিত্রি মুরাতভকে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে নরওয়ের আইনজীবী ও নোবেল পিস প্রাইজ কমিটির চেয়ারপারসন বেরিট রেইস–অ্যান্ডারসন বলেছেন, একের পর এক সহকর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার এবং নানা হুমকি পাওয়ার পরেও মুরাতভ প্রধান সম্পাদক হিসেবে তাঁর পত্রিকার স্বাধীন সাংবাদিকতার নীতি পরিহার করেননি। সাংবাদিকতার নৈতিক ও পেশাগত মানদণ্ড বজায় রেখে সাংবাদিকেরা যা লিখতে চেয়েছেন, তা লেখার অধিকার রক্ষায় তিনি ধারাবাহিকভাবে কাজ করে গেছেন।
রেইস–অ্যান্ডারসন বলেন, ‘মুক্ত, স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা হলো ক্ষমতার অপব্যবহার, মিথ্যা আর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া আমাদের সময়ে জাতিতে জাতিতে ভ্রাতৃত্ব এগিয়ে নেওয়া, নিরস্ত্রীকরণ এবং একটি উন্নত বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা কঠিন হবে।’
দিমিত্রি মুরাতভের নোভায়া গেজেটা সপ্তাহে তিনবার প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকায় নিয়মিতভাবে ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি ও অন্যান্য অনিয়মের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের শিকার ব্যক্তিদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরা হয় সেখানে।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার কমিটির চেয়ারপারসন বেরিট রেইস–অ্যান্ডারসন ২০২১ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণার সময় দুই সাংবাদিকের ছবি মোবাইলে দেখান। আজ নরওয়ের রাজধানী অসলোতে
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার কমিটির চেয়ারপারসন বেরিট রেইস–অ্যান্ডারসন ২০২১ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণার সময় দুই সাংবাদিকের ছবি মোবাইলে দেখান। আজ নরওয়ের রাজধানী অসলোতেছবি: এএফপি
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিমিত্রি মুরাতভ কয়েক দশক ধরে রাশিয়ায় বাক্স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করছেন। দেশটিতে সাংবাদিকতা করা দিন দিন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিলেও তিনি সাহসের সঙ্গেই নানা অন্যায়-অনাচারের তথ্য প্রকাশ করে যাচ্ছেন তাঁর পত্রিকায়।
চেচনিয়া যুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনা জনসমক্ষে এনেছিলেন এই পত্রিকার সাংবাদিক আন্না পোলিতকোভসকায়া। এর জন্য তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে। তাঁর মতো পত্রিকাটির আরও পাঁচজন সাংবাদিক তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য খুন হয়েছেন বলে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) তথ্য।
দিমিত্রি মুরাতভ ১৯৬১ সালের ৩০ অক্টোবর রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুয়িবশেভ–এ (বর্তমানে সামারা নামে পরিচিত) জন্মগ্রহণ করেন। মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ফিলোলজি (ভাষাতত্ত্ব) নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। এ সময়ই সাংবাদিকতায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন দিমিত্রি মুরাতভ। জনপ্রিয় দৈনিক কমসোমলস্কায়া প্রাভদায় তাঁর সাংবাদিকতা শুরু। তবে পত্রিকাটির সম্পাদকীয় নীতি নিয়ে অসন্তোষ থেকে কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। ওই সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়েই শুরু করেন নতুন লড়াই। বের করেন নোভায়া গেজেটা।