নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতদের সতর্ক থাকার নির্দেশ

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও বাহিনীটির সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর ২০২১ সালে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ফের একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না সরকার। এমন প্রেক্ষাপটে এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি সতর্কতা নিতে বলেছে সরকার।

‘একতরফা নিষেধাজ্ঞার’ মতো পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের কাজের অগ্রাধিকারের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গটি তার অন্যতম।

২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের কাছে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে সাতটি অগ্রাধিকার ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্রসচিব চিঠি পাঠানোর এক দিন পর নতুন বছরের প্রথম দিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রদূত এই প্রতিবেদককে বলেন, পররাষ্ট্র সচিবের নির্দেশনার চিঠি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক—দুটোই একসূত্রে গাঁথা। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি উদ্যোগ নিতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

গত ৩১ ডিসেম্বর নির্দেশনা দিয়ে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনপ্রধানদের কাছে পাঠানো চিঠিতে মাসুদ বিন মোমেন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে বলেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের জন্য ২০২৩ সালে করণীয়-সংক্রান্ত ষষ্ঠ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘যেকোনো কূটনীতিক মিশনের মৌলিক কাজ হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রাখার মধ্য দিয়ে দৈনন্দিন কাজ এগিয়ে নেওয়া। তবে বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আরও বাড়তি কাজের চাহিদা রয়েছে।’

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশে নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ‘আমাদের একটি বিশেষায়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সরকার ও তার প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে সরকারি সংস্থা-ব্যক্তির ওপর একই প্রেক্ষাপটে বা অন্য কারণে আরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এ জন্য নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে প্রস্তুত থাকার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি সময় অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। সময়ে সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আপনাদের হালনাগাদ তথ্য ও নির্দেশনা দেবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ ও দেশের বাইরে কর্মরত বাংলাদেশি কূটনীতিকেরা প্রথম আলোকে বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সরকারের জন্য অস্বস্তি তৈরি করেছে। নতুন করে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। তা ছাড়া সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে ওয়াশিংটনের গভীর উদ্বেগ সরকারের জন্য নতুন এক অস্বস্তি সামনে এনেছে। এই প্রেক্ষাপটে ১ জানুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি সমন্বয় সভা হয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এই সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সরকারের সব পক্ষ যাতে অভিন্ন সুরে কথা বলে, সে বিষয়টি আলোচিত হয়। রাষ্ট্রদূতদের কাছে পাঠানো পররাষ্ট্রসচিবের চিঠি তারই ধারাবাহিকতা বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা।

Share