নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : গত ৭ এপ্রিল ঢাকার মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি আবদুল মাজেদকে। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত শনিবার মধ্যরাত ১২টা ০১ মিনিটে কার্যকর হয় তার ফাঁসি। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ছবি দেখে অবাক ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের বাসিন্দারা।
বেডফোর্ড লেনে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন মাজেদ।তবে আব্দুল মাজেদ নামে নয়। পার্ক স্ট্রিটের ওই লেনের বাসিন্দারা তাকে চেনে আলি আহমেদ ওরফে ইংরেজির মাস্টারমশাই হিসেবে।
ওই এলাকার লোকজন জানান, মহল্লায় মাজেদকে কখনও উচ্চস্বরে কথা বলতে দেখা যায়নি। হিংসা-বিবাদে ছিলেন না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। সেই মাস্টারমশাই যে বঙ্গবন্ধুর খুনি এখনও তা বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না সেখঅনকার বাসিন্দারা।
এলাকাবাসী জানত, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে থেকে পাশ করেছেন মাস্টারমশাই। টিউশন করিয়ে সংসার চালাতেন। প্রথমে কলকাতার তালতলার ভাড়া বাড়িতে একা থাকতেন মাজেদ। পরে পার্ক স্ট্রিটে চলে আসেন।
২০১১ সালে ছোট হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়ার ৩২ বছরের সেলিনা বেগমকে বিয়ে করেন মাজেদ। তাদের ছয় বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই ৭২ বছর বয়সী মাজেদের শরীর ভালো যাচ্ছিল না। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে কলকাতার পিজি হাসপাতালে শরীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি পিজি হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট আনতে বাড়ি থেকে বের হন মাজেদ। সেটাই শেষ। আর বাড়ি ফেরা হয়নি তার। উদ্বিগ্ন স্ত্রী রাতে পার্ক স্ট্রিট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তদন্ত শুরু করে পার্ক স্ট্রিট থানা। পিজি হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ তন্নতন্ন করে খুঁজেও হদিস মেলেনি তার। অবশ্য ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা ৪ মিনিটে বেডফোর্ড লেনের বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আব্দুল মাজেদের যাত্রাপথের একাংশের সিসিটিভি ফুটেজ হাতে পায় পুলিশ।
এরপর পুলিশ মাজেদের ভাড়া বাড়িতে একটি ব্যাগ পায়। সেই ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে সিম কার্ড, ভোটার আইডি, ভারতীয় পাসপোর্ট এবং এক নারীসহ তিন শিশুর ছবি পাওয়া যায়। স্ত্রী সেলিনা পুলিশকে জানান, ব্যাগের মতো তার অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসে কাউকে হাত দিতে দিতেন না মাজেদ।
মহল্লায় খুব একটা মেলামেশা করতেন না। টিউশনির পাশাপাশি বড়জোর এলাকার এক চায়ের দোকান, রেশন দোকান ও এক বিল্ডার্সের দোকানে আড্ডা দিতেন মাজেদ। বাড়ির সদর দরজায় সব সময় তালা লাগানো থাকত। বাইরের কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হতো না। এক আধ বছর নয়, এভাবেই আঠারো-উনিশ বছর কলকাতায় আত্মগোপন করেছিলেন আব্দুল মাজেদ।
কলকাতার ‘বর্তমান’ পত্রিকায় প্রকাশিত সুজিত ভৌমিকের ধারাবাহিক প্রতিবেদন ‘ঘাতকের ডেরা’র প্রথম পর্ব থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে করা ডেস্ক প্রতিবেদন।