গাজী আবু বকর : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টানা চারদিনের কমপ্লিট শার্ট ডাউন এবং পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সারা দেশের শিল্প উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে বহির্বিশ্বে ব্যবসা বানিজ্য। ফলে ইতিমধ্যে অর্থনীতিতে ৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে দেশ।
সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় নাগরিক জীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট ভিত্তিক দৈনন্দিন নাগরিক সেবা। ডিজিটাল বাংলাদেশে বিদ্যুতের প্রিপেইডকার্ড রিচার্জ করতে না পারায় বিদ্যুৎ বিহীন পরিবারে নেমে এসেছে অমানিশা। নষ্ট হচ্ছে ফিরিজে রক্ষিত মাছ মাংস সবজি। এটিএম বুথ থেকে নগদ টাকা উঠাতে পারছেন না ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলমান অস্থিরতায় দেশজুড়ে অর্থনীতির চাকা প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কমপ্লিট শাট ডাউনের পর থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সবকিছু বন্ধ থাকায় দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ জারি হলে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ দেশের অধিকাংশ শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয় ইন্টারনেট সেবা। এসবের ফলে সংকটে থাকা অর্থনীতিতে বড় ধরনের অভিঘাত এসেছে। ফলে আবারও ধাক্কা খেল দেশের অর্থনীতি। তবে প্রতিটি খাতেই কমবেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অচলাবস্থায় অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছে তার সাময়িক হিসাব করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট বা র্যাপিড। সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, অচলাবস্থার সময় দেশের অর্থনীতিতে দৈনিক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৬০ কোটি ডলার বা ৭ হাজার ৮০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ছয় দিনে মোট আর্থিক ক্ষতি ৪২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত পোশাকশিল্প। মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশ আয় এই খাত থেকে আসে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই খাত। পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এরই মধ্যে জানিয়েছে, তাদের প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে গত ছয় দিনে এই খাতের ক্ষতির অঙ্ক প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিঃসন্দেহে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বন্দরে কাজ হয়নি। সারা দেশে পরিবহনব্যবস্থা বন্ধ ছিল। শ্রমিকরা কাজে উপস্থিত হতে পারেননি। সবকিছু মিলে অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের অভিঘাত এসেছে। এই ক্ষতি সহজেই পূরণ হওয়ার নয়।
উদ্যোক্তারা বলেছেন, ‘দেড় বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যেখানে আমাদের স্থিতিশীল একটি পরিবেশ দরকার ছিল, সেখানেই বড় ধাক্কাটি লেগেছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে অর্থনীতিতে নতুন করে আরেক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।’ তাদের মতে, এ মুহূর্তে বেশি দরকার দেশের স্থিতিশীলতা।
যোগাযোগ করা হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিঃসন্দেহে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তার কারণ আমদানি -রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। বন্দর ঠিকমতো কার্যকর ছিল না। পরিবহন চলেনি। কারফিউর কারণে শ্রমিকরা ঠিকমতো কর্মস্থলে যেতে পারেননি। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সবকিছু মিলে নিঃসন্দেহে অর্থনীতির ওপর বড় রকমের অভিঘাত এসেছে। যে ক্ষতি হয়ে গেছে এটা সহজে মেটানো যাবে না।
গত কয়েক দিনে দেশজুড়ে যে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরবরাহব্যবস্থা। এ কারণে সব ধরনের ব্যবসা ও শিল্পকারখানা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফরেন চেম্বারের সভাপতি ও বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রধান জাভেদ আখতার বলেন, সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার কারণে গত ছয় দিনে তাদের ১৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এখন মানুষের জীবনযাপনের একটি বড় অংশ ই-কমার্সের ওপর নির্ভরশীল। ইন্টারনেট না থাকায় ই-কমার্স বন্ধ রয়েছে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, গত ছয় দিনে এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ইন্টারনেট না থাকায় পণ্য ডেলিভারি কার্যক্রম যেমন চলছে না, তেমনি ফ্রিল্যান্সিংও প্রায় বন্ধ। দেশে সাড়ে ছয় থেকে সাত লাখের মতো ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তাদের কাজ থমকে আছে। তাদেরই দিনে অন্তত ১৩-১৪ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।
স্টিল খাতও অচলাবস্থার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই খাতের উদ্যোক্তারা জানান, স্টিল খাতে দিনে ক্ষতি প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ফলে গত ছয় দিনে এই খাতের ক্ষতির অঙ্ক প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। দেশে প্রায় ২০০ স্টিল মিল রয়েছে। গত ছয় দিন এসব মিল বন্ধ ছিল। কাঁচামাল সংকটের কারণে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। অবশ্য গতকাল সীমিত আকারে এসব মিল চালু হয়েছে।
বাংলাদেশ স্টিল মিলস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, ‘আমাদের এক সপ্তাহে যে ক্ষতি হয়েছে তা এক বছরেও পূরণ হওয়ার নয়। আমদানি করা কাঁচামাল সংকটের কারণে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সহিংসতার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে সিরামিক খাত। খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ছয় দিনে এই খাতে দৈনিক ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দেশে সক্রিয় সিরামিক কারখানা আছে ৩০টি। আরএকে সিরামিকসের চিফ অপারেটিং অফিসার সাধন কুমার দে বলেন, “গ্যাস-সংকটের কারণে সিরামিকশিল্প গভীর সংকটের মুখে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সংঘাতময় পরিস্থিতি। ফলে আমাদের অবস্থা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো।”
সিমেন্টও অর্থনীতির বড় খাত। এই খাতের উদ্যোক্তারা জানান, খাতটিতে দিনে ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা। ইন্টারনেট সেবা না থাকায় বিমানে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন সেবাও ব্যাহত হচ্ছে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, কার্গো বিমানে পণ্য পরিবহন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না হওয়ায় এই খাতে দিনে অন্তত ৮০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। একই কারণে দেশের প্রায় চার হাজার ট্রাভেল এজেন্সি বন্ধ রয়েছে। এতে বিমানের টিকিট কাটা ব্যাহত হচ্ছে বলে কাঙ্ক্ষিত টিকিটও বিক্রি হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ছয় দিনে বন্দর-কাস্টমসের ক্ষতি ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামা করলেও কাস্টমস জটিলতায় প্রায় বন্ধ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা এবং তা নিরসনে সরকারের পদক্ষেপের ছয় দিনে প্রায় ১ হাজার ১০৮ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে বন্দর-কাস্টমস। মূলত ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় থমকে আছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।
সূত্র বলছে, প্রতিদিন বন্দরের আয় কমেছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। গত ছয় দিনে এই সংখ্যা প্রায় ২৫ কোটি টাকা হতে পারে। তাহলে ছয় দিনে বন্দর ও কাস্টমসের ক্ষতি প্রায় ১ হাজার ১০৮ কোটি টাকা।
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানায়, চলমান কারফিউ ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় শুল্কায়ন না হওয়া মোংলা সমুদ্রবন্দরে নিত্যপণ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য আটকা পড়েছে। এর পাশাপাশি ব্যাংক বন্ধ থাকায় ব্যবসার জন্য লেনদেন করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া অনলাইনে শুল্কায়ন সম্ভব না হওয়ায় পণ্য খালাসের পাশাপাশি প্রতিদিন ১৬ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি হওয়া গাড়ি খালাস করতে না পারায় গাড়ি আমদানিকারকদের প্রতিদিন ৪০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
মোংলা কাস্টম হাউসের কমিশনার কে এম মাহাবুবুর রহমান জানান, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রতি মাসে রাজস্ব আয় হয় ৩০০ কোটি টাকা। আর প্রতিদিন রাজস্ব আদায় হয় ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকা। তবে চলমান উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে গত রবি, সোম, মঙ্গল ও বুধবার এই তিন দিনে মোংলা কাস্টম হাউস ৬৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা আর ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর মিলে গড়ে দিনে অন্তত ১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় হওয়ার কথা। সেটি হচ্ছে না। শুল্ক বন্দরগুলো এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ইন্টারনেট না থাকলে ওই সফটওয়্যার চলতে পারে না। তাই শুল্কায়ন হচ্ছে না। সেবা খাতে মানুষের খরচ কমে গেছে, তাই ভ্যাট আদায়ও হচ্ছে না। ফলে রাজস্ব আয় হচ্ছে না। কর অফিস ও ব্যাংকিং সেবা বন্ধ থাকায় আয়করও আদায় হচ্ছে না।
পুঁজিবাজার: চলমান সহিংসতায় দেশের পুঁজিবাজারও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন কমে গেছে ৮৯ শতাংশ এবং বাজার মূলধন কমেছে ৬ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা। গত সপ্তাহের হিসাব ধরলে, ডিএসইতে দিনে গড়ে লেনদেন হয় ৫৫৫ কোটি টাকা। কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এ পরিমাণ লেনদেনও হয়নি। এ থেকে সরকার, বিনিয়োগকারী, ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিভিন্ন কর, ফি ও সেবামাশুল হিসেবে যে আয় হওয়ার কথা, সেটিও হয়নি।
ব্যাংক খাত: সারা দেশে সাধারণ ছুটিতে ব্যাংক বন্ধ থাকায় চেক ব্যবহার করে নগদ অর্থ তুলতে না পেরে দুর্ভোগে পড়েছেন অগণিত মানুষ। এ সময়ে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় অ্যাপভিত্তিক লেনদেন ও অর্থ স্থানান্তর সেবা থেকেও গ্রাহক বঞ্চিত হয়েছেন।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ১৮ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট এটিএম বুথে লেনদেনের সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক কম হয়েছে। এ সময়ে এক ব্যাংকের কার্ড অন্য ব্যাংকের বুথে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রতিদিন গড়ে ১২০ কোটি টাকা। স্বাভাবিক সময়ে এ লেনদেন হয় গড়ে ১৬৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্যাংকের নিজস্ব বুথে লেনদেনের পরিমাণ আন্তব্যাংক এটিএম বুথে লেনদেনের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। এ হিসাব তাৎক্ষণিক পাওয়া যায় না। মাস শেষে মোট হিসাবে তা যোগ হয়। মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক আরও জানান, যেসব ব্যাংকের সরাসরি রেমিট্যান্স সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে, সেসব ব্যাংক রেমিট্যান্স পেয়েছে। কিন্তু যেসব ব্যাংক নিজেদের সিস্টেমে চুক্তিবদ্ধ এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে রেমিট্যান্স পেয়ে থাকে, সেসব ব্যাংক রেমিট্যান্স পায়নি।
তৈরি পোশাক খাত: সহিংস আন্দোলনের সময় ইন্টারনেটসহ সবকিছু বন্ধ থাকায় দেশের প্রধান ও বৃহৎ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্প বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ক্রেতাপক্ষও এ দেশে কার্যাদেশ দেওয়া পোশাক প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। ইতোমধ্যে অনেক কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আবার কোনো কোনো কার্যাদেশের বিপরীতে পণ্য উৎপাদন সম্পন্ন হয়ে গেলেও তা শিপমেন্ট করা যায়নি। আবার অনেক কার্যাদেশের বিপরীতে কাঁচামাল আমদানি করা হলেও তা বন্দর থেকে খালাস করা সম্ভব হয়নি।
এতে পোশাকশিল্পে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলা সম্ভব নয়।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘কোটা আন্দোলনের নামে কিছু ব্যক্তি নাশকতা সৃষ্টি করেছে। এবারের নাশকতায় দেশব্যাপী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অর্থনীতি প্রায় অচল করে দেওয়া হয়েছিল। অর্থনীতি আবারও আমরা চালু করার চেষ্টা করছি। তবে এবারের সহিংসতায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কতদিনে পুষিয়ে নিতে পারব, তা অনিশ্চিত।’
ব্যবসায়ী এ নেতা আরও বলেন, ‘এবারের সহিংসতায় ঠিক কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার হিসাব বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন নিজস্বভাবে করছে। আমরা গবেষণা প্রতিষ্ঠানকেও আর্থিক ক্ষতির হিসাব করতে বলেছি। এ পর্যন্ত যে হিসাব পাচ্ছি তাতে এটা বলা যায়, এবারের দৈনিক আর্থিক ক্ষতি ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার কম হবে না।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় প্রায় দুই কোটি ছোট ব্যবসায়ী এবার আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান র্যাপিডের (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট) চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছে তার পরিমাণ দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন ডলার বা ৬০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ৭ হাজার ৮০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ছয় দিনে ক্ষতি দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। তিনি আরও বলেন, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সব খাতই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষত কাটিয়ে উঠে এসব খাত কবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, তা বলা কঠিন।
পরিবহন খাত: এদিকে গত কয়েক দিনের সহিংসতায় সড়ক, মহাসড়ক ও সেতু বিভাগের বিভিন্ন স্তরের প্রায় ৯০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সেতু বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মনজুর হোসেন গতকাল বুধবার জানান, নাশকতার আগুনে সেতু ভবন এতটাই পুড়ে গেছে, এখন সেখানে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। পুরো ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরানোর পর ভবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে। তবে সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু সেতু ভবনে ৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটিও প্রকল্প মিলিয়ে প্রায় ৪০০ কোটির টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে অপারেশনাল সিস্টেমে ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সব মিলিয়ে দুটি স্টেশনে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সহিংসতায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ৪৪টি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি বাস পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তিনটি বাস আংশিক পোড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ৩৮টি বাস ও বিভিন্ন ডিপোতে ভাঙচুর করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, সহিংসতায় বিদ্যুৎ খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।