সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরদিন রোগী শনাক্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : রোববার সকাল ৮টা থেকে আজ সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে এক দিনে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরদিন রোগী শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৩৬৪ জন।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ধরা পড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এটাই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চসংখ্যক রোগী শনাক্তের রেকর্ড। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১০৪ জনের। আজ বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১১৯ জনের। দেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ছিল এটাই। ওই সময় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ২৬৮ জন।

সেখান থেকে রোগী শনাক্ত ৩ হাজারের বেশি বেড়ে ৮ হাজার ৩৬৪ জনে পৌঁছেছে। এর আগে দেশে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ৭ এপ্রিলের আগের ২৪ ঘণ্টায়। সে সময় ৭ হাজার ৬২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

দেশে এ পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৭৭০। মোট মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ২৭৬ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৭ হাজার ৬৭৩ জন।

শেষ ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। ঢাকা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। রাজশাহী বিভাগে মারা গেছেন ১৯ জন। বাকিরা অন্য বিভাগের।

গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৩৫ হাজার ৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৮৬।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বোঝার একটি নির্দেশক হলো রোগী শনাক্তের হার। কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্ত ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। সেখানে কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে রোগী শনাক্ত ২০ শতাংশের বেশি হচ্ছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। পরে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। গত বছরের শেষ দিকে এসে সংক্রমণ কমতে থাকে।

দেশে এ বছরের মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। পরে তা আরও দুই দিন বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়। পরে তা আরও বাড়িয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু দেশে এখন সংক্রমণ পরিস্থিতি এপ্রিলের মতো ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে।

এবার করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয় গত ঈদুল ফিতরের পরপরই। ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে রোগী দ্রুত বাড়তে থাকে। পরে তা আশপাশের জেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা, মৃত্যু ও শনাক্তের হার কয়েক গুণ বেড়েছে।

বর্তমানে দেশের অধিকাংশ জেলা করোনার ভয়াবহতার ঝুঁকিতে রয়েছে। ১৪ থেকে ২০ জুন নমুনা পরীক্ষা ও রোগী শনাক্তের হার বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাপ্তাহিক রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪০টিই সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় ২২ জুন থেকে ঢাকাকে সারা দেশ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই প্রচেষ্টায় ঢাকার আশপাশের চারটি জেলাসহ মোট সাতটি জেলায় জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরনের চলাচল ও কার্যক্রম ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে এরপরও করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সোমবার সকাল থেকে সারা দেশে সব গণপরিবহন ও মার্কেট-শপিং মল বন্ধ করা হয়েছে। আর বৃহস্পতিবার শুরু হবে সর্বাত্মক লকডাউন, বন্ধ থাকবে সব সরকারি-বেসরকারি অফিসও।

Share