নিয়াজ গার্মেন্টসের চেয়ারম্যানের বাড়ী ক্রোকের শোকজ নোটিশ জারির আদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি : অবশেষে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ, তৃতীয় অর্থ ঋণ আদালত নিয়াজ গার্মেন্টস ইন্ড্রাষ্ট্রিজ প্রাইভেট লিঃ এর বহুল আলোচিত পলাতক চেয়ারম্যান রোকসানা পারভীনের রাজধানীর ৩৬/২ কাকরাইলস্থ আড়াই কাঠা ভূমি এবং তদোপরিস্থিত সাড়ে ৬ তলা ভবন ক্রোকের জন্য শোকজ নোটিশ জারির আদেশ দিয়েছে। বেসরকারি ন্যাশনাল ক্রেডিট এন্ড কমার্স ব্যাংক পিএলসি (এনসিসিপিএলসি) এর ২০০২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি অর্থঋণ আদালতে দায়েরি ৯/২০০২ নং মানি মোকদ্দমায় প্রাপ্ত ডিগ্রির সূত্রে একই আদালতের ৮৪/০৩ নং অর্থ জারী মোকদ্দমায় আজ বুধবার আদালত এই আদেশ দেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, “নিয়াজ গার্মেন্টসর প্রাঃ লিঃ ৩৫/২, কাকরাইল, থানা:- মতিঝিল, জেলা:- ঢাকার ঠিকানা ব্যবহার করে তাদের ২৩৪/১ কঁচুক্ষেত, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ঠিকানার কারখানাটি এনসিসি ব্যাংকের মগবাজার শাখায় মর্টগেজ রেখে ১৯৯৮ সালে ২২ লাখ ৯ হাজার ১৪১ ডলার অর্থাৎ তৎকালীন বাংলাদেশী মূদ্রায় ৬৭ লাখ ৭৯ হাজার ৭৭৪ টাকা মূল্যের পৃথক ৫টি এলসি খোলে। এসব এলসির বিপরীতে শিপিং ডকুমেন্ট আসলে নিয়াজ গার্মেন্টস চট্রগ্রাম বন্দর হতে মালামাল ছাড়িয়ে নেয়। অতঃপর হঠাৎ নিয়াজ গার্মেন্টস তাদের কঁচুক্ষেত ঠিকানার কারখানা রাতের অন্ধকারে গুটিয়ে ফেলে। পরবর্তী ৩ বছরে ব্যাংক ঋণের টাকা ফেরৎ না পেয়ে ২০০২ সালে নিয়াজ গার্মেন্টসের নিকট সুদাসলে পাওনা ৮৪ লাখ ১০ হাজার ৫৭৪ টাকার ঋণ আদায়ে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ, তৃতীয় অর্থ ঋণ আদালতে ২০০২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মানি মোকদ্দমা নং- ৯/২০০২ দায়ের করে। এই মোকদ্দমায় ডিগ্রি পাবার পর ব্যাংক একই আদালতে ৮৪/০৩ নং অর্থ জারী মোকদ্দমা দায়ের করে। উক্ত মোকদ্দমায় ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে বিবাদীদের অন্য কোন জমি বা সম্পত্তি মর্টগেজ না থাকায় এবং নিয়াজ গার্মেন্টসের নিকট বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণের টাকা আদায়ে কোম্পানির চেয়ারম্যানের দৃশ্যমান সম্পত্তি ঢাকার অতিরিক্ত জেলা জজ ও দেউলিয়া বিষয়ক আদালতের ৪/১৯৯৯ নং মোকদ্দমায় আদালতের নিয়ন্ত্রনাধীন থাকায় এনসিসি ব্যাংকের অর্থ জারি ৮৪/২০০৩ নং মোকদ্দমায় বিবাদীদের সম্পত্তি ক্রোক করে নিলাম বিক্রয় কার্যক্রম সম্ভবপর হয়নি। যে কারণে অর্থ ঋণ আদালত বিগত ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর তারিখে ফৌজদারী কার্যবিধির ৭৫ ধারায় নিয়াজ গার্মেন্টসের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির আবেদন মঞ্জুর করেন। গ্রেফতারী পরোয়ানাটি বিগত ২০০৯ সালের ১ আগস্ট তারিখে পল্টন থানায় পৌঁছায়। উক্ত অর্থ জারি মোকদ্দমায় নিয়াজ গার্মেন্টসের ঠিকানা ৩৫/২ কাকরাইল, থানা;- মতিঝিল, উল্লেখ থাকায় গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল করতে এসে স্থানীয় পুলিশ দেখতে পায় যে, এই ঠিকানায় নিয়াজ গার্মেন্টস ইন্ড্রাষ্ট্রিজ (প্রাঃ) লিঃ কোম্পানীর কোন অস্তিত্ব নেই এবং পূর্বেও কখনো ছিলোনা। পরবর্তীতে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা সিটি জরিপকালে ৩৫/২ কাকরাইল, থানা;- মতিঝিল, ঢাকা, হোল্ডিং ঠিকানাটি ৩৬/২ কাকরাইল, থানা:- পল্টন, ঢাকা-১০০০ মর্মে রূপান্তরিত হয়। নিয়াজ গার্মেন্টস ইন্ড্রাষ্ট্রিজ (প্রাঃ) লিঃ কোম্পানীর চেয়ারম্যান রোকসানা পারভীন ও তার স্বামী মুজিব বাহিনী থেকে রক্ষী বাহিনী হয়ে সেনা বাহিনীতে আত্মীকরনের পর মেজর পদে অবসরপ্রাপ্ত কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মাজেদুর রহমান এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে হাত করে উক্ত গ্রেফতারী পরোয়ানা এড়িয়ে ৩৬/২ কাকরাইল (দ্বিতীয় তলা), থানা:- পল্টন, ঢাকা-১০০০ ঠিকানায় বহাল তবিয়তে বসবাস অব্যাহত রাখেন। গ্রেফতারী পরোয়ানাটি ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর তারিখ অবধি কার্যকর না হওয়ায় অর্থঋণ আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা কার্যকর হওয়া সাপেক্ষে নথী উপস্থাপনের আদেশ দেয়। অতঃপর ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর হতে মোকদ্দমাটি স্থগিত হওয়ায় এক পর্যায়ে নিষ্কৃয় হয়ে যায়।
পরবর্তীতে এনসিসি ব্যাংক এক সাংবাদিকের দালিলিক সহায়তায় পুণরায় ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর অর্থঋণ আদালতে স্থগিত অবস্থায় থাকা ৮৪/২০০৩ অর্থজারী মোকদ্দমায় নথি উপস্থাপনের প্রার্থনাসহ হলফনামা যুক্ত এক দরখাস্ত দ্বারা নিয়াজ গার্মেন্টস ইন্ড্রাষ্ট্রিজ (প্রাঃ) লিঃ এর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নতুন ঠিকানায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করালে “নিয়াজ গার্মেন্টসের চেয়ারম্যান” পুণরায় ফেরারী হন। গত দুই বছরে গ্রেফতারী পরোয়ানাটি তামিল না হওয়ায় গত ১৩ জুলাই এনসিসি ব্যাংক তাদের নিয়োগকৃত আইনজীবীর মাধ্যমে দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ৬০ ধারার অধীন, আদেশ ২১-এর বিধি ৫৪-এর সাথে পঠিত ১৫১ ধারায় এবং ২০০৩ সালের অর্থ ঋণ আদালত আইন এর ৩৭ ধারার আলোকে রায় পরবর্তী সম্পত্তি ক্রোকী পরওয়ানার আবেদন করেন। এই আবেদন শুনানী শেষে আদালত আজ এই ক্রোকী পরোয়ানার আদেশ দিয়েছেন।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে নিয়াজ গার্মেন্টস ইন্ড্রাষ্ট্রিজ (প্রাঃ) লিঃ এর চেয়ারম্যান রোকসানা পারভীনের এই বাড়ীটি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিঃ (সাবেক বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক) এর ঋণের দায়ে অতিরিক্ত জেলা জজ ও দেউলিয়া বিষয়ক আদালত, ঢাকা এর ৪/১৯৯৯ নং দেউলিয়া মোকদ্দমায় এক জাল নিলাম কার্যক্রমে নিলাম হওয়ায় রোকসানা পারভীন বাড়ীটির স্বত্ত্ব ও দখল হারিয়েছিলেন। এই স্বত্ত্ব ও দখল হারানোর দুই বছর পর এক সাংবাদিক দীর্ঘ তথ্যানুসন্ধানে উদ্ধারকৃত তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও জাতীয় দৈনিকে প্রচার এবং প্রকাশিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকল মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে ঐ সাংবাদিক নিজ খরচে অসহায় বিধবা রোকসানা পারভীনের পক্ষে হাইকোর্টে রিট দায়ের করলে নিলাম ও দখল বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশে ঐ সাংবাদিক বাড়ীটি উদ্ধার করে রোকসানা পারভীনের স্বত্ত্ব ও দখল প্রতিষ্ঠা করে। অতঃপর রোকসানা পারভীন উক্ত সাংবাদিকের সাথে করা চুক্তি অনুযায়ী তার মালিকানাধীন ৩৬/২ কাকরাইলের আড়াই কাঠা বাড়ী শ্রেনীর ভূমির উপর নির্মিত সাড়ে ৬ (ছয়) তলা ভবনের ৪র্থ তলার সম্পুর্ণ ফ্ল্যাটটিসহ আনুপাতিক হারে অখন্ডিত ভূমি মূল ক্রেতা উক্ত সাংবাদিকের নিকট মালিকানা দখল বুঝিয়ে দিলেও রেজিস্ট্রি দলিল সম্পাদনে প্রতারণার আশ্রয়ে সময় ক্ষেপণের মাধ্যমে টাল-বাহানা এবং বিশ্বাস ঘাতকতা ও বেঈমানি করায় সাংবাদিক এনসিসি ব্যাংককে দালিলিক সহায়তা করায় শেষাবধি বাড়ীটি পুণরায় ক্রোকী পরোয়ানাভূক্ত হতে চলেছে।

Share