নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : সাতক্ষীরা জেলার ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। আর এই ফাটল সারিয়ে বেড়িবাঁধটি রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি প্রাণপণ লড়াই করছেন স্থানীয়রাও। নদীর প্রবল স্রোত উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেড়িবাঁধ রক্ষায় নেমে পড়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, এর আগে আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর কুড়িকাউনিয়া ও প্রতাপনগর এবং দেবহাটা উপজেলার খানজানিয়ায় থাকা বেড়িবাঁধকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
এদিকে, শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ও পদ্মপুকুরের কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ফুট বেড়েছে। যার ফলে বেড়িবাঁধ ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে উপকূলীয় এলাকাবাসী।
জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, “ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটার তুলনায় পানি দুই ফুট বেড়েছিল। সেগুলো আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। আমাদের আওতায় ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। সেগুলো মেরামতের জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি।’’
পাউবো-২- এর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। কোথাও কোনও বেড়িবাঁধের অবস্থা খারাপ দেখলে স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেগুলো মেরামত করেছি। সাতক্ষীরার দুই ডিভিশনের আওতায় মোট ১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে পাউবো-২-এর আওতায় ১০ কিলোমিটার ঝুঁকিতে আছে। সেগুলো সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছি। এই বেড়িবাঁধকে স্থায়ীভাবে সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বাজেট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সাতক্ষীরায় শুক্রবার রাত থেকে থেমে থেমে দমকা হাওয়া ও গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ এখনও মেঘাচ্ছন্ন। উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরসহ কিছু কিছু এলাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে মানুষ নিজ ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন।
বাঁধ রক্ষায় নেমেছেন স্থানীয় জনগণ
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘জেলায় ১৬০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ৩২ হাজার মানুষ অবস্থান করছেন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১১৮টি মেডিক্যাল টিম। এছাড়া উপকূলীয় উপজেলাগুলোয় ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘জেলায় দুর্যোগ মোকাবিলায় ২ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ৩১৬ টন চাল, ১১ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা, ১১৭ বান্ডিল টিন, গৃহনির্মাণে ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা ও ৪০ পিস শাড়ি মজুত আছে। এছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জেলার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কর্ম এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে।