লকডাউন বাসীর মদ সরবরাহের আবদার!

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : লকডাউনে থাকা রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার থেকে বের হওয়ার জন্য শনিবার বাসিন্দাদের দীর্ঘলাইন-সমকাল
লকডাউনে থাকা রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার থেকে বের হওয়ার জন্য শনিবার বাসিন্দাদের দীর্ঘলাইন-সমকাল

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে পরীক্ষামূলক লকডাউনে থাকা রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের কোনো কোনো বাসিন্দার ‘বিশেষ’ চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গভীর রাতে জরুরি সেবার নম্বরে কল করে হাকিমপুরী জর্দা ও ব্রনের ক্রিম চাওয়ার পর এবার একজন মদ সরবরাহের আবদার জানিয়েছেন। এই চাহিদাকে তিনি ‘বৈধ এবং জরুরি’ বলেও দাবি করেন। একপর্যায়ে মাদক কেনার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তার কাছে টাকা পাঠানোর অনুরোধও করেন এই মাদকসেবী। তার এ বক্তব্য শুনে হতভম্ব হয়ে পড়েন স্বেচ্ছাসেবীরা।

স্বেচ্ছাসেবীদের সমন্বয়ক ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরানের একান্ত সচিব মাসুদ হোসেন সুমন বলেন, ‘লকডাউনে দায়িত্ব পালন না করলে এলাকাবাসীর এমন সব অদ্ভুত আচরণের কথা হয়তো কখনও জানতে পারতাম না। গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ফোন করে ওই ব্যক্তি মাদক সরবরাহের কথা বলেন। কোথায় পাওয়া যাবে সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দেন। তার এসব কথার অডিও রেকর্ড আছে।’

অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, যোগাযোগকারী ব্যক্তির মদের চাহিদা শুনে স্বেচ্ছাসেবক বলছেন, ‘এটা কি আপনার কাছে বৈধ মনে হচ্ছে?’ জবাবে তিনি বলছেন, ‘আমি তো এটা খাই, তাই আমার কাছে বৈধই মনে হচ্ছে।’ কোন ব্র্যান্ড জানতে চাইলে তিনি বলছেন, ‘আপনি… যেটা পাঠাতে পারেন।’ ফার্মগেট মোড়ের অদূরে তেজগাঁও থানার পাশের বারে পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি। একটু পর তিনি পুনরায় বলেন, ‘ভাই, আরেকটা কাজ করতে পারেন, আমার এই নম্বরে বিকাশে কিছু টাকা দেন, আমি কিন্যা খাই।’

সমন্বয়ক মাসুদ হোসেন সুমন বলেন, ‘এরকম আবদারের পরও তাকে তেমন কিছু বলা হয়নি। তাকে শুধু বলা হয়েছে, ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিদিন এরকম অনেক আবদার আসে। গভীর রাতে ফোন করে একটি ব্র্যান্ডের সাদা (লাইট) সিগারেট, আইসক্রিম, রং ফর্সাকারী ক্রিম ইত্যাদি চাইছে মানুষ। আমরা তাদের সব চাহিদার ব্যাপারেই আন্তরিক। তবে মনে হচ্ছে, গুটিকয়েক মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে লকডাউনের বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ বা স্বেচ্ছাসেবীদের হয়রানি করতে নানারকম তৎপরতা চালাচ্ছেন।’

এর আগে স্বেচ্ছাসেবীরা জানিয়েছেন, রাত পৌনে ১টায় ফোন করে এক নারী দুটি জরুরি ওষুধ সরবরাহের কথা বলেন। তড়িঘড়ি করে ফার্মেসিতে গিয়ে কেনার পর জানা যায় সেগুলো আসলে ব্রন নিরাময়ের ক্রিম। আবার রাত সাড়ে ১২টায় ফোন করে এক বাসিন্দা জানান, তার ব্রয়লার মুরগি লাগবে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে মধ্যবয়সী এক নারী ফোন করে দুই কৌটা হাকিমপুরী জর্দা চান। রাত সাড়ে ১০টার দিকে একজন গার্লিক পিজা এনে দেওয়ার কথা বলেন। তাদের সবাইকে চাহিদা অনুযায়ী জিনিসপত্র পৌঁছে দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

করোনা সংক্রমণের ঘনত্ব বিবেচনায় ‘রেড জোন’ ঘোষিত পূর্ব রাজাবাজার এলাকা ৯ জুন রাত ১২টা থেকে লকডাউন করা হয়। গতকাল শনিবার ছিল লকডাউনের ১১তম দিন। প্রতিদিনই এই এলাকায় বেশ কঠোরভাবেই লকডাউনের নিয়মাবলি মেনে চলতে বাধ্য হচ্ছেন এলাকাবাসী। সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল-নজরদারি রয়েছে। সেইসঙ্গে মানুষকে জরুরি সেবা ও মানবিক সহায়তা দিতে কাজ করছেন একদল স্বেচ্ছাসেবক।

Share