নুসরাতের গায়ে আগুনের ঘটনায় আটক হয়নি সিরাজউদ্দৌলার প্রধান অনুগত নুর উদ্দিন

নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : গত ৬ এপ্রিল শনিবার ফেনীর সোনাগাজীতে আলীম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফীর গায়ে দুষ্কৃতিকারীরা আগুন দেয়। এ ঘটনায় তার ভাই মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় অজ্ঞাত ৪ জন বোরকা পরিহিত ছাত্রীসহ নাম না জানা আরও অজ্ঞাত ছাত্রীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

এ ঘটনায় পুলিশ সোমবার ৫ জনকে আটক করেছে। এ নিয়ে মোট ৭ জন আটক হলো। এর আগে ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক আফছার ও আলীম পরীক্ষার্থী আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিলো। কিন্তু এ ঘটনায় সিরাজউদ্দৌলার প্রধান অনুগত, সকল কাজের নেতৃত্বদাদা নুর উদ্দিন এখনো গ্রেফতার হয়নি।

সোমবার সোনাগাজী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইকুল আহমেদ ভূঁইয়া জানান, আগুনের ঘটনায় নুসরাত জাহান রাফীর ভাই মাহমুদুল হাছান অজ্ঞাত ৪ জন বোরকা পরিহিতসহ অজ্ঞাত আরও অনেক বলে থানায় মামলা দায়ের করেছে। সোনাগাজী থানার পুলিশ জিজ্ঞাবাদের জন্য মাদ্রাসার দারোয়ান মোস্তফা, নৈশ প্রহরী নুর ইসলাম, মাদ্রাসার ছাত্র আলাউদ্দিন, ছাইদুল, জসিমকে আটক করেছে।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার কয়েকজন মুরুব্বী জানান, ঘটনার পূর্বে উক্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ সিরাজ উদ্দৌলা তার অনুগত ছাত্র নুর উদ্দিনের নেতৃত্বে ৫ জনকে কক্সবাজারে আনন্দ ভ্রমণে পাঠান। তারা কয়েক দিন পূর্বে আনন্দ ভ্রমণ করে আসার পর এই ঘটনা ঘটান।

উক্ত নুর উদ্দিন ২০১৭ সালে একবার নুসাত রাফীর চোখে চুন মেরেছিলো। ওলামা বাজার মাদ্রাসা থেকে নুসরাত জাহান রাফী সেদিন দাখিল পরীক্ষা দিয়ে বাড়ী ফিরছিলো। পথে তার চোখে চুন মারে নুর উদ্দিন। সেই থেকে নুর উদ্দিন রাফীর পিছু লেগে আছে। বর্তমানে নুর একই মাদ্রাসার ছাত্র।

গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে পুলিশ গ্রেফতার করা হয়। এরপর এই নুর উদ্দিনের নেতৃত্বে সিরাজ উদ্দৌলার মুক্তি দাবি করে প্রতিবাদ সভা হয় ২৮ মার্চ। সেদিন নুর উদ্দিনের নেতৃত্বে মাদ্রাসা আঙ্গিনায় মিছিল এবং প্রতিবাদ সভা করা হয়। অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে ব্যানার টানানো হয়।

এলাকার মুরুব্বীদের ধারণা, আটককৃত দারোয়ান মোস্তফা, নৈশ প্রহরী নুর ইসলাম এবং মাদ্রাসার দপ্তরীর ছেলে আবু ইউসুফ ও ছাত্র নুর উদ্দিনকে আটক করে সোনাগাজী নয়, ঢাকার গোয়েন্দা দপ্তরে জিজ্ঞাবাদ করলে সকল তথ্য বেরিয়ে আসবে।

দপ্তরীর ছেলে আবু ইউসুফ, সে অধ্যক্ষের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করতো। তার পিতা আবুল কাশেম উক্ত ফাজিল মাদ্রাসার বেতনভুক্ত দপ্তরী হলেও রহস্যজনকভাবে নুসরাত জাহান রাফীর ঘটনার পূর্বেই দপ্তরী আবুল কাশেমকে অধ্যক্ষ মাদ্রাসা থেকে ছুটি দিয়ে তার ছেলে আবু ইউসুফকে মাদ্রাসার কাজে নিয়োগ করেন।

এলাকার জনগণের বক্তব্য, ‘দপ্তরী, নৈশ প্রহরী এবং পরীক্ষার সময় গেইটে যে সকল পুলিশ সদস্য ছিল তাদের সকলকেই ঢাকার গোয়েন্দা দপ্তরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে থলের বিড়াল আপনাআপনি বেড়িয়ে আসবে।’

দিকে ফেনী জেলায় আগুনে পোড়ার ঘটনা এটি দ্বিতীয়। ইতিপূর্বে ২০১৪ সালে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা একরামুল হক একরামকে দলীয় লোকজন প্রকাশ্য দিবালোকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে। ঠিক একইভাবে গত ৬ এপ্রিল প্রকাশ্য দিবালোকে আলীম পরীক্ষা কেন্দ্রে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পরীক্ষার্থীকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।

Share