খেলা ডেস্ক : মারাকানায় ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা ম্যাচ শুরুর আগে পুলিশের হাতে মার খেয়েছেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা। সেই রাতেই পেরুতেও ঘটেছে আরও মারাত্মক ঘটনা। ভেনেজুয়েলা অভিযোগ করেছে পেরু–ভেনেজুয়েলা ম্যাচের পর পেরুভিয়ান পুলিশ পিটিয়েছে তাদের ফুটবলারদের। শুধু তা–ই নয়, ভেনেজুয়েলান ফুটবল দলের বিমান আটকে রাখার অভিযোগ করে বলেছে খেলোয়াড়দের ‘অপহরণ’ করেছিল পেরুভিয়ানরা।
লিমায় মঙ্গলবার রাতে ২০২৬ বিশ্বকাপ দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের বাছাইয়ে পেরুর সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে ভেনেজুয়েলা। গতকাল ভেনেজুয়েলা সরকার পেরুর বিরুদ্ধে জাতীয় দলকে ‘অপহরণ’–এর অভিযোগ তুলে বলেছে, খেলোয়াড়দের ফিরিয়ে আনতে বহনকারী উড়োজাহাজে জ্বালানি নিতে দেওয়া হয়নি।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলার খেলোয়াড়েরা অভিযোগ করেছেন ম্যাচ শেষে দর্শকদের অভিবাদনের জবাব দেওয়ার সময় পেরুর পুলিশ তাঁদের পিটিয়েছে। পেরু থেকে ভেনেজুয়েলার খেলোয়াড়দের বহনকারী উড়োজাহাজ উড্ডয়নে দেরি করেছে।
এরপর ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান হিল বলেন, ‘খেলোয়াড়দের বহনকারী উড়োজাহাজে জ্বালানি নিতে বাধা দিয়ে ভেনেজুয়েলানদের বিরুদ্ধে আরেকটি বিতর্কিত কাজ করল পেরু।’ হিল যোগ করেন, ‘আমাদের দলের বিরুদ্ধে এটা প্রতিশোধমূলক অপহরণের মতোই, যারা ম্যাচে অসাধারণ খেলেছে।’
এএফপি জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়ের প্রায় চার ঘণ্টা পর ভেনেজুয়েলার খেলোয়াড়দের বহনকারী রাতাকা এয়ারলাইনের উড়োজাহাজ উড্ডয়ন করে। লিমায় হোর্হে চাভেজ বিমানবন্দরে এ নিয়ে দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান উড়োজাহাজের উড্ডয়নে দেরি হওয়ার ব্যাপারে বলেছে, ‘জ্বালানি সরবরাহ সংক্রান্ত পুরোপুরি প্রশাসনিক কারণে দেরি’ হয়েছে। ইভান হিল দাবি করেছেন, পেরু সরকার জ্বালানি সরবরাহের নির্দেশ দেওয়ার পর ভেনেজুয়েলা দল ‘কারাকাসে নিরাপদে ফেরার উদ্যোগ’ নেয়।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেছেন, ‘পেরুর বর্ণবাদী অভিজাতেরা আমাদের চমৎকার দলটির প্রতি (জেনোফোবিয়া) বিদ্বেষমূলক মনোভাব পোষণ করছে। অন্য দেশের নাগরিকের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার ভেনেজুয়েলা।’
দক্ষিণ আমেরিকান বাছাইয়ে গত মঙ্গলবার রাতটি ছিল বিতর্কিত ও সহিংসতাপূর্ণ। মারাকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচে গ্যালারিতে পুলিশ দাঙ্গা থামাতে লাঠিপেটা করেছে। আর্জেন্টিনা দল নিয়ে একপর্যায়ে মাঠ ছেড়ে চলেও গিয়েছিলেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। পেরুর বিপক্ষে ম্যাচেও পেরুর পুলিশের পিটুনি খাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ভেনেজুয়েলার খেলোয়াড়েরা।
ভেনেজুয়েলার সেন্টারব্যাক নাহুয়েল ফেরারিসি এর আগে তাঁর ডান হাতে ব্যান্ডেজ দেখিয়ে দাবি করেন পেরুর পুলিশ ‘আমাকে মেরেছে।’ তাঁর ভাষায়, ‘এমন কিছু কখনোই ঘটা উচিত নয়। ম্যাচ শেষে আমরা আমাদের ভেনেজুয়েলান সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে গিয়েছিলাম।’
ফেরারেসি আরও জানিয়েছেন, ভেনেজুয়েলার আরেকজন খেলোয়াড় তাঁর জার্সি সমর্থকদের প্রতি ছুড়ে মারার সময় পেরুর পুলিশ বাধা দিয়েছে। ‘বাকিরাও (খেলোয়াড়) রেগেছে। কী ঘটেছিল, ঠিক বলতে পারব না, তবে পুলিশ ব্যাটন (লাঠি) হাতে তুলে নিয়েছিল। তারা আমাকে দুবার মেরেছে…যদিও বড় কোনো চোট পাইনি’ দাবি করেন ফেরারেসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, পেরুর পুলিশ ব্যাটন করে আস্ফালন করেছে ভেনেজুয়েলার খেলোয়াড়দের প্রতি। ভেনেজুয়েলা ফুটবল ফেডারেশন তাদের দল এবং সমর্থকদের সঙ্গে ‘বৈষম্য ও বিদ্বেষমূলক’ আচরণের অভিযোগ করেছে। পাঁচবার বিশ্বকাপে খেলা এবং কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা পেরু ভেনেজুয়েলার সঙ্গে ড্রয়ের পর দক্ষিণ আমেরিকান পয়েন্ট তালিকার তলানিতে নেমে গেছে। ৬ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ২ পয়েন্ট। কখনো বিশ্বকাপে খেলতে না পারা ভেনেজুয়েলার অবস্থান বেশ সংহত। ৬ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার চারে ভেনেজুয়েলা।
এএফপি জানিয়েছে, এই ম্যাচ শুরুর আগে পেরুর পুলিশ দর্শকদের পরিচয়পত্র দেখে নিশ্চিত হয়ে স্টেডিয়ামে ঢুকতে দিয়েছে, যেটা অপ্রত্যাশিত। ভেনেজুয়েলান নাগরিকদের খুঁজে বের করতেই এই পদক্ষেপ বলে অভিযোগও উঠেছে।
পেরু সরকার নিজেদের দেশ থেকে অন্য দেশের নাগরিকদের বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক সপ্তাহ পর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে এমন ঘটনা ঘটল। ভেনেজুয়েলায় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশটির প্রায় ১৫ লাখ নাগরিক পেরুতে অভিবাসী হিসেবে বসবাস করেন বলে জানিয়েছে এএফপি।