বান্দরবান প্রতিনিধি : মাসিক তিন লাখ টাকার বিনিময়ে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের জন্য বান্দরবানের কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে চুক্তি করে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া। তিন বছরব্যাপী এ প্রশিক্ষণের বিষয়ে ২০২১ সালে কেএনএফের প্রতিষ্ঠাতা নাথান বমের সঙ্গে জঙ্গিদের চুক্তি হয়েছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র–গুলিসহ সাত জঙ্গি ও তিন কেএনএফ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রশিক্ষণ সম্পর্কে এসব তথ্য দিয়েছেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে বান্দরবান জেলা পরিষদ মিলনায়তনে র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে যৌথ বাহিনীর চলমান জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ব্যাপারে জানাতে র্যাব এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
গতকাল রাতে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গি প্রশিক্ষণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, গতকাল রাতে রোয়াংছড়ি বাজার এলাকা থেকে তিনজন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার কেএনএফের সদস্যরা হলেন রোয়াংছড়ির বাজার এলাকার লালমুন সয় বমের ছেলে জৌথান স্যাং বম (১৯), লালমিন সম বমের ছেলে স্টিফেন বম (১৯) ও জিক বিল বমের ছেলে মালসম বম (২০)। তাঁদের বাড়ি একই উপজেলার জুরবারাংপাড়ায়। তিনজনই কেএনএফের সামরিক শাখার সদস্য ও গোপন আস্তানায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার তিন কেএনএফ সদস্য জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, কেএনএফের প্রতিষ্ঠাতা নাথান বম। জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার উপদেষ্টা শামী মাহফুজের সঙ্গে নাথান বমের একটি চুক্তি হয়। ২০২১ সালের চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত জঙ্গি সদস্যদের কেএনএফের গোপন আস্তানায় প্রশিক্ষণ প্রদান করার কথা। এর বিনিময়ে জঙ্গিরা কেএনএফকে মাসিক তিন লাখ টাকা এবং কেএনএফের সদস্যদের সমস্ত খরচ বহন করবে।
জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয় সংগঠনের দাওয়াতি শাখা হিজরতের নামে বিভিন্ন সদস্য সংগ্রহ করে পটুয়াখালী, ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় জ্যেষ্ঠ সদস্যদের হেফাজতে ‘সেফ হোমে’ রেখে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। সেখানে প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণদের পাহাড়ে কেএনএফের গোপন আস্তানায় নিয়ে আসা হতো।
কেএনএফের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, রুমা বাজার এলাকার বাসিন্দা নাথান বম প্রথমে কুকি-চিন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন নামে একটি সংস্থা গড়ে তুলেন। সেটি পরবর্তিতে কেএনএফ নামে সশস্ত্র সংগঠনে পরিণত হয়। তাঁরা রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নে এবং ওই ইউনিয়নসংলগ্ন রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার দুর্গম এলাকায় গোপন আস্তানা গড়ে তোলে। তাঁদের ২০০ জনের মতো সদস্য রয়েছে বলে জানা যায়।