মার্কিন নির্বাচন চার রাজ্যে ঝুলে আছে ভাগ্য

নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর দুই দিন কেটে গেছে। কিন্তু এখনো বলা যাচ্ছে না রিপাবলিকানপ্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী জো বাইডেন নির্বাচিত হচ্ছেন। ভোট গণনা এখনো চলছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের সম্ভাব্য বিজয়ী সম্পর্কে এক রকম নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন দুই প্রার্থীর চোখ পাঁচ অঙ্গরাজ্যের দিকে। এসব রাজ্যে দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান এতটাই কম যে, যে কেউ জয়ী হতে পারেন।

এ অবস্থায় সংবাদমাধ্যমসহ নির্বাচন বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলো কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের দিকে বিশেষ নজর রাখছে। নির্বাচন বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই অঙ্গরাজ্যগুলোই এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলের মূল প্রভাবক হয়ে উঠবে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম চারটি অঙ্গরাজ্যের দিকে নজর রেখেছে। এগুলো হলো অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাদা ও পেনসিলভানিয়া। আবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সও অনুরূপ একটি তালিকা করেছে। সেই তালিকায় সিএনএনের তালিকায় উল্লিখিত নেভাদা না থাকলেও, রয়েছে নর্থ ক্যারোলাইনা। মোটা দাগে বলতে হয়, এবারের মার্কিন নির্বাচন পাঁচটি অঙ্গরাজ্যের ফলের ওপর বিশেষভাবে নির্ভর করছে। এগুলো হলো অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাদা, পেনসিলভানিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনা।

অ্যারিজোনায় জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে প্রায় ৬৫ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। অ্যারিজোনার সবচেয়ে বড় কাউন্টি ম্যারিকোপার ভোট গণনা এখনো শেষ হয়নি। ৪ নভেম্বর সকালেই কাউন্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের ২ লাখ ৭৫ হাজার ভোট এখনো গণনা বাকি। এই গণনা শেষ হতে এবং এর ফল স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ৯টার (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল ৮টা) আগে দেওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া পিমা কাউন্টির ৪৬ হাজার ভোটও এখনো গণনার বাইরে রয়ে গেছে। অঙ্গরাজ্যটিতে এখন পর্যন্ত গণনা হয়েছে ৮৬ শতাংশ ভোট। এর মধ্যে বাইডেন পেয়েছেন ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ ভোট। ফলে অঙ্গরাজ্যটির ১১টি ইলেকটোরাল ভোট শেষ পর্যন্ত কোনদিকে যায়, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে এখনো।

সিএনএনের তথ্যমতে, জর্জিয়ায় এখন পর্যন্ত মোট সম্ভাব্য ভোটের ৯৮ শতাংশ গণনা হয়েছে। এর মধ্যে বাইডেন পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট। ফলে এ অঙ্গরাজ্যের ১৬ ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে দুই প্রার্থীর লড়াই যে এখনো শেষ হয়নি, তা একেবারে নিশ্চিত।

সিএনএনের তথ্য বলছে, জর্জিয়ার ফুলটন কাউন্টির আটলান্টা এলাকার ৮ হাজার ৩০০ ভোট বাইডেনের বাক্সে যোগ হয়েছে সর্বশেষ। এখনকার প্রবণতা বলছে, গণনার বাকি থাকা ভোটগুলোর একটি বড় অংশই বাইডেন পাবেন। ফলে অঙ্গরাজ্যটিতে ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও তিনি শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারবেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়। অঙ্গরাজ্যটির সবচেয়ে বড় এ কাউন্টির ৭ হাজার ৫৬৪ ভোট এখনো গণনা বাকি। এগুলো কোনদিকে যায়—তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে এখন।

৪ নভেম্বর পর্যন্ত পেনসিলভানিয়া ডেমোক্র্যাটদের হাতছাড়া হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে ২০ ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে সেখানেও লড়াই জমে উঠেছে। অঙ্গরাজ্যটির মোট সম্ভাব্য ভোটের ৯৩ শতাংশ এখন পর্যন্ত গণনা হয়েছে। এর মধ্যে বাইডেন পেয়েছেন ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট। দুজনের ভোটের ব্যবধান এক সময় ছিল প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার। এখন তা প্রায় ৭৫ হাজার। অর্থাৎ বাইডেন বেশ দ্রুতই ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যবধান কমিয়ে আনছেন। অঙ্গরাজ্যটির ডাকযোগে আসা কয়েক লাখ ভোট এখনো গণনার বাইরে রয়েছে বলে জানিয়েছে পেনসিলভানিয়ার নির্বাচন কর্তৃপক্ষ।

নেভাদা অঙ্গরাজ্য ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যার বিচারে ছোটই বলতে হবে। কিন্তু এখন এই অঙ্গরাজ্যের ৬টি ইলেকটোরাল ভোট জয়-পরাজয় নির্ধারণের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাইডেন নেভাদায় ট্রাম্প থেকে মাত্র ১২ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। অঙ্গরাজ্যটির জনবহুল ক্লার্ক কাউন্টির ফল আসতে এখনো বাকি আছে। এই ফল এখন পর্যন্ত এগিয়ে থাকা বাইডেনের ভাগ্য বদলে দিতে পারে।

আসা যাক নর্থ ক্যারোলাইনা প্রসঙ্গে। অধিকাংশ বিশ্লেষক এই অঙ্গরাজ্যকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাক্সে ফেললেও বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর দিকে এখনো নজর রাখছে। অঙ্গরাজ্যটির মোট সম্ভাব্য ভোটের ৯৫ শতাংশ এখন পর্যন্ত গণনা হয়েছে। এর মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাক্সে গেছে ৫০ শতাংশ ভোট। আর বাইডেন পেয়েছেন ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। দুজনের মধ্যে ব্যবধান মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ। এখনো ৫ শতাংশ ভোট গণনা বাকি থাকায় এ অঙ্গরাজ্যের ১৫টি ইলেকটোরাল ভোটের অভিমুখ নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে।

এবারের মার্কিন নির্বাচন নিঃসন্দেহে ভীষণ নাটকীয়। এতে শেষ মুহূর্তের এই নাটক আরও জমিয়ে তুলেছে এই পাঁচ অঙ্গরাজ্য। এরই মধ্যে ভোট পুনর্গণনার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে ট্রাম্প শিবির। এই পাঁচ অঙ্গরাজ্যের যেটিই ট্রাম্প হারাবেন, সেটিতেই তিনি ও তাঁর প্রচার শিবির এমন পদক্ষেপ নেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Share