বাংলাদেশি সন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের পলাশ-শুক্লা দম্পতির কারাবাস!

নয়াবার্তা ডেস্ক : বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুর কারাগারে ৩০১ দিন কারাভোগের সাজা খাটার পর অবশেষে জামিন পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের এক দম্পতি। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।

২০২২ সালের শুরুর দিকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পূর্ব বর্ধমান জেলার বাসিন্দা পলাশ অধিকারী ও শুক্লা অধিকারী তাদের শিশুপুত্রকে নিয়ে কাজের সন্ধানে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে কাজ ও বাসস্থানের ব্যবস্থার পাশাপাশি নিজেদের সংসার প্রায় গুছিয়েও নিয়েছিলেন তারা।

কিন্তু কয়েক মাস পর, জুলাই মাসে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি সন্দেহে বেঙ্গালুরু পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এই দম্পতি। সে সময় তাদের ছেলের বয়স ছিল ৬ মাস। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রেপ্তারের পর এই পলাশ ও শুক্লা অধিকারী একাধিক বার বেঙ্গালুরু পুলিশকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন— তারা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী নন, তাদের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানি জেলার জামালপুর থানার তেলেপুকুর পঞ্চায়েতের (ইউনিয়ন) অন্তর্ভুক্ত গ্রাম ঝাউগ্রামে। কিন্তু বেঙ্গালুরু পুলিশ তাদের স্বীকারোক্তিতে আস্থা রাখতে পারেনি।

বেশ কিছুদিন কারাবাসের পর পলাশ ও শুক্লা অধিকারীর অনুরোধে বেঙ্গালুরু পুলিশের একটি দল সরেজমিনে ঝাউগ্রামে গিয়ে এই দম্পতির ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেন। জামালপুর থানা প্রশাসনে গিয়ে সরকারি পরিচয়পত্র দপ্তরে তাদের নাম আছে কিনা— তারও সন্ধান করেন।

এর মধ্যে এই দম্পতির কয়েকজন আত্মীয় বেঙ্গালুরু পৌঁছে এই দম্পতির পক্ষে উকিল জোগাড় করেন। এবং সেই উকিলের মাধ্যমেই পলাশ ও শুক্লার জামিনের জন্য গত এপ্রিলে আবেদন করেন।

পলাশ অধিকারীর আত্মীয় সুজয় হালদার জানিয়েছেন, আদালত গত ২৮ এপ্রিলই জামিন দিয়েছিলেন। কিন্তু জামিনের শর্ত অনুযায়ী সময়মতো স্থানীয় জামিনদার জোগাড় ও তার মাধ্যমে পলাশ ও শুক্লার বাড়ির দলিলের অনুলিপি আদালতে উপস্থাপন করতে না পারায় ২৪ তারিখ তাদের জামিন হয়। অন্যান্য সব প্রক্রিয়া শেষে গত বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী দুরন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে চাপেন তারা। শুক্রবারই তাদের বাড়িতে পৌছে যাওয়ার কথা।

আদালত ও জামিন প্রক্রিয়ার পুরো খরচ নিজের সঞ্চয় ভেঙে দিয়েছেন পলাশের ছোটোবোন সাথী অধিকারী, যিনি একটি বিউটি পার্লারে কাজ করেন। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে তিনি বলেন, ‘গত ২৪ মে সকাল সাড়ে ৯ টায় আমি মোবাইল ফোনে জানতে পারলাম, দাদা আর বৌদি জামিন পেয়েছেন। ভিডিও কলে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার মাও তখন ছিলেন আমার সঙ্গে। কথা বলার সময় আমার মা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।’

Share