নাইজারে অভ্যুত্থানের পর রাশিয়াকে কেনো স্বাগত জানাচ্ছে দেশটির মানুষ?

নয়াবার্তা ডেস্ক : নাইজারে অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটির সঙ্গে পশ্চিমাদের দূরত্ব বেড়েই চলেছে। সামরিক বাহিনী ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে একটানা কথার যুদ্ধ চলছে। এরইমধ্যে দেখা যাচ্ছে, নাইজারের রাস্তায় রাশিয়ার পতাকা নিয়ে নেমে আসছে সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ রাশিয়ার পতাকা দিয়ে বানানো পোশাক পরে চলাফেরা করছেন। অনেককেই দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার পতাকা আঁকা ক্যাপ পরছেন কিংবা কারও কারও জামায় রাশিয়ার পতাকা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ছবি রয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, গত ২৬শে জুলাই ক্ষমতাচ্যুত করা হয় নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে। এরপরই দেশজুড়ে রাস্তায় দেখা যেতে শুরু করে রাশিয়ার পতাকা কিংবা রুশ নানা প্রতীক। রাশিয়ার পতাকায় থাকা সাদা, লাল ও নীল রঙের ব্যবহারও দেখা যাচ্ছে। গত রোববার রাজধানী নিয়ামেতে জড়ো হন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। তাদের হাতে ছিল রাশিয়ার পতাকা। ওই সমাবেশ থেকে নাইজারে থাকা ফরাসি দূতাবাসেও হামলার চেষ্টা করা হয়।
এখন গোটা নাইজারজুড়েই এই আন্দোলন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

দেশটির নাগরিকদের মধ্যে যে পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে, নানাভাবে তার প্রকাশ ঘটছে। রাশিয়ার পতাকা দিয়ে জামা বানিয়ে পরা নাইজারের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। তিনি বৃটিশ গণমাধ্যমটিকে বলেন, আমি রাশিয়াপন্থী এবং আমি ফ্রান্স পছন্দ করি না। একদম ছোট বেলা থেকে আমি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ছিলাম। কারণ, ফরাসিরা ইউরেনিয়াম, পেট্রোল ও সোনার মতো নাইজারের বিশাল খনিজ সম্পদ লুট করেছে। এত সম্পদ থাকার পরেও আমার দেশের মানুষ তিন বেলা খেতে পারছে না। আর এর জন্য দায়ী ফ্রান্স।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই ব্যবসায়ী আরও জানান, সোমবারের বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ যোগ দিয়েছে। তারা সকলেই এই সামরিক অভ্যুত্থানের পক্ষে। তিনি নিজে স্থানীয় এক দর্জিকে দিয়ে রাশিয়ার পতাকার মতো করে জামা বানিয়েছেন। তবে কোনো রাশিয়াপন্থী সংগঠনের থেকে এ জন্য তিনি অর্থ পাননি।

নাইজারের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাজুম ছিলেন পশ্চিমা দেশগুলোর পরম মিত্র। নাইজারে আছে ফ্রান্সের বড় একটি সামরিক ঘাটি। ইউরেনিয়াম উৎপাদনে নাইজারের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম। ইউরোপ বিশেষ করে ফ্রান্সের ইউরেনিয়ামের চাহিদার বড় অংশটিই মেটাতো নাইজার। আফ্রিকার দেশগুলোকে দীর্ঘ সময় উপনিবেশ বানিয়ে রেখেছিল ফ্রান্স। ফ্রান্সের থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পরেও আফ্রিকানদের নানাভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। আর এতেই আফ্রিকার দেশগুলোতে ফ্রান্সবিরোধী মনোভাব অত্যন্ত শক্তিশালী।

ব্যাপক প্রাকৃতিক সম্পদ থাকলেও নাইজারের জনগন এ থেকে উপকৃত হতে পারছে না। প্রায় ২.৫ কোটি মানুষের দেশটির নাগরিকরা অত্যন্ত দরিদ্র। প্রতি পাঁচ জনের দুই জনই চরম দারিদ্র্যতার মধ্যে বাস করেন। তাদের প্রতিদিনকার আয় ২৫০ টাকারও কম। সম্প্রতি নাইজারের প্রতিবেশী বুরকিনা ফাসো ও মালিতেও পশ্চিমাপন্থী সরকারকে থেকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে সামরিক বাহিনী। এসব দেশেও ফ্রান্সের বড় স্বার্থ রয়েছে।

নাইজারের মতো এসব দেশেও একসময় ফ্রান্সের ব্যাপক সেনা সদস্য ছিল। কিন্তু গোটা অঞ্চল ক্রমশ ফ্রান্সের বিষয়ে অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। ফ্রান্সের সেনারা এসব দেশে থাকলেও সন্ত্রাসবাদ দমনে তারা কার্যকরি ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়। মালিতে ক্ষমতা দখলের পরই রাশিয়ার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি ওয়াগনারকে স্বাগত জানায় দেশটির সেনাবাহিনী। ফ্রান্সের সেনাদের জোর করে মালি ছাড়া করা হয়। আর সন্ত্রাসবাদ দমনের দায়িত্ব দেয়া হয় ওয়াগনারকে।

একই পথে হাটছে বুরকিনা ফাসোও। তারাও দেশ থেকে ফরাসি সেনাদের বের করে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাজুমের অধীনে নাইজারের মানুষ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বহুবার প্রতিবাদের চেষ্টা করেছে। তবে তিনি নাইজারে ফ্রান্সবিরোধী প্রতিবাদ সমাবেশ নিষিদ্ধ করেন। বহু সমাবেশ দমনে কঠোর পথ বেছে নেয় বাজুমের প্রশাসন।

এখন বাজুমের সরকারকে উৎখাতের পর অনেকেই নাইজারের ভবিষ্যত নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছেন। রাশিয়ার পতাকা দিয়ে পোশাক বানিয়ে পরা সেই ব্যবসায়ী বিবিসিকে বললেন, তিনি মনে করেন রাশিয়া তার মাতৃভূমিকে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, আমি চাই রাশিয়া আমাদের নিরাপত্তা ও খাদ্য দিয়ে সাহায্য করুক। রাশিয়া চাইলে প্রযুক্তি সরবরাহ করে আমাদের কৃষিকে আরও উন্নত করতে পারে।

Share