নিজস্ব ডেস্ক প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ ভোটের পরদিন পরিবেশ ছিল অনেকটাই শান্ত। প্রায় নিশ্চিত জয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়া জো বাইডেন শুরু থেকেই ছিলেন সংযত। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিরচেনা রূপেই দেখা গেছে। তিনি একের পর এক টুইটে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।
ভোটের রাতের পর বুধবার বাইডেনকে দেখা গেছে আত্মপ্রত্যয়ী ভূমিকায়। তিনি স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে থাকার পরও জয়ের ঘোষণা দেননি। তবে জয়ী হতে যাচ্ছেন জানিয়ে অন্তর্বর্তী টিম গঠন করেছেন, যারা তার ক্ষমতা গ্রহণের নানা আনুষ্ঠানিকতা ও দায়িত্ব পালন করবেন। এজন্য একটি ওয়েবসাইটও চালু করেছে বাইডেন শিবির।
কয়েকটি রাজ্যে ভোট গণনা এখনও চলতে থাকায় জয়ের ঘোষণা না দিলেও বাইডেন বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় রাজ্যগুলোতে জয় পাচ্ছেন, এটা ‘স্পষ্ট’। তিনি বলেন, ‘আমি বিজয়ের ঘোষণা দিতে আসিনি। আমি বলতে এসেছি, আমরা বিশ্বাস করি, গণনা যখন শেষ হবে, তখন আমরাই নিজেদের বিজয়ী হিসেবে দেখতে পাব।’ ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে সঙ্গে নিয়ে দেওয়া এই ভাষণে বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তারা সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়ার পথে আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে কোনো প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পেলে পরের জানুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেন। তার আগে প্রস্তুতি হিসেবে একটি অন্তর্বর্তী দল প্রস্তুত করেন। বাইডেনের অন্তর্বর্তী ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিল্ড ব্যাক বেটার’। সেখানে বলা হয়েছে, মহামারি থেকে অর্থনৈতিক মন্দা, জলবায়ু পরিবর্তন থেকে জাতিগত বৈষম্য- মারাত্মক সংকটের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে যেতে হচ্ছে। আমাদের ট্রানজিশন টিম পুর্নোদ্যমে প্রস্তুতি নেবে, যাতে বাইডেন হ্যারিস প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই সক্রিয় থাকতে পারে।
তবে ট্রাম্পের দিনটি কেটেছে ভিন্নভাবে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশ কয়েকবার তিনি নির্বাচন ঘিরে মিথ্যা দাবি করেছেন। বুধবার সকাল থেকেই ট্রাম্প মিথ্যা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। হোয়াইট হাউসে তিনি বক্তব্য দিয়ে নিজের জয় দাবি করেন। এমনকি নির্বাচনে প্রতারণার অভিযোগও তোলেন। রণক্ষেত্র কিছু রাজ্যের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ না হলেও নিজের জয়ের ঘোষণা দেন তিনি। বুধবার মধ্যরাতে হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে দেওয়া ভাষণে নিজের জয়ের ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘সত্যি বলছি, আমরা এই নির্বাচনে জিতেছি।’ তবে কোনো ধরনের প্রমাণ উপস্থাপন ছাড়াই নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এরপর তিনি টুইটারে ঝড় তুলতে শুরু করেন। কিন্তু তিনি সারাদিন যা বলেন, সবকিছুই ভুল ছিল বলে দাবি করেছে সিএনএন। টুইটারে ট্রাম্প যেসব টুইট করেছেন, তার মধ্যে ছয়টিতে সতর্কতামূলক লেবেল জুড়ে দিয়েছিল টুইটার কর্তৃপক্ষ।
ট্রাম্প একটি টুইটে বলেছিলেন, পেনসিলভানিয়া, মিশিগানসহ অন্য কয়েকটি রাজ্যে পাঁচ লাখের বেশি ভোটে তিনি এগিয়ে রয়েছেন। তাকে ধরতে বিরোধীরা চেষ্টা করছে। বাস্তবে কিন্তু তখনও অনেক কাউন্টিতে ভোট গণনা চলছিল। মেইল-ইন ভোট বেশিরভাগ ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে গেছে। এসব ভোট নির্বাচনের পরদিন কিছু রাজ্যে গণনা করা হচ্ছিল। ট্রাম্প আরেক টুইটে বলেন, বিস্ময়কর ব্যালট এসে তার প্রাথমিক এগিয়ে থাকাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। কিন্তু আসলে এতে বিস্ময়ের কিছু ছিল না। অনেক ভোট গণনা তখনও বাকি ছিল।
ট্রাম্পের আরেক টুইটে বলা হয়, ‘আমরা বড় ব্যবধানে জিততে যাচ্ছি। তারা নির্বাচনে চুরি করার চেষ্টা করছে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আর ভোট দেওয়া যাবে না।’ ট্রাম্পের এ দাবিও পুরোপুরি মিথ্যা। কেউ কিছু চুরি করার চেষ্টা করেনি। নির্বাচনে প্রতারণার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভোট শেষ হওয়ার পর ভোট গ্রহণের কোনো ঘটনাও ঘটেনি।
বুধবার বিকেলে ট্রাম্প একটি প্রতারণামূলক টুইট করে পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনা নিজেদের বলে দাবি করেন। এ ছাড়া মিশিগানও নিজের বলে দাবি করার পাশাপাশি সেখানে গোপন ভোট জমা হওয়ার অভিযোগ তোলেন। অবশ্য মিশিগানে জিতেছেন বাইডেন। ট্রাম্পের দাবি করা অন্য রাজ্যগুলোতেও লড়াই চলছে। ট্রাম্প যে গোপনে ব্যাপক ব্যালট ফেলে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন, তাও ঠিক নয়।
এদিন বিকেল থেকেই ট্রাম্পের পুরো দল তার পক্ষে ভুয়া তথ্য ছড়াতে লেগে যায়। ট্রাম্পের ছেলে এরিক ট্রাম্প, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ম্যাকনানি, প্রচার ব্যবস্থাপক বিল স্টিফেনসহ অন্য মিত্ররা নির্বাচনে জয়ের ভুয়া দাবি করতে থাকেন। নির্বাচন ঘিরে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচারের এ তালিকায় আমেরিকান কনজারভেটিভ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ম্যাট স্ক্যালপস, ট্রাম্পের আইনজীবী রুডি গিলিয়ানির মতো লোকজনও ছিলেন।