নয়াবার্তা প্রতিবেদক : আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের কেন্দ্রীয় নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ভ্যাট নিবন্ধনের প্রয়োজন রয়েছে, তাদের মূল কারখানা যে এলাকায়, সেখানকার ভ্যাট কমিশনারেটে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন নিতে হবে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিরীক্ষা কার্যক্রম সুচারুভাবে শেষ করতে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অনেক কোম্পানি রয়েছে, যাদের কোম্পানির নিবন্ধন একটি এবং করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরও (টিআইএন) একটি; কিন্তু ভ্যাটের নিবন্ধন একাধিক। এতে এসব কোম্পানির নিরীক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি আরও জানান, বকেয়া ভ্যাট আদায়ে জরিমানা কমানোরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছর থেকে সর্বোচ্চ ২৪ মাসের জরিমানা নেওয়া হবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জটিলতা দূর করা হবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে বকেয়া ভ্যাট যেদিন থেকে পাওনা, সেদিন থেকে জরিমানা আদায় করা হয়।
দেশে ১৯৯১ সালে ভ্যাট ব্যবস্থা চালু হয়। ভ্যাট ব্যবস্থায় আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ও করযোগ্য সরবরাহ প্রদানকারীকে নিবন্ধন নিতে হয়। নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান একটি বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (বিআইএন) পায়। ভ্যাট আইনের আওতায় ইউনিট ও কেন্দ্রীয়, অর্থাৎ দু’ভাবে নিবন্ধন নেওয়া যায়। ইউনিট নিবন্ধন হলো যেখানে ইউনিটের কার্যক্রম, সেখানকার ভ্যাট কমিশনারেটে নিবন্ধন। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা শাখা বা যে কোনো ধরনের ইউনিট বা কার্যক্রম এ নিবন্ধনের আওতায় থাকে না। আর কেন্দ্রীয় নিবন্ধন হলো একাধিক জায়গায় পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ বা ব্যবসা পরিচালনা করলেও এক স্থান থেকে ভ্যাটের কার্যক্রম পরিচালনার পদ্ধতি। বর্তমানে কোনো প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভার তিন কোটি টাকার বেশি হলে তার ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হয়েছে। ওই আইনে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের একাধিক ইউনিট আছে এবং তাদের হিসাব এক জায়গায় সংরক্ষণ করা হয়, তাদের কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের আওতায় আনার সুযোগ সৃষ্টি করা হয় আইনে।
সারাদেশে ১২টি ভ্যাট কমিশনারেটে মোট নিবন্ধিত ইউনিট ৩ লাখ ৫২ হাজার ৫৯৪টি। এর মধ্যে ৫ হাজার ৭৯২টি প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত, যা নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এনবিআর যত রাজস্ব সংগ্রহ করে, তার মধ্যে ভ্যাটের অবদান বেশি। চলতি অর্থবছরে এনবিআর ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেয়। এর মধ্যে ভ্যাট থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। এরই মধ্যে অর্থবছরের ১০ মাসে ভ্যাট থেকে ৮৪ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে এনবিআর।
কেন্দ্রীয় নিবন্ধন যাদের নিতে হবে :যেসব প্রতিষ্ঠান দুই বা তার বেশি স্থান থেকে উৎপাদন করে এবং একাধিক বিক্রয়কেন্দ্রে বিক্রি করে, তাদের কেন্দ্রীয় নিবন্ধন নিতে হবে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী বা বাণিজ্যিক আমদানিকারক নিজস্ব মালিকানার বিক্রয়কেন্দ্রে বিক্রি করলে এবং সেবা প্রদানকারী যদি নিজস্ব মালিকানার শাখার মাধ্যমে বিক্রি করে, তাদের কেন্দ্রীয় নিবন্ধন নিতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের দাখিলপত্রের সঙ্গে প্রতিটি কেন্দ্রীয় ইউনিট থেকে বিক্রয় ইউনিটে পণ্য পাঠানো এবং বিক্রয় ইউনিট থেকে পণ্য বিক্রি ও সরবরাহের বিবরণ নির্ধারিত ছকে দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ইউনিট ও বিক্রয় ইউনিট যাবতীয় হিসাব সংরক্ষণ করবে। বিক্রয় ইউনিট যে কমিশনারেটে অবস্থিত, সেই কমিশনার বা তার প্রতিনিধি ওই ইউনিটের হিসাব পরীক্ষা করতে পারবেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ভ্যাটবিষয়ক পেশাজীবীদের সংগঠন ভ্যাট ফোরামের একজন্য সদস্য বলেন, কেন্দ্রীয় পদ্ধতিতে ভ্যাট নিবন্ধন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। এ পদ্ধতি সহজ করা না হলে শিল্প প্রতিষ্ঠান চাইলেও নিবন্ধন নিতে পারবে না। দুই বা ততোধিক স্থান থেকে উৎপাদনের শর্ত থাকায় এক স্থান থেকে উৎপাদন করে একাধিক ইউনিটের মাধ্যমে বিক্রি করলে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন দেওয়া হয় না। এ নিয়ম পরিবর্তন করা উচিত।