নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : ক’দিন ধরে মিডিয়া পাড়ায় সংগীতশিল্পী সালমার দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে চলছে হইচই। আলোচনায় আসার মূল কারণ, সালমার স্বামী সানা উল্লাহ নূরী সাগরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ এনে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন তার প্রথম স্ত্রীর মা দিলারা খানম। সাগর যুক্তরাজ্যে অবস্থান করার কারণে এতদিন জানা যায়নি ঘটনার সত্যতা। আর ক্লোজআপ শিল্পী সালমাও দিতে পারেনি এ ঘটনার সঠিক তথ্য। সংবাদ মাধ্যমগুলোকে তিনি জানিয়েছেন, সাগর দেশে আসলে এ বিষয়ে কথা বলবে। ঘটনা সত্য না মিথ্যা, তা জানা যাবে তার মুখ থেকেই।
সানা উল্লাহ নূরী সাগরের বিরুদ্ধে প্রথম স্ত্রী কক্সবাজারের মেয়ে তাসনিয়া মুনিয়াত পুষ্মী’র অভিযোগগুলোর সত্যতা জানা গেছে। সাগরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। হাতে আসে বেশ কিছু জরুরি কাজগপত্র, যা দৈনিক আমাদের সময় অনলাইন-এর কাছে সংরক্ষিত আছে।
২০১৪ সালের ৩ জুন বিয়ে করেন সানা উল্লাহ নূরী সাগর ও তাসনিয়া মুনিয়াত। প্রথম স্ত্রীর পক্ষ থেকে অভিযোগ আনা হয়, বিয়ের সময় পাঁচ লাখ টাকা, পাঁচ তোলা ওজনের স্বর্ণালংকার ও পঞ্চাশ হাজার টাকার পোশাক প্রদান করে কনেপক্ষ। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাগর ও তাসনিয়া মুনিয়াত প্রেম করে ধানমণ্ডির একটি কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন। ২০ লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে পড়ান কাজী মো. শহীদুল ইসলাম। এ সময় তাদের উকিল হন নাসির আহমেদ। আর বিয়ের সাক্ষী ছিলেন অলি উল্লাহ ও মো. আদনান আনোয়ার।
বিয়ে প্রসঙ্গে সানা উল্লাহ নূরী সাগর বলেন, ‘আমাদের বিয়েটা হয়েছে কাজী অফিসে। কিন্তু তারা অভিযোগ করেছেন বিয়েতে নাকি আমাকে পাঁচ লাখ টাকার আসবাবপত্র, পাঁচ তোলা স্বর্ণালংকার ও পঞ্চাশ হাজার টাকার পোশাক দিয়েছেন। এগুলো সব মিথ্যে, এত আসবাবপত্র আমি কাজী অফিসের কোথায় রাখবো? তাছাড়া আমরা প্রেম করে বিয়ে করেছি। সেখানে আমার সাবেক স্ত্রীর মা-বাবা কিংবা পরিবারের কেউই উপস্থিত ছিলেন না। বিয়েতে উপস্থিত ছিল শুধুমাত্র আমার বন্ধুরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন আইনজীবী। আইনের উপর আমার শ্রদ্ধা ও আস্থা আছে। আইনের সব নিয়ম মেনেই আমি সাবেক স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছি। কিন্তু আমার সাবেক স্ত্রী, শ্বাশুড়ি জলঘোলা করতে এত কিছু করছে। তারা বিষয়টি সমাধান করতে চাননি। তারা আমাকে হুমকি-ধামকিও দিয়েছে। তারা বলেছেন, “আমাকে তারা দেখে ছাড়বেন, জেল খাটাবেন।” আমার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলাই তার প্রমাণ।’
প্রথম স্ত্রীর মা অভিযোগ করেন, সাগর তার প্রথম স্ত্রী তাসনিয়া মুনিয়াতকে যৌতুকের জন্য মারধর করতো। যৌতুকের দাবিতে সাগর তার স্ত্রীকে গত বছর ৫ সেপ্টেম্বর নির্যাতন করলে, সে গুরুতর আহত হন। এরপর তাকে কক্সবাজারের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মামলায় তুলে ধরা হয় মেডিকেল সার্টিফিকেটও। তবে এটি মিথ্যে ও সাজানো নাটক বলে উল্লেখ করেন সাগর।
সাগরের দাবি, গত বছর সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখ আমি যুক্তরাজ্যে যাই। আমার ফ্লাইট ছিল সকাল ১০টায়। ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমাকে বিদায় জানাতে আমার স্ত্রী ছিলেন। সে বেশ প্রাণবন্তই ছিল। অভিযোগ করা হয়, ৫ তারিখ আমি আমার সাবেক স্ত্রীকে মারধর করে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। আমরা নাকি ছিলাম কক্সবাজারে। কিন্তু ৫ সেপ্টেম্বর আমরা দু’জনেই ছিলাম ঢাকাতে। ওইদিন আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে বিদায় নিতেই ব্যস্ত ছিলাম। ধানমণ্ডির একটি কফিশপে বন্ধুদের সঙ্গে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়েছি। যার ভিডিও ফুটেজ খুঁজলে পাওয়া যাবে। পরদিন ৬ সেপ্টেম্বর সকালে, আমি ঢাকার একটি ব্যাংকে গিয়ে টাকা এনডোরস করেছি। চাইলে সে ফুটেজও পাওয়া যাবে। ঢাকায় থেকে তাহলে কিভাবে আমি আমার সাবেক স্ত্রীকে কক্সবাজারে গিয়ে মারলাম। আবার আমার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন তাকে কক্সবাজারের একটি হাসপাতালেও নিয়ে গেল। এটা কীভাবে সম্ভব।’
প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে, গোপনে সংগীতশিল্পী সালমাকে বিয়ে করেছেন সানা উল্লাহ নূরী সাগর। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাগর বলেন, ‘গত বছর সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখ আমি তাসনিয়া মুনিয়াতকে ডিভোর্স দেই। আর অক্টোবরের ২১ তারিখ তারা ডিভোর্স লেটার গ্রহণও করে। ডাকযোগে পাঠানো ডিভোর্স লেটার গ্রহণ করেছে তার মা। প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে তার স্বাক্ষরও আছে। ডিভোর্সের তিনমাস পার হওয়ার পরই আমি সালমাকে বিয়ে করেছি। আমাকে ও আমার পরিবারকে হয়রানি করার জন্যই, তারা ১৯ নভেম্বর মামলা করেছে। বিচ্ছেদের বিষয়টি আমি আইনের নিয়ম মেনেই করেছি। একটি মিথ্যা ঢাকতে, তারা অসংখ্য মিথ্যা দাঁড় করিয়েছে।’
প্রথম স্ত্রীকে কেন ছাড়লেন? জানতে চাইলে সাগর বলেন, ‘আসলে বিষয়টি একান্তই ব্যক্তিগত। এ নিয়ে কথা বলাটা ভালো দেখায় না। কিন্তু এখন এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, কিছু কথা না বললেই নয়। স্বামী হিসেবে স্ত্রী বা তার পরিবারের কাছ থেকে যতটুকু সম্মান পাওয়ার কথা ছিল, আমি তা পাইনি। আমার বাবা-মাকেও তারা সম্মান দিত না। এমন সব আচরণ করেছে, যা কোনো ছেলে মেনে নেবে না। আর আমি কিন্তু তাকে ছাড়তে চাইনি। সাবেক স্ত্রী-ই আমাকে প্রথম মৌখিকভাবে তালাক দেয়। চেয়েছিলাম, তাকে মানিয়ে নিতে। কিন্তু সে আর থাকবে না। তাই বাধ্য হয়ে আমি তাকে ডিভোর্স দেই।’
প্রথম স্ত্রীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আপনি নাকি তাদের টাকায় যুক্তরাজ্যে ‘বার অ্যাট ল’ পড়তে গিয়েছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে সাগর বলেন, ‘তারা তো অনেক কথাই বলেছে, তাদের টাকায় লন্ডনে পড়তে এসেছি, হাজারিবাগে ফ্ল্যাটবাড়ি কেনার জন্য তারা টাকা দিয়েছে, এমন আরও কত কি। সব মিথ্যে কথা। হাজারিবাগে কোথাও আমার ফ্ল্যাটবাড়ি নেই আর আমি তাদের টাকায় পড়তেও আসিনি।’
সবশেষে সানা উল্লাহ নূরী সাগর জানান, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলার কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হয়নি। আগামী ৭ জুলাই আসামিদের হাজিরার তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত। এছাড়াও প্রথম স্ত্রীর দায়ের করা মিথ্যা মামলার জবাব দিতে খুব শিগগিরই দেশে আসছেন তিনি। এসে আইনি ব্যবস্থা নেবেন সাগর।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতার মধ্যদিয়ে সংগীতাঙ্গনে পা রাখেন মৌসুমী আক্তার সালমা। ২০১১ সালে পারিবারিকভাবে শিবলী সাদিককে বিয়ে করেন তিনি। পরের বছর ১ জানুয়ারি তাদের সংসারে কন্যা স্নেহা’র জন্ম। সাংসারিক দ্বন্দ্বের কারণে ২০১৬ সালের নভেম্বরে তাদের বিচ্ছেদ হয়। এরপর গত বছর শেষ দিকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের ছেলে সানা উল্লাহ নূরী সাগরকে বিয়ে করেন সংগীতশিল্পী সালমা।