রিজার্ভ ছাড়াল ২১ বিলিয়ন ডলার

নয়াবার্ত‍া প্রতিবেদক : ব্যাংকগুলোর মধ্যে কারেন্সি সোয়াপ বা মুদ্রার অদলবদল এবং গত ৩ মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির সুবাদে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে।

গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সাপ্তাহিক নির্বাচিত অর্থনৈতিক সূচকে বলা হয়েছে বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের হিসেব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবানুযায়ী দায়হীন তাৎক্ষনিক ব্যবহারযোগ্য নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ২ হাজার ১১৫ কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার বা ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। এক মাসে রিজার্ভ বাড়লো ১ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার বা ১১৯ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।

আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে গঠিত বিভিন্ন তহবিলসহ গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৩৩ কোটি ৪ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার বা ২৬ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। এক মাস আগে যা ছিল ২৫ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ৫০৮ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। গত বছর একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে গঠিত বিভিন্ন তহবিলসহ গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ৩ হাজার ২২২ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলার বা ৩২ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।

এর আগে, গত সোমবার (৪ মার্চ) রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। ফেব্রুয়ারি মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। তাছাড়া প্রতিনিয়ত ব্যাংকের সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপ হচ্ছে। এ দুটি কারণে রিজার্ভ বাড়ছে। তবে আসছে সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) এক বিলিয়ন ডলারের বেশি পরিশোধের পর রিজার্ভ ফের কমবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়েছিল। বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে ওই সময় রিজার্ভ বাড়ানো হয়। এরপর সংকটের কারণে ২৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে করে কমতে কমতে গত নভেম্বর শেষে ১৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। এরপর আবারও বেড়ে ডিসেম্বরে ২১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন হয়। তবে জানুয়ারি শেষে আবার কমে ১৯ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। এখন সোয়াপের ফলে রিজার্ভ ফের বাড়ছে। রিজার্ভ বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা-ডলার অদলবদল বা সোয়াপ ব্যবস্থা চালু করায় গত এক মাসে রিজার্ভ বেড়ে ২০ বিলিয়নের ঘর অতিক্রম করে। জানুয়ারি মাসে ৯ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার রিজার্ভ কমার পর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিপিএম-৬ হিসাবানুযায়ী দায়হীন তাৎক্ষনিক ব্যবহারযোগ্য নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১ হাজার ৯৯৩ কোটি ৫১ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়নে নেমে আসে।

বিদায়ী ২০২৩ বছর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে দায়হীন তাৎক্ষনিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ছিলো ১৬ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন অর্থাৎ ১ হাজার ৬৭৫ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তির টাকা ছাড়ের শর্ত অনুযায়ী এই সময়ে দায়হীন তাৎক্ষনিক ব্যবহারযোগ্য নিট রিজার্ভ থাকার কথা ছিল কমপক্ষে ১ হাজার ৭৭৮ কোটি বা ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য গত ১৮ জানুয়ারি নিট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩ কোটি ৪ লাখ ৯ হাজার মার্কিন ডলার বা ২ দশমিক ৩ শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার।

ক্রমোহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন রোধে গত এক বছর ধরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ, বৈদেশিক ঋণ বা আমদানিকে লাগাম টানা ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা স্থিতাবস্থা রাখা সম্ভব হয়নি। মার্চের শুরুতে আইএমএফ ঋণ বা বৈদেশিক অন্য ঋণ ছাড়াই প্রবাসী আয় এবং ব্যাংকগুলোর মধ্যে কারেন্সি সোয়াপ বা মুদ্রার অদলবদলের মাধ্যমে মুদ্রা ২১ বিলিয়ন অতিক্রম করানো সম্ভব হয়েছে।

সোয়াপ বা মুদ্রার অদলবদল হলো, ব্যাংকগুলোর নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট (বিদেশে থাকা দেশীয় ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট) থেকে ডলার বিনিময় করা। যা স্বল্প মেয়াদে লেনদেন করা হয়। সোয়াপের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রস রিজার্ভ বাড়াতে পেরেছে। এ মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বৃদ্ধি পায় না, বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যায়। আবার যখন প্রয়োজন হয় ব্যাংকগুলো ফেরত নেয়।

ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় আসা প্রবাসী আয় দেশে তাদের পরিবারের কাছে দেশি মুদ্রা টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়। আর বিদেশি মুদ্রা স্ব স্ব ব্যাংকে মজুত থাকে। যার একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে। এটা রিজার্ভ বৃদ্ধির একটি মাধ্যম।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তির টাকা ছাড়ের শর্ত পূরণে রিজার্ভ বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাথে টাকা-ডলার অদলবদল বা সোয়াপ ব্যবস্থা চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরফলে এখন থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে ডলারের সঙ্গে টাকার অদলবদল করতে পারবে। সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য টাকা-ডলার অদলবদলের এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর মাধ্যমে, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম অনুযায়ী, ডলার নিয়ে ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দিতে পারবে বাংলাদেশ। বর্তমানে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলার বিক্রির দর (স্পট রেট) হলো ১১০ টাকা। পুনরায় টাকা পরিশোধ করে সমপরিমাণ ডলার নিতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এক্ষেত্রে বিনিময় হার নির্ধারিত হবে টাকা নেয়ার দিনে থাকা ডলারের দর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাকে ‘স্পট রেট’ বলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে উদ্বৃত্ত ডলার থাকলে এখন তা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে তারা সমপরিমাণ টাকা ধার নিতে পারবে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক উভয় পক্ষই লাভবান হবে।

Share