মহামারিতে মানসিকভাবে চাপে ৯৬ শতাংশ তরুণ-তরুণী

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : করোনায় আয় কমেছে ৮০ শতাংশ তরুণের। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশেরই অবস্থা খুবই নাজুক। আর পড়াশোনা ছেড়ে উপার্জনে নামতে বাধ্য হয়েছে অন্তত ২৮ শতাংশ যুবক-যুবতী। এ ছাড়া চলমান মহামারিতে মানসিকভাবে চাপের মধ্যে পড়েছেন ৯৬ শতাংশ তরুণ-তরুণী। যার অধিকাংশেরই মানসিক স্বাস্থ্যে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে।

রোববার সকালে ‘কোভিড-১৯ ও বাংলাদেশ: আর্থসামাজিক পুনরুজ্জীবনে যুব এজেন্ডা’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল সংলাপে এ তথ্য তুলে ধরে বেসরকারি সংগঠন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ। জরিপ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিপিডির কর্মসূচি সহযোগী তামারা-ই-তাবাসসুম। অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক ছিল জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ, একশনএইড বাংলাদেশ, ফ্রেডরিক ইবার্ট স্টিফটুং বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

আলোচকরা বলেন, দক্ষ যুব সমাজ তৈরিতে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ।অনলাইন ক্লাসসহ সার্বিক তথ্য-প্রযুক্তি খাতেও রয়েছে নানা দুর্বলতা ও জটিলতা। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ ও প্রণোদনার পাশাপাশি সেগুলোর সুষম বণ্টনের দাবি জানান আলোচকরা।

সংগঠনটি ১৮-২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ১৬৩ জনের ওপর অনলাইনে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করে। ১৮-৩০ বছর বয়সী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৬৩ জন পুরুষ, ২৯৯ জন নারী এবং ১ জন তৃতীয় লিঙ্গের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অতিমারির কারণে প্রযুক্তিগত বৈষম্য, শিক্ষা ও দক্ষতা এবং কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে বলা হয়, নারীদের মধ্যে ৮ শতাংশ বিয়ের কারণে পড়াশোনা ছেড়েছে। আর পরিবারকে সহায়তা করার জন্য ছেড়েছে ১৩ শতাংশ। পুরুষদের মধ্যে এটি ৩২ শতাংশ।

দুই-তৃতীয়াংশ ভবিষ্যৎ কর্মজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে। কোভিডে তরুণ-যুবাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ৯৬ শতাংশ জানিয়েছে, তারা নানা ধরনের মানসিক অবসাদে ভুগছে। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশের অবসাদ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। অনলাইনে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে যুক্ত নেই ৫৮.৩ শতাংশ।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আলোচনায় অংশ নিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন নারী ও যুব নেতৃত্ব, উদ্যোক্তা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, দলিত, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিরা।

বিশেষ অতিথির ভাষণে সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ধারণা করা যাচ্ছে, করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পলিটেকনিক, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ১০-১৫ শতাংশের পড়াশোনা ছেড়ে দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার মতে, দক্ষ কর্মশক্তি তৈরির জন্য কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারে নিয়ে আসতে হবে। সংকটকালে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে শর্ত সাপেক্ষে আগামী ছয় মাসের বেকার ভাতা দেয়া যেতে পারে তরুণ-যুবকদের।

আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক ও সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যুবসমাজের একটি অংশ শিক্ষা, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন তৎপরতায় সক্রিয় রয়েছে। অপর একটি অংশ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। কেউ মাদকে যুক্ত, কেউ অবসাদে ভুগছেন। তাই অখ- নয়, বিভাজিতভাবেই যুবাদের দেখতে হবে এবং তাদের কীভাবে সক্রিয়ভাবে কর্মসংস্থানে যুক্ত করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।

Share