সাফজয়ী ফুটবলার রাজিয়ার মৃত্যুতে শোকাহত ক্রীড়াঙ্গন

বাংলাদেশের নারী ফুটবলাঙ্গনে পরিচিত মুখ ছিলেন রাজিয়া খাতুন। লাল-সবুজের জার্সিতে বয়সভিত্তিক দলে ছিলেন নিয়মিত সদস্য। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে বাংলাদেশের শিরোপাজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও ছিলেন তিনি। নারী ফুটবলের সেই পরিচিত মুখ রাজিয়া আর নেই। সন্তান প্রসবের পর আকস্মিক জটিলতায় মারা গেছেন এ ফুটবলার। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের নারী ফুটবল অঙ্গনে।

১৪ মার্চ বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের লক্ষ্মীনাথপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরিবারের বরাত দিয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদ মেহেদি গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ফুটবলার রাজিয়া সুলতানা দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। গতকাল (বুধবার) রাত ১০টার দিকে তিনি একটি পুত্রসন্তান প্রসব করেন। এরপরেই রাত তিনটায় হঠাৎ রাজিয়া স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তাকে কালিগঞ্জ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ভোর চারটার দিকে তার মৃত্যু হয়।’

রাজিয়া খাতুন একসময় বয়স ভিত্তিক দলের নিয়মিত মুখ ছিলেন। ২০১৯ সালে জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়েন। এরপর খেলেন ঘরোয়া লিগে। এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কাচারীপড়ার হয়ে গত দুই লিগ খেলেছিলেন রাজিয়া। তার বড় অর্জন ছিল ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। এ ছাড়া সে ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল রাউন্ডে খেলেছিলেন।

২০০১ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া রাজিয়া বাংলাদেশের নারী ফুটবলের উত্থানের শুরুর দিকের একজন। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ রিজিওনাল ( সেন্ট্রাল ও দক্ষিণ এশিয়া) চ্যাম্পিয়নশিপে ২০১৩ ও ১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেন তিনি৷ এরপর অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও খেলেছেন।

নারী ফুটবলার রাজিয়া খাতুনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।

শোকবার্তায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোকবার্তায় মন্ত্রী বলেন, ‘ফুটবলার রাজিয়া খাতুন নারী ফুটবলে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। তার অকাল মৃত্যু নারী ফুটবলে এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশের নারী ফুটবলের উন্নয়নে তার যে অনবদ্য অবদান, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

বাফুফের শোকবার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় দলের প্রাক্তন খেলোয়াড় মোসাঃ রাজিয়া খাতুন নিজ গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায় সন্তান প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অদ্য ১৪ মার্চ ২০২৪ তারিখ বৃহস্পতিবার ভোর ৪ ঘটিকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ২৩ বছর।

সেখানে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় দলের প্রাক্তন খেলোয়াড় মোসাঃ রাজিয়া খাতুন-এর মৃত্যুতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সম্মানিত সভাপতি কাজী মো. সালাহউদ্দীন, সিনিয়র সহসভাপতি, সহসভাপতিগণ, কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্য, সাধারণ সম্পাদকসহ বাফুফের সকল স্ট্যান্ডিং কমিটি এবং বাফুফের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্তরিক শোক প্রকাশ এবং তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ভুটানে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৮ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন রাজিয়া খাতুন। চ্যাম্পিয়ন হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পেয়েছিলেন সংবর্ধনা ও ১০ লাখ টাকা।

এ ছাড়া ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল রাউন্ডে খেলেছিলেন রাজিয়া। ২০১৯ সালে রাজিয়া বাফুফের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়েছেন বছর চারেক আগে। এরপর ঘরোয়া লিগ খেলেছেন। তার মৃত্যুতে দেশের ফুটবলে নেমে এসেছে গভীর শোক।

Share