বিশ্বভারতীর জমি উদ্ধারে অমর্ত্য সেনকে চূড়ান্ত নোটিশ

কলকাতা প্রতিনিধি : জমি বিতর্কে বিশ্বভারতীর শুনানিতে উপস্থিত না থাকায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটলো বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিতর্কিত ১৩ ডেসিবেল জমি ছাড়ার চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে অমর্ত্য সেনকে নোটিশ দিয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নোটিশ অনুযায়ী ১৫ দিনের ডেডলাইন অর্থাৎ আগামী ৬ মের মধ্যে ‘প্রতীচী’ খালি করে দিতে হবে। নোটিশে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে প্রতীচী না ছাড়লে, প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে হলেও বিতর্কিত জমির দখল বুঝে নেবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নোটিশটি অমর্ত্য সেনের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তীকে ই-মেইলে পাঠিয়েছেন বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রার।

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে নোটিশে জানানো হয়েছে, প্রতীচীর জমির লিজ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। বুধবার রাতে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাতে সই আছে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতোর।

বিশ্বভারতীর শুনানিতে ১৯ এপ্রিল বেলা ১২টায় অমর্ত্য সেন অথবা তার প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকায় অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে কড়া সিদ্ধান্ত এবং হুঁশিয়ারি দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এই মুহূর্তে শান্তিনিকেতনে নেই অমর্ত্য সেন। বিদেশে রয়েছেন তিনি। আর এমন সময়েই জমি উদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিদেশ থেকেই সোমবার বিশ্বভারতীকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তাতে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কীভাবে কেউ এই জমি দাবি করতে পারেন? পারিবারিক ভিটে-জমি উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁরই প্রাপ্য। এ নিয়ে কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই। জুনে শান্তিনিকেতন ফিরে আসার পর আলোচনা হতে পারে— বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে ১৭ এপ্রিল এই মর্মে চিঠি পাঠান নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন। অমর্ত্য সেন জানান, ‘প্রতীচী’-র জমির আইনশৃঙ্খলা এবং শান্তিরক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। চিঠি পাঠিয়ে আলোচনার জন্য তিন মাস সময় চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নোটিশে তিন মাসের বদলে উচ্ছেদের জন্য মাত্র ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিল।

এর আগে গত মার্চে অমর্ত্য সেন শান্তিনিকতনে থাকাকালীন বিতর্কিত ১৩ ডেসিবেল জমি খালি করার জন্য নোটিশ দেয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নোটিশে বলা হয়, ‘অমর্ত্য সেন বিশ্বভারতীর মোট ১ দশমিক ৩৮ একর জমি ভোগ করছেন। এর মধ্যে আইনগতভাবে তাঁর জমির পরিমাণ ১ দশমিক ২৫ একর।’ বাকি জমি তাঁকে ফেরত দেওয়ার কথা জানানো হয়। এর পর দুই দফায় শুনানি হলেও সমাধান মেলেনি। পরবর্তী শুনানির জন্য বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ২৯ মার্চ অমর্ত্য সেনকে ডেকেছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই বিদেশ চলে যান অমর্ত্য সেন। তিনি উকিল মারফত চিঠি দিয়ে চার মাস সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায় আইন অনুযায়ী ৭ দিনের বেশি সময় দেওয়া যায় না। এই সময়ের মধ্যে শুনানিতে অধ্যাপক সেন বা তার প্রতিনিধি হাজির না হলে একতরফা হিসাবে ঘোষণা করা হবে। এরপরেই এবার নোটিশ দিয়ে প্রতীচীর জমির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

Share