নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে জাতীয় সম্মেলনের প্রায় এক বছর পর পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি পেল আওয়ামী যুবলীগ। শনিবার আওয়ামী লীগের অন্যতম এই সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতাদের পাশাপাশি সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিটি পূর্ণাঙ্গকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতারা। একই সঙ্গে বিতর্কিত ও নানা অপকর্মে যুক্তদের বাদ দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি তাদের।
শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের কাছে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা তুলে দেন।
এর আগে সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতা প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিসহ তার সঙ্গে দেখা করলে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন ওবায়দুল কাদের। ২০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে কয়েকটি পদ এখনও শূন্য রাখা হয়েছে।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন থেকে তিন বছরের জন্য শেখ ফজলে শামস পরশকে সংগঠনের চেয়ারম্যান ও মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। এরপর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি পূর্ণাঙ্গকরণের কাজ শুরু হলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবসহ নানা কারণে তা শেষ করা সম্ভব হয়নি।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে সম্মেলন হওয়া দলের সব সহযোগী সংগঠন এবং সাংগঠনিক জেলার প্রস্তাবিত কমিটিগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে আটটি বিভাগীয় টিম গঠন করে দেওয়া হয়। গত অক্টোবরে যাচাই-বাছাই শেষে দলের অন্য চার সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে অলিখিতভাবে দলের ভাতৃপ্রতীম সংগঠন হিসেবে বিবেচিত মহিলা শ্রমিক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছিল। শনিবার যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে সম্মেলন হওয়া সবগুলো সহযোগী-ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের কমিটি ঘোষণা করার কাজ শেষ হলো। কয়েকদিনের মধ্যে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দুই সাংগঠনিক জেলা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কথা রয়েছে।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় মানুষের মধ্যে সংগঠন বিষয়ে আগে থেকে চলে আসা নেতিবাচক ধারণা আরও প্রকট রূপ পায়। সে সময় ক্যাসিনোকাণ্ডসহ টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মে জড়িত হওয়ার দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এবং যুবলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমসহ অনেকেই। আবার দুর্নীতি, কমিটি বাণিজ্য ও মাদকব্যবসাসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে বিপুল অর্থসম্পদ অর্জনের দায়ে সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন নেতার ব্যাংক হিসাব তলব অথবা জব্দ এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই ওমর ফারুক চৌধুরীকে সংগঠনের চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওমর ফারুক চৌধুরীর ‘ক্যাসিয়ার’ হিসেবে পরিচিত যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান আনিসসহ অনেক নেতাই সংগঠন থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি আত্মগোপনে রয়েছেন এখনও।
এমন প্রেক্ষাপটেই গত বছরের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসে নতুন নেতৃত্বের হাতে সংগঠন পরিচালনার ভার তুলে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া যুবলীগে নতুন ও তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে সংগঠনের নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে ৫৫ বছরের বাধ্যবাধকতাও বেধে দিয়েছিলেন সংগঠনের সাংগঠনিক নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সে সময় বিতর্কিত অনেক নেতাকেই কংগ্রেস প্রস্তুতি কার্যক্রম থেকেও নিষ্ক্রিয় রাখা হয়েছিল।
যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ২৭ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে ২২ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচটি পদ ফাঁকা রয়েছে। এই ২২ জনের মধ্যে রয়েছেন অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ, মঞ্জুর আলম শাহীন, আবু আহমেদ নাসিম পাভেল, শেখ সোহেল উদ্দিন, ডা. খালেদ শওকত আলী, শেখ ফজলে ফাহিম, মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন প্রমুখ।
কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন পাঁচ জন। তারা হচ্ছেন বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা, সুব্রত পাল, বদিউল আলম, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম ও মো. রফিকুল আলম জোয়ার্দার।
সংগঠনের ৯ সাংগঠনিক সম্পাদক হচ্ছেন- কাজী মো. মাজহারুল ইসলাম, ডা. হেলাল উদ্দিন, সাইফুর রহমান সোহাগ, জহির উদ্দিন খসরু,সোহেল পারভেজ, আবু মুনির মো. শহিদুল হক রাসেল, মশিউর রহমান চপল, অ্যাডভোকেট শামীম আল সাইফুল সোহাগ ও অধ্যাপক ড. রেজাউল কবির।
এছাড়া ২১ জনকে বিভিন্ন বিভাগীয় সম্পাদক ও ২১ জনকে এসব বিভাগের উপ-সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে। ৪১ জনকে দেওয়া হয়েছে সহ-সম্পাদকের পদ এবং ৭৫ জন রয়েছেন নির্বাহী সদস্য।