নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : সাবেক মেজর সিনহা মোহাম্মদ খানের মৃত্যু নিশ্চিত জেনে আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন ওসি প্রদীপ কুমার দাস। এছাড়াও মৃত্যু নিশ্চিত করতে সিনহার গলায় পা দিয়ে চাপ দেন ওসি প্রদীপ। ইন্সপেক্টর লিয়াকত ও এসআই নন্দদুলালের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
জবানবন্দিতে লিয়াকত জানান, ওসি প্রদীপ তাকে আগে থেকেই এখানে ডাকাত আছে বলে জানিয়েছিলেন। তারা ভিডিও শ্যুট করছে বলে জানান তিনি। এ সময় তাদের দেখা মাত্র হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন ওসি প্রদীপ।
লিয়াকত আরো জানান, ঘটনার দিন গাড়ি থামালেই সিনহা বের হতেই দূর থেকে ভয়ে বা যেকোনো কারণেই ৪ রাউন্ড গুলি ছোড়েন তিনি। তবে সিনহার হাতে কিছু ছিলো কিনা তা দেখেননি তিনি। পরে ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে এসেই জানতে চান মেজর সিনহা বেঁচে আছেন কিনা। লিয়াকত জানান, মেজর সিনহা মারা যাননি। এখনো আহত অবস্থায় আছেন। তখন সিনহার বুকের বাম পাশে লাথি মারেন এবং গলায় পা দিয়ে ধরেন ওসি প্রদীপ। এরপর সিনহা কিছুটা স্থবির হলেই ওসি প্রদীপ আনন্দ প্রকাশ করেন।
এদিকে জবানবন্দিতে একই কথা বলেন এসআই নন্দদুলাল। তিনি জানান, সিনহা গাড়ি থেকে নামতেই প্রথমে লিয়াকত দুই রাউন্ড গুলি করেন। তিনি আবার এগোলে আবারো গুলি ছোড়েন।
তিনি আরো জানান, তখন তারা সার্চ করে কোনো মাদকদ্রব্য পাননি, তবে একটি অস্ত্র ও কিছু কাগজপত্র পেয়েছেন। সিনহা রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে তা জানানো হয় ওসি প্রদীপকে। এ সময় প্রদীপ বলেন, আমি না আসা পর্যন্ত তুমি (লিয়াকত) ওখানে থাকো, আমি আসছি। এর কিছু সময় পরেই ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে আসেন। প্রদীপ ঘটনাস্থলে এসে সিনহাকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করতে থাকেন এবং সিফাতকে নির্যাতন করেন। এছাড়া ওসি প্রদীপ সিনহার বুকের বাম পাশে লাত্থি মারেন এবং গলায় পা দিয়ে ধরেন। এসময়টুকুর মধ্যেই লিয়াকতের কাছে বার বার মেজর সিনহা পানি চেয়েছিলেন।
নন্দদুলাল আরো বলেন, ওসি প্রদীপ আনন্দের সঙ্গে জানিয়েছিলেন শেষ পর্যন্ত মেরে ফেলতে পেরেছি। এছাড়া ওসি প্রদীপের কথামতই এজাহারের সব কাগজ করা হয়েছিল।তবে ওসি প্রদীপ কেন মেজর সিনহাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো অধরা।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পরিদর্শক লিয়াকতের গুলিতেই নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় হত্যা ও মাদক আইনে এবং রামু থানায় মাদক আইনে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করে। এ মামলায় নিহত মেজর সিনহার সঙ্গে থাকা শাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা রানী দেবনাথকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
এরপর ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওসি প্রদীপ কুমার দাস, এসআই লিয়াকতসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ৬ আগস্ট বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতসহ ৭ আসামি কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এ সব মামলারই তদন্তভার এখন র্যাবের হাতে।