নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম বন্দরে ভয়াবহ এবং অভিনব এক জালিয়াতির ঘটনা উদ্ঘাটন করেছে কাস্টমস। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি ভুয়া ওয়েবসাইট বানিয়ে সেখানে মন্ত্রণালয়ের একটি ভুয়া অনুমতিপত্র আপলোড করে কাস্টমসকে বোকা বানিয়ে পণ্য খালাসের চেষ্টা করেছে আমদানিকারক সিয়াম এন্টারপ্রাইজ। কাস্টমসের চৌকস কর্মকর্তার বুদ্ধিমত্তার কারণে ছাড়ের আগেই সেটি ধরা পড়ল।
কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দুটি আমদানি চালানে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি করে সিয়াম এন্টারপ্রাইজ ও সিয়াম ট্রেডিং নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। চালান দুটি খালাসের আগে কাস্টমসের গোয়েন্দা দল এআইআর কন্টেইনার খুলে কায়িক পরীক্ষার পর দুটি চালান আটক করে। দুটি চালানে শুল্ক করসহ ৭৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আমদানিকারক সিয়াম এন্টারপ্রাইজ কাস্টমস আরোপিত শুল্ক পরিশোধ না করে পণ্য ছাড়ের নতুন কৌশল নেয়। শুধু শুল্ক ফাঁকি দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কমার্শিয়াল পারমিট বা সিপির একটি কপি ভুয়া সিল ও স্বাক্ষর দিয়ে কাস্টমসে জমা দেয়। একই সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রায়ই হুবহু একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে সেখানে এই ভুয়া সিপির কপি আপলোড করে। সিয়াম এন্টারপ্রাইজ ও সিয়াম ট্রেডিংয়ের অফিস ঢাকার চকবাজার এলাকায়।
কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট গ্রুপের সহকারী কমিশনার সানজিদা অনুসূয়ার কাছে সিপির কপি দেখে সন্দেহ হয়। কারণ এপ্রিল মাসে চালান দুটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে তিনি আটক করেন। পরে বিষয়টি জানতে তিনি সরাসরি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিবের কাছে ফোন দেন এবং নিশ্চিত হন, মন্ত্রণালয়ের সিপি সিল স্বাক্ষর সবই ভুয়া।
জানতে চাইলে কাস্টমসের সহকারী কমিশনার সানজিদা অনুসূয়া বলেন, এপ্রিল মাসে আমি মিথ্যা ঘোষণায় আনা চালান দুটি আটক করে সিয়াম এন্টারপ্রাইজকে জরিমানাসহ শুল্ক আরোপ করি। আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য কিভাবে সিপি পেল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ফোন করি এবং নিশ্চিত হই বিষয়টি ভুয়া। এরপর আমি ওয়েবসাইট চেক করতে গিয়ে হতভম্ব হয়ে যাই।
তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের সঙ্গে হুবহু মিল রেখে শুধু একটি ডট না দিয়ে বড় ধরনের প্রতারণা করা হয়েছে। এমনিতেই আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য এনে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে, এখন বড় ধরনের জালিয়াতি করে ফৌজদারি অপরাধ করল। আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে আমদানিকারক সিয়াম এন্টারপ্রাইজের মালিকের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। আমদানিকারকের নিয়োজিত যে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এই ভুয়া সিপি কাস্টম হাউসে জমা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘খান এন্টারপ্রাইজ’। সিএন্ডএফ এজেন্টের মালিক গোলাম মাওলা খানের বাড়ি সিরাজগঞ্জে, তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতা। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলকায় এই প্রতিষ্ঠানটির অফিস। রবিবার বিকেলে গোলাম মাওলা খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মোবাইল ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ধরনের ভুয়া জালিয়াতির ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন আসল আমদানিকারকরা। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, এটা সত্যিই উদ্বেগজনক। এ ঘটনার পর কাস্টম কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই পণ্য আমদানিতে আরো কড়াকড়ি করবে। এর ফলে আমদানিকারকরা বাড়তি ভোগান্তিতে পড়বেন। আমরা চাই এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় এমন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।