নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : আজ বাংলা গানের জগতের জীবন্ত কিংবদন্তি সাবিনা ইয়াসমিনের জন্মদিন। ১৯৫৪ সালের আজকের দিনে তিনি সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবার নাম লুৎফর রহমান ও মা বেগম মৌলুদা খাতুন। সাবিনা ইয়াসমিনরা পাঁচ বোন। চার বোনই গানের জগতের মানুষ- ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিন এবং সাবিনা ইয়াসমিন।অনিন্দ্য কণ্ঠ আর অনবদ্য গায়কিতে পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে যাচ্ছেন তিনি। এ পর্যন্ত ১৪ বার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার, সম্মাননা ও অগণিত শ্রোতার ভালোবাসা।
দাম্পত্য জীবনে সাবিনা ইয়াসমিন এক কন্যা ফাইরুজ ইয়াসমিন ও এক পুত্র শ্রাবণের জননী।
প্রসঙ্গত, বড় বোন প্রয়াত ফরিদা ইয়াসমিন যখন গান শিখতেন দুর্গাপ্রসাদ রায়ের কাছে তখন ছোট্ট সাবিনাও উপস্থিত থাকতেন। পরবর্তীতে ওস্তাদ পি সি গোমেজের কাছে একটানা ১৩ বছর তালিম নিয়েছেন। মাত্র ৭ বছর বয়সে স্টেজ প্রোগ্রামে অংশ নেন। ছোটদের সংগঠন খেলাঘরের সদস্য হিসেবে রেডিও ও টেলিভিশনে গান গান নিয়মিত।
প্রয়াত বরেণ্য সুরকার-সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষের সংগীত পরিচালনায় এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমাতে ১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান করেন। তবে ১৯৬৭ সালে আমজাদ হোসেন ও নূরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমাতে আলতাফ মাহমুদের সংগীত পরিচালনায় ‘মধু জোছনা দীপালি’ গানটি গাওয়ার মধ্য দিয়ে প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
বরেণ্য এই সংগীত শিল্পী ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পদকসহ সর্বোচ্চ ১৩ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে প্রমোদকার (খান আতাউর রহমানের ছদ্ম নাম) পরিচালিত ‘সুজন সখী’ সিনেমাতে গান গাওয়ার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। দীর্ঘ সংগীত জীবনে প্রায় ১৬ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন বাংলা গানের এই নক্ষত্র!
শুক্রবার নন্দিত এই কণ্ঠশিল্পীর বিশেষ এই দিনের পরিকল্পনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তার সঙ্গে-
জন্মদিনে নয়াবার্তার পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা…
শুভেচ্ছার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। দোয়া করবেন, আপনাদের ভালোবাসায় যেন সুস্থ থাকি, অনেকদিন গাইতে পারি।
আজ সারাদিন কীভাবে কাটাবেন তা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করেছেন কি?
অন্যসব দিনের মতোই আজকের দিনটি কাটাতে চাই। এই দুঃসময়ে জন্মদিন নিয়ে কোনো আয়োজনের কথা তো ভাবতেও পারি না। প্রতি বছর ভক্ত-শ্রোতা আর প্রিয়জনদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হই। এবারও হয়তো তেমন কিছুই হবে। আমার কাছে মানুষের ভালোবাসা জন্মদিনের বড় উপহার।
গানে গানে কেটে গেল পাঁচ দশক। ফেলে আসা সময় কি স্বপ্নের মতো মনে হয়?
স্বপ্নের মতোই মনে হয় সবকিছু। যে সময় পেছনে ফেলে এসেছি, তা ফিরে পাওয়ার উপায় নেই। এজন্য মাঝে মাঝে স্মৃতি রোমন্থনে ডুবে যাই। মনের পর্দায় ভেসে উঠে সেই দিনগুলোর ছবি, যখন বড় বোনদের দেখাদেখি গান গাওয়া শুরু করেছিলাম। শৈশবে প্রথম মঞ্চে ওঠা, বেতার-টিভিতে গান গাওয়া, এরপর প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে কত যে গান গেয়েছি, তার সঠিক হিসাব-নিকাশ নিজেরও জানা নেই। এ সবকিছুর মাঝে মা হওয়া, ক্যান্সার জয় করে গানের ভুবনে ফিরে আসা, দুস্থ শিশুদের পাশে দাঁড়ানো, শিল্পীদের মেধাস্বত্ব নিয়ে আন্দোলন আর কত যে ঘটনা মনের পর্দায় সিনেমার মতো ভেসে ওঠে, তা বলে শেষ করা যাবে না।
গত পাঁচ দশকে ১৬ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন। সেরা শিল্পী হিসেবে ১৪টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ পেয়েছেন নানা সম্মাননা। এরপরও শিল্পী জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি আছে বলে মনে হয়?
মায়ের অনুপ্রেরণা আর বোনদের গাইতে দেখে ছোটবেলায় গানে তালিম নেওয়া শুরু করেছিলাম। এরপর ভালোবাসা থেকে গান করেছি, এখনও গাই। এজন্য প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ আমাকে কখনও ভাবায় না। এটাও ঠিক যে শিল্পী জীবনে যা কিছু অর্জন, সব গানকে ঘিরে। এর সবকিছু সম্ভব হয়েছে অগণিত মানুষের ভালোবাসা পাওয়ায়। শ্রোতাদের ভালোবাসাই নিরলসভাবে গান গেয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এই ভালোবাসাই শিল্পী জীবনের সবচেয়ে দামি পুরস্কার বলে মনে করি।
শিল্পীদের মেধাস্বত্ব আদায়ে কাজ শুরু করেছিলেন। এখনও কি তা চলছে?
সাংগঠনিক বা একক- যেভাবেই হোক, এটি থেমে থাকবে না। কারণ শিল্পী ও সংগীত স্রষ্টারা বঞ্চনার শিকার হলে আওয়াজ উঠবেই। বঞ্চিত মানুষ সবসময় চুপ থাকবে- এটি ভাবার কোনো কারণ নেই।
মানবিক দাবি পূরণের জন্যই কি গানের পাশাপাশি অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন?
সবকিছুর পর এটিই সত্যি যে আমরা মানুষ। তাই মানুষ হিসেবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই স্বাভাবিক। কিছু কাজ আছে, যা মানবিক বোধ থেকে করতে হয়। ‘ডিসট্রেসড চিলড্রেন অ্যান্ড ইনফ্যান্টস’-এর পেট্রন হিসেবে দুস্থ শিশুদের সাহায্যার্থে কাজ করেছি। আগামীতেও অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করব।