নয়াবার্তা জেলা প্রতিবেদক : বগুড়ায় প্রথম বারের মতো ব্যক্তি উদ্যোগে শুরু হয়েছে মরুভূমির ত্বিন ফলের চাষ। শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া পালপাড়ায় সিঙ্গাপুরফেরত যুবক সোয়েব সাদিক নবীন পরীক্ষামূলকভাবে এই ত্বিন ফলের চাষ করছেন। তার বাগানে এখন শোভা পাচ্ছে ত্বিন ফল। দেশের চাষিদের মধ্যে এই ফল ও চারা খুব অল্প মূল্যে বিক্রি করা তার লক্ষ্য।
সরজমিনে দেখা যায়, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া গ্রামে সোয়েব সাদিক দুই বিঘা জমিতে ত্বিন ফলের বাগান করেছেন। বাগানে ৬০০ ত্বিনগাছ রয়েছে। বাগানের গাছে গাছে লকলক করছে সবুজ পাতা। প্রতিটি পাতার গোড়ায় ঝুলছে ত্বিন ফল। দু-একটি ফল পাকতে শুরু করেছে। পাকা ফল রসে পরিপূর্ণ। নতুন বাগান হওয়ায় স্হানীয় অনেক মানুষই আগ্রহ নিয়ে ত্বিন ফলের এ বাগান দেখতে আসছেন। মরুর দেশের ফল ‘ত্বিন’ ডুমুরজাতীয় ফল। স্বাদে খুব মিষ্টি ও রসাল, পুষ্টিগুণে ভরা এই ফল মধ্যপ্রাচ্যে অনেক জনপ্রিয়।
সোয়েব বলেন, মরুর দেশের ফল বগুড়ার মাটিতে চাষ করতে গিয়ে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। মাটিতে জৈব ও ভার্মি কম্পোস্ট সার ছাড়াও বালু, তুষ, ছাই মিশিয়ে ফল উত্পাদনের উপযোগী করে তুলতে হয়েছে। প্রথম মৌসুমেই সফল হওয়ায় সবাই জানছেন এই বাগানের কথা। ত্বিনবাগান ও চাষ পদ্ধতি জানতে অনেকেই ভিড় করছেন।
তিনি জানান, সিঙ্গাপুরে গিয়ে তুরস্কের এক যুবকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় তার। সেখানেই তিনি ত্বিন ফলের স্বাদ পেয়েছেন। পাশাপাশি চাষ সম্পর্কে অবগত হন। ত্বিন ফলের এখনো বাজার তৈরি হয়নি দেশে। তাই তার উত্পাদিত ত্বিন ফল সিঙ্গাপুরে রপ্তানির চিন্তা করছেন। আগামী রমজান মাস থেকে প্যাকেজিং করে বগুড়া ছাড়াও রাজধানীতে এই ফল বিক্রি করবেন। গাছপাকা এক কেজি ত্বিন ফলের গড় বাজারমূল্য ১ হাজার টাকা। এই ফলের গাছ ১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। চারা লাগানোর তিন মাসের মধ্যে গাছে শতভাগ ফল ধরে। প্রথম বছরে ১ কেজি, দ্বিতীয় বছরে ৭-১১ কেজি, তৃতীয় বছরে ২৫ কেজি এভাবে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে টানা ৩৪ বছর পর্যন্ত ফল দিতে পারে একটি ত্বিনগাছ।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল আলম জুয়েল বলেন, ত্বিন ফল অত্যন্ত পুষ্টিগুণে ভরা। এই ফল ক্যানসার প্রতিরোধ ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য ও হাঁপানি রোগ নিরাময় এবং মানসিক ক্লান্িত দূর করে। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়ামসহ নানা ভেষজ গুণ। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস, হাড়ের রক্ষণাবেক্ষণ, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি, ত্বকের সৌন্দর্যবর্ধন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দুলাল হোসেন বলেন, ত্বিন একটি সম্ভাবনাময় ফসল। ত্বিন ফল চাষকে লাভজনক করতে পারলে বেকার তরুণদের কর্মসংস্হান হবে এবং অর্থনীতিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই ফল রপ্তানির মাধ্যমে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সম্ভব। কৃষি বিভাগ প্রযুক্তিগত সহায়তাসহ নানাভাবে এই ফল চাষে চাষিদের সহায়তা প্রদান করছে।